সা’আদুল ইসলাম-এর দুটি দীর্ঘ কবিতা

 


সা’আদুল ইসলাম-এর দুটি দীর্ঘ কবিতা

(এক)

তুমি নামহীনা, হে সভ্যতা!

 

এত বীর্য! দেড় শো গ্রাম ভাসিয়ে দেবে! বলেন কী! 

 মন্দিরে দেবতার পদমূলে আট বছরের আসিফা,   

 হাথরসের ধর্ষণপোড়া মেয়ে,

 বিলকিসের পাথরে আছড়ানো শিশুকন্যা, 

তুমি তো তখন আছাড়চ্যাপ্টা ছিরিকিটি, 

কী করে দেখবে বলো! এতসব শব? 

অতঃপর মা বিলকিস, নধর প্রিয়াঙ্কা ও

তিলোত্তমার মৌমিতা, ছিঁড়ে খায় হায়েনার বীভৎস হাসি, 

উদ্ধত শিশ্ন নত হবে বলে খাঁজ খোঁজে,

ভাঁজ খোঁজে, সুররিয়ালিস্টিক ভাঁজ!

 

অতঃপর মাথার ফেট্টি খুলে ফেলে,

প্যান্টের বোতাম ঠিক করে,

জামার কলার মসৃণ করে রিয়ালিস্টিক হয়ে যায় সভ্যতা! 

 

বিচার তখন সংস্কারী দেখে,

ধর্ষকের পক্ষে মিছিলের চরিত্র খুঁড়ে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেয়,

সভ্যতা অট্টহাসি গড়িয়ে পড়ে জোছনার বালুচরে!

 

নারী তো নয়; মাংস পৃথুল, রক্তের যোনিপথ! 

ক্ষমা করো, মা! ক্ষমা করো বোন! অগ্নিরথ,

থেমে যেয়ো না আগামীর দুরন্ত প্রবাহ তুমি

গুজবের স্রোতপথ প্রতিবাদের প্রহরে আভূমি

রক্তে আখর কাটে!

 

প্রবাহিত হও, প্রধাবিত হও - থেমো না বিচার তল্লাটে

পুরুষের নও তুমি শুধু, নারীরও একান্ত তুমি

এইখানে পুনর্বার নত হও চিরায়ত সমভূমি

মানুষের তুমি!

 ***


(দুই)

মুঠো

 

তখন ছিল আকাশভরা গ্রহতারা 

তখন ছিল তাহাজ্জুদের ভোর

তোমরা তখন মাকে ঘিরে 

তোমরা তখন আহ্লাদে বিভোর 

তখন ছিল বালিশ খামচে ধরে 

মায়ের মুঠো হাত 

আব্বাও তখন বারান্দাতে 

মুঠোয় ধরে হাত?

 

মুঠোয় ধরে হাত!

 

তারাগুলো জ্বলছিল সব 

ঝিকিমিকির আলো 

তখনো ঝরেনি ভোরের আজান 

তখনো ফোটেনি আলো 

আকাশ তখনো মেলেনি ডানা 

ওই দিনটির মত 

শুভ সেদিনের মত পাখিরা দেয়নি দোল 

আমিই তখন নামিয়ে দিলাম ভোর 

ঠিক তখনই বিপুল বায়ুবেগে  

ভরিয়ে দিলাম মায়ের ঘর 

শ্রান্ত মায়ের মুঠ খুলে গেল বিপুল উদ্ভাসে

মায়ের মুঠো থাকতে এলো আমার মুঠোবাসে

 

মুঠোয় ধরা জীবনখানি নিয়ে চলেছি দ্যাখো

হাটে মাঠে বাটে কোথা না কোথায়? জীবনখানি মাখো

 

ধবল মেঘের পাহাড় ছুঁয়েছি

মরীচিকার আলো ধরেছি

সিংহের থাবার থেকে গলে উঠেছি 

শীতল বরফের পাহাড়চুড়োয়

মুঠোয় ধরে রেখেছি প্রাণ

লুকিয়ে রেখেছি করোনার থেকে

দেশদ্রোহীর ঝুট তকমার থেকে

ফিলিস্তিনের আল আকসার ব্যথার থেকে

কাশ্মীরকলির কান্নারঙা চোখের থেকে

তখনো দাঁড়িয়ে থাকা বানভাসি ল্যাম্পপোস্টে লটকানো

অসমভূমির কুড়ি লক্ষের লিস্টির থেকে

মুঠোয় ধরে রাখব বলে জীবনটাকে

….

আলুল ছেড়ে দেব কি মুঠোটাকে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে? 

 

হা হতোস্মি! লাজ দিয়ো না মুঠো আমার!

আশিরনখ ঝড়সিঙ্গির থাবার মুখে 

দাঁড়িয়ে থাকব কথা দিলাম

রেখেই যাব মৃত্যুবিজয় প্রাণ

রেখেই যাব কীর্তিডানার ঘ্রাণ

বিশ্বজনের আকুল ধারাস্নান

ঠেলে কলমিলতার ঘ্রাণ

ভাসিয়ে নেব সুরের সাম্পান।

 

জান্নাতবাগের ওপার থেকে মা বললেন, 

ল্যাদানো কাব্যি আর মানায় না বাছাধন!

নামো কলক্কল, নোঙর ফেলো 

মানুষের জীবনের ঘাটে, বেছে নাও ময়দান।

ইয়া বুনাইয়া, বারাকাল্লাহু লাকা

বৎস্য আমার! ছেড়ো না মানুষের ময়দান, 

যদিও হয়ে পড় মরুভূর মাঝে একা!

 

মরুতরুণী থলকমলী সেই নার্গিসের সুর্মাচোখে

ঠিক তখনই আমি আরেক উদ্ভাস দেখতে পেলাম।

***

 

Post a Comment

Previous Post Next Post