একটি মিথ্যা প্রেমের গল্প

 একটি মিথ্যা প্রেমের গল্প

মুহাম্মদ ফারহান ইসলাম নীল

 

মেয়েটা আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে আমি মানুষ না , প্রাণ জুসের বোতল অথবা ক্যাটবেরী চকোলেট ৷ আমাকে খপ করে ধরে খেয়ে ফেলবে ৷ মেয়েটির তাকানো দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করলাম ৷ কিছুক্ষন পর মাথা তুলে দেখি মেয়েটা আগের মতোই তাকিয়ে আছে ৷

কি মেয়ে রে বাবা ! আমার জন্মে এমন মেয়ে আগে কখনো দেখিনি ৷ একটা অচেনা মেয়ে কিভাবে একটা অচেনা ছেলেকে এভাবে দেখে ৷ দেশে কি আইন কানুন নেই নাকি ? সমান অধিকার পেয়েছে বলেই আমার মতো একটা সহজ সরল ছেলেকে হাতের ডিমের মতো কিউট চোখ দিয়ে এভাবে তাকিয়ে দেখবে ?

আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল ৷ অবশেষে আমি মুখ খুললাম এবং মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললাম , এই যে মিস সুইটি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ? আপনার বাসায় কি বাবা , ভাইয়া নেই ?

আমার কথা শুনে মেয়েটি ভূবন মাতানো হাসি দিয়ে বললো , হুম আছে তবে আপনার মতো কিউট ছেলে ফ্রেন্ড নেই ৷ তাই ভাবছি আপনি ফ্রেন্ড বানাবো ৷

মেয়েটার এমন কথা শুনে আমি পুরো মদন সেজে গেলাম ৷ চেনা নেই জানা নেই আমাকে ফ্রেন্ড বানাবে ৷ কই থেকে আসে এসব পাগলী মেয়ে কে জানে ৷ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে আমাদের এলাকায় আজই প্রথম দেখলাম ৷

আপনার মাথায় সমস্যা আছে নাকি ? একটা অচেনা ছেলেকে ফ্রেন্ড বানাতে চাইছেন ?

কে বলেছে আমি আপনাকে চিনি না ? আপনি তো আমার খুব পরিচিত ৷

মানে কি ?

মানে হলো আমি আপনাকে চিনি ৷ বাট আপনি আমাকে চেনেন না ৷

নির্ঘাত মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে ৷ নয়তো পাবনার পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে ৷ আমি তাকে চিনি না কিন্তু সে আমাকে চেনে এটা কেমন কথা ?

আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন বলুন তো ?

আবার মেয়েটি যা বললো তা শুনে আমার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হলো ৷

এই ধরুন আপনার নাম সিয়াম ইসলাম সৈকত ৷ আপনার বাবার নাম আতিকুল ইসলাম ৷ আপনার মায়ের নাম সাজেদা বেগম ৷ আপনার ছোট বোনের নাম আফিফা বিনতে অন্তরা ৷ আপনি হাজী মাইদুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়েন ৷ আপনার প্রিয় রং লাল এবং সবুজ ৷ আপনি গল্প পড়তে ভালোবাসেন ৷ আপনার প্রিয় লেখক কাজী নজরুল ইসলাম , সালমান রুশদী , ম্যাক্সিম গোর্কি , মার্ক টুয়েন , বেগম রোকেয়া , হুমায়ুন আহমেদ , সৈয়দ মুজতবা আলী , পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ৷ আপনার কলেজ ফ্রেন্ডরা আপনাকে সিমু বলে ডাকে ৷ কারণ আপনার এক স্কুল ফ্রেন্ড সুমাইয়া সিমু আপনাকে লাভ করতো ৷ সেই সুবাদে আপনার ফ্রেন্ডরা আপনাকে পঁচানোর জন্য সিমু নামে ডাকতো ৷ আপনার ছোট বোনের সাথে দিনে সাত, আটবার ঝগড়া হয় ৷ আপনার মা আপনাকে খুব ভালোবাসে ৷ আপনার প্রিয় খাবার পায়েস ৷ রোজ রাতে ছাদে বসে চাঁদ দেখার বদঅভ্যাস আছে আপনার ৷

একদমে মেয়েটি এই কথা গুলো বললো ৷ তারপর আবার বলতে শুরু করবে আমি তখন মেয়েটিকে থামিয়ে দিলাম ৷

এই যে মিস সুইটি আপনি কে বলুন তো ? আর আমার সম্পর্কে এতো কিছু জানলেন কিভাবে ?

শোনেন আমার নাম সুইটি নয় সাদিয়া ৷ আপনাকে চিনি বলেই বললাম ৷ বাট আপনি আমাকে চিনবেন না ৷

পরিচয় দিন তাহলে চিনবো ৷

আপাততো পরিচয় দিতে চাচ্ছি না ৷ তবে ফ্রেন্ডশীপ করলে পরিচয় দিবো ৷

আমার মাথার রক্ত উঠে গেল ৷ আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম কে এই সাদিয়া ৷ আর কিভাবে আমার সম্পর্কে এতো কিছু জানলো ?

কি হলো মিস্টার সিয়াম ফ্রেন্ডশীপ করবেন ?

পরিচয় না দিলে ফ্রেন্ডশীপ করবো না ৷

আচ্ছা না করবেন নাই ৷ এখন বলুন আন্টি কেমন আছে ? কতদিন হলো আন্টির সাথে দেখা হয়নি কথাও হয়নি ৷

ওমা এই মেয়ে বলে কি ? আমার মাকে আন্টি বানিয়ে ফেললো ? এতো দেখছি আমাকে মহা বিপবে ফেলবে ৷

আচ্ছা আপনারা তো এই বাসায় থাকেন ৷ আন্টি এখন বাসায় আছে তাই না ?

আন্টি মানে ? আপনি আমার মাকে আন্টি বলছেন কেন ? আপনার সাহস তো কম নয় ৷

ফ্রেন্ডের মাকে আন্টি বলতে আবার সাহস লাগে নাকি ? ফ্রেন্ডের মাকে সবাই আন্টি বলে ডাকতে পারে ৷ আপনি আপনার কাজ করুন আমি আন্টির সাথে দেখা করে আসি ৷

সাদিয়া সিয়ামের পাশ কাটিয়ে হনহন করে হেটে চৌধুরী সাহেবের বাসায় ঢুকে পড়ে ৷

সিয়াম মনে মনে ভাবে কে এই সাদিয়া ? আর আমার সম্পর্কে এতোকিছু জানলো কিভাবে ? আর কেনই বা আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চাচ্ছে ?

হঠাৎ সিয়ামের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ সিয়াম পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে রুমানা কল করেছে ৷ রুমানা সিয়ামের গার্ল ফ্রেন্ড ৷ ওদের রিলেশনের তিনমাস চলছে ৷ এরই মধ্যেই অনেক কিছু ৷

সব কথা বলতে হয় না ৷ তাই সিয়ামও বলতে চায় না ৷

সিয়াম কল রিসিভ করে ফোনটা কানের কাছে নিতেই শুনতে পায় রুমানার মায়াবী কন্ঠে একটি অশ্লীল শব্দ ৷ অবশ্যি মাঝে মাঝেই এমন অশ্লীল শব্দ রুমানার মুখ থেকে শোনে সিয়াম ৷ রুমানাকে অনেক ভালোবাসে বলেই শব্দ গুলোকে হজম করে সিয়াম ৷ হজম করার পেছনে একটা কারণও আছে ৷ সিয়াম আবদার করলে রুমানা তা পূরণ করে ৷ তাই সিয়ামও রুমানার মুখ থেকে বের হওয়া শব্দ গুলোকে হজম করে নেয় ৷

তোমার সাথে একটা জরুরি কথা আছে ৷ এখনি ক্যাম্পাসে আসো ৷

রুমানা যখন যা বলে সিয়াম সেটাই করে ৷ রুমানা ডেকেছে মানে ইলেকট্রনিক ট্রেনের মতো ছুটে যেতে হবে ৷ সিয়াম সেটাই করে ৷ রুমানার ডাক পড়লে সিয়াম ছুটে যায় ৷ আজও তার ব্যতিক্রম হলো না ৷

সিয়াম দ্রুতগামী ট্রেনের মতো ছুটে গেল রুমানার কাছে ৷

রুমানা যে কারণে সিয়ামকে ডেকেছিল সে কাজটি করতে সিয়ামের পনেরো মিনিট লেগেছে ৷ অবশ্যি সিয়াম চাইলে আরো আগে শেষ করতে পারতো ৷ কিন্তু সিয়াম সেটা করেনি ৷ কারণটা অজানা থাকুক ৷

সিয়াম বাসায় ফেরা মাত্র সাজেদা বেগম তার আদরের ছেলেকে ডেকে বলে , বাবা সিয়াম জানিস আজকে আমাদের বাসায় একটা পরীর মতো মেয়ে এসেছিল ৷ মেয়েটা যে কী সুন্দর তুই না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবি না ৷ ঠিক যেন পরী ৷ মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে ৷ ইশ্ আমার যদি একটা বড় ছেলে থাকতো তাহলে মেয়েটাকে আমার ছেলের বউ বানাতাম ৷

সিয়ামের বুঝতে বাকী নেই তার গুণধর মা কার কথা বলছে ৷ একটা আধা পাগলী মেয়েকে মা পরী বানিয়ে ফেললো ? মা কার সাথে কার তুলনা করছে ?

অবশ্যি সিয়ামের মায়ের একটা সমস্যা আছে ৷ সেটা হলো উনি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছেলের বউ বানাতে চান ৷ যেমনটি সাদিয়া দেখে ছেলের বউ বানাতে চাচ্ছেন ৷

মা তুমি বকবক থামাবে নাকি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবো ? কোথাকার কোন ঢংগী পাগলী মেয়েকে দেখেছো আর ছেলের বউ বানাতে চাচ্ছো ৷ আচ্ছা মা তোমার ছেলেকে কয়টা বিয়ে করাবে বলো তো ?

কেন একটা ৷

আমার তো মনে হয় না আমাকে একটা বিয়ে করাবে ৷ সেদিন আয়েশা ফুপি ওনার ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিল তুমি ফুপিকে কি বলেছিলে , আপা আপনার রুশা বড় হলে আমাদের সিয়ামের সাথে বিয়ে দিবো ঠিক আছে ?

আজকে বলছো মেয়েটাকে তোমার ছেলের বউ বানাবে ৷ এগুলোর মানেটা কি ?

সিয়ামের কথা শুনে সাজেদা বেগম চুপ করে থাকে ৷

কি হলো মা বলো ?

তুই এখন যা তো ৷ আমার অনেক কাজ বাকী আছে ৷ আর দেখতো অন্তরা সেই কখন ছাদে গেছে ফিরে আসেনি ৷ বদমাইশ মেয়েটা একা একা ছাদে কি করতেছে ?

সিয়াম ছাদে যায় ৷ গিয়ে দেখে অন্তরা ছাদে বসে বই পড়ছে ৷

কি রে অনু এখানে একা বসে বই পড়ছিস ? মা ডাকছে চল ৷

অন্তরা মাথা তুলে সিয়ামকে দেখে বলে , জানো ভাইয়া একটা কিউট আপু এসেছিল ৷ কি সুন্দর করে কথা বলে ৷ তুমি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না ৷ আচ্ছা ভাইয়া আমি কেন সুন্দর করে কথা বলতে পারি না ?

সিয়াম মনে মনে বলে , সাদিয়া তাহলে অনুর কাছেও এসেছিল ?

আসলে সাদিয়া মেয়েটা কে ? কি বা তার পরিচয় ? আর কেনই বা আমাদের সাথে এমন করছে ?

কে বলেছে তুই সুন্দর করে কথা বলতে পারিস না ৷ তুই অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারিস ৷

জানো ভাইয়া আপুটা আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে ৷

যেমন ?

আমি যে জেএসসিতে ফেল করেছিলাম আপুটা সেই কথা বললো ৷ আমি কি খেতে পছন্দ করি সেটাও বললো ৷ আরো অনেক কিছু ৷ আপুটার কথা শুনে মনে হচ্ছিল আপুটা আমাদের পরিচিত কেউ ৷ কিন্তু আমি আপুটাকে চিনতে পারিনি ৷

অন্তরার কথা শুনে সিয়ামের মাথা ঘুরছে ৷ কে এই সাদিয়া ? আর আমাদের সম্পর্কে এতো কিছু জানলো কিভাবে ?

জানো ভাইয়া হুমায়ুন আহমেদের দেবী বইটি আপুটা আমাকে গিফট দিয়ে গেল ৷ আর বললো আমার যদি বই লাগে তাহলে আমার বান্ধবী মাইশাদের বাসায় যেতে ৷ আপুটা মাইশাদের বাসায় ভাড়া থাকে ৷

সিয়াম ভাবে , যাক এবার তাহলে মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া যাবে ৷ মাইশার ভাই সিয়ামের ফ্রেন্ড ৷

তুই নিচে চল মা ডাকছে ৷

না ভাইয়া আগে বইটা পড়ে শেষ করি ৷

চল বলছি নইলে থাপ্পর খাবি কিন্তু ৷

বিকাল বেলা সিয়াম মাইশার ভাই আসিফের সাথে দেখা করে ঘটনাটি বলে ৷ সিয়ামের কথা শুনে আসিফ অবাক হয় ৷ আসিফও সাদিয়াকে সেভাবে চেনে না ৷ কদিন আগেই ওদের বাসায় এসেছে ৷ নতুন ভাড়াটিয়া তাই সেভাবে কিছু জানা হয়নি ৷

সিয়াম আসিফকে বলে , দোস্ত যেভাবেই হোক সাদিয়ার সম্পর্কে আমার জানা দরকার ৷ সাদিয়া মেয়েটি আসলে কে ?

আসিফ সিয়ামকে বলে , আচ্ছা ঠিক আছে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানাবো ৷

তিনদিন পর সিয়াম আসিফের কাছে যায় ৷ কিন্তু আসিফ সাদিয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারে না ৷

অবশেষে উপায় না পেয়ে আসিফ সিয়ামকে বলে , দোস্ত এক কাজ করতে পারিস চল আমরা কবিরাজের কাছে যাই ৷ কবিরাজের কাছে গেলে জানতে পারবো সাদিয়া আসলে কে ?

সিয়াম বলে , আমার পরিচিত কোনো কবিরাজ নেই ৷

আরে পাগলা আমার পরিচিত একজন কবিরাজ আছে ৷ উনি মানুষের মুখ দেখে সবকিছু বলে দিতে পারে ৷ মানে তোর মুখ দেখে বলে দিতে পারবে তোর জীবনের ঘটে যাওয়া অতীত গুলো ৷

সত্যি !

হুম সত্যি ৷

তাহলে এক্ষুনি চল ৷

সিয়াম আর আসিফ দুজনে মিলে কবিরাজের কাছে যায় ৷ দুইশত টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে বসে থাকে ৷ প্রায় দুই ঘন্টা বসে থাকার পর সিয়াম আর আসিফকে ডাকা হয় ৷ দুজনে কবিরাজের সামনে গিয়ে বসে এবং সিয়ামের সমস্যার কথা বলে ৷

সিয়ামের কথা শোনার পর কিছুক্ষন কবিরাজ চুপ থাকে ৷ তারপর সাদিয়ার ব্যাপারে সব কথা বলতে থাকে ৷

কবিরাজ সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে , ওহে বাছা সিয়াম তোমাকে একটি মেয়ে ভালোবাসতো জানো ?

সিয়াম মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় হুম ৷

তুমি মেয়েটিকে ভালোবাসতে ?

সিয়াম মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয় ৷

কেন ভালোবাসোনি ?

সিয়ামের মনে পড়ে সেই সুমাইয়া সিমুর কথা ৷ যে সিমু সিয়ামের অন্ধ ভক্ত ছিল ৷ সিয়ামের কাছে একটু ভালোবাসা পাওয়া জন্য হাত পর্যন্ত কেটেছিল ৷ কিন্তু সিমু দেখতে কালো ছিল বলেই সিয়ামের মনে জায়গা হয়নি ৷

সিমু দেখতে কালো ছিল ৷ তাই সিমুকে আমার ভালো লাগতো না ৷ সেজন্য সিমুকে ভালোবাসিনি ৷

মেয়েটা এখন কোথায় আছে জানো ?

সেটা জানি না ৷ তবে আমি একদিন ওকে খুব করে বকা দিয়েছিলাম ৷ আমি ওকে পছন্দ করতাম না তারপরও সিমু আমার পিছু পিছু ঘুরতো ৷ বকা দেওয়ার পর থেকে আর কোনোদিন স্কুলে দেখিনি ৷ পরে জানতে পেরেছি সিমু ওর মামা বাড়িতে চলে গেছে ৷ ওখানে নাকি একটু স্কুলে ভর্তি হয়েছে ৷

আর কিছু জানো ?

নাহ ৷

তুমি যাকে সাদিয়া বলছো সেই সাদিয়ার ভিতরে সিমুর বসবাস ৷

কবিরাজের কথা শুনে আসিফ আর সিয়াম চমকে উঠে ৷ বুকের ভিতর ভূমিকম্প শুরু হয় ৷

আপনি কি বলছেন এসব ? সাদিয়ার ভিতরে সিমুর বসবাস মানে ?

তোমার ভালোবাসা না পেয়ে স্কুল ছেড়ে যাওয়া মেয়েটি একদিন মা , বাবার অজান্তে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে এবং সিমুর আত্মা ওর ছোট বোন সাদিয়ার শরীরে ভর করে ৷

কবিরাজের কথা শুনে সিয়ামের শরীর ঘেমে যায় ৷ হাত পা কাঁপতে থাকে ৷ আসিফ সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে ৷ সিয়ামের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় ৷ সিয়াম কথা বলতে চাইলেও মুখ থেকে কথা বের হয় না ৷

আসিফ কবিরাজকে বলে , এখন তাহলে উপায় ? সাদিয়া সিয়ামের কোনো ক্ষতি করবে না তো ?

সেটা আমি বলতে পারবো না ৷ তবে সিয়ামকে সাবধানে থাকতে হবে ৷

আপনি কোনো তাবিজ ,কবজ দিবেন ?

হুম একটা তাবিজ দিবো আর এক বোতল পানি ৷ তবে এই পানি আনতে হবে তোমাদের এলাকার দশটি মসজিদের টিউবওয়েল থেকে ৷

আসিফ বলে , আচ্ছা ঠিক আছে ৷

কবিরাজ একটি তাবিজ সিয়ামের বাম হাতে বেঁধে দেয় ৷ এবং কবিরাজ সিয়ামের মাথায় ফুঁ দিয়ে দেয় ৷

আসিফ সিয়ামকে নিয়ে কবিরাজের বাসা থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরে আসে ৷

পাঁচদিন পর আসিফ সিয়ামকে খবর দেয় সাদিয়া গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৷ আসিফদের বাসা ভর্তি মানুষ ভিড় করছে ৷ থানা থেকে পুলিশ এসেছে ৷

সাদিয়ার আত্মহত্যার কথা শুনে কেঁদে ফেলে সিয়াম ৷ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় ৷ সিয়াম যদি সিমুর ভালোবাসা কবুল করে নিতো তাহলে হয়তো আজ সাদিয়ার মৃত্যু হতো না ৷ একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কতটা ভালোবাসতে এমন কঠিন শাস্তি নিজের আত্মাটাকে দিতে পারে সেটা কালো মেয়ে সিমুকে না দেখলে বিশ্বাস হবে না ৷

সিয়াম মানসিক ভাবে অসুস্থ্য ৷ রুমানার কল রিসিভ করে না ৷ সারাদিন রুমেই শুয়ে থাকে ৷ আর সিমুর কথা ভাবে ৷ সিয়ামের মনে হয় এই তো সিমু ওর রুমে পায়চারি করেছে ৷ সিয়ামের নাম ধরে ডাকছে ৷ যেমনটা ডাকতো স্কুলের খেলার মাঠে ৷

সিয়ামের নোনা জলে বালিশ ভিজে যায় ৷

রুমানার ফোন থেকে কল এসে কেটে যায় ৷ আর এদিকে সিয়াম মানসিক রোগী হয়ে ডুবে যায় সিমু নামের কালো মেয়েটার অপূর্ণ ভালোবাসার সাগরে ৷

 

Post a Comment

Previous Post Next Post