জীবনে এসেছিল একবার

 জীবনে এসেছিল একবার

        আজিজুল হাকিম


আমাকে কেউ বিরক্ত করনা, প্লীজ !

দেখছ না ? ওই যে অনতি দূরে

দারুণ সুন্দর সবুজ টিলার উপরে

দাঁড়িয়ে আছে যে মেয়েটি

সে আমার অপ্সরা, যার তরে আমি মরি ।

 

দেখ, দেখ ওর সারা মুখময় খেলছে নিঃশব্দ বিদ্যুতের ঝিলিক  

চোখের তারায় জোনাকির আলোর প্রজ্জলতা

চক্ষুপল্লবে খেলছে গোলাপের পেলব পাপড়ির মনহরি উচ্ছ্বাস

ফুরফুরে বাতাসে ওর উদবেলিত চুলে খেলছে স্বর্ণালী হাসি ।

 

তুমি কি কখনো গোধূলি বেলায় পশ্চিম দিগন্তে মেঘ দেখেছ ?

আকাশের সেই আদিগন্ত হেমাগ্নি সাগর বেলায়

এক উত্তাল তরঙ্গ তটে

দেখেছ তার মন মাতানো আভা ?

তেমনি উদ্ভাসিত আমার প্রিয়ার স্নিগ্ধ আনন কানন; 

ওর ওষ্ঠাদ্বয় যেন কাটা তরমুজের ফালি ।

ওর নিষ্পাপ ঐকান্তিক চাহনিতে

না জানি এ-কোন অব্যক্তত আকর্ষণে

এক অদৃশ্য প্রেমের ঢেও উপছে পড়ছে আমার হৃদয়ের সাগর বেলায়

শিরাধমনীতে জেগেছে শিহরণ

ওর দুই কাঁধ জুড়ে আছে শুভ্র সোনালি পালকের রঙ ।

এত উপমার পরেও মনে হয়

ওর অপরূপ রূপ-লাবন্য রয়ে যায় অবর্ণনীয় মহিমায় ।

 

অবশেষে অচঞ্চল পদছন্দে ও এসে দাঁড়াল সম্মুখে আমার

ওষ্ঠাধারে লেগে আছে স্মিত হাসির ঝিলিক ।

 

কি হয় ! কি হয় ! এমন দোদুল্যমানতায়

দাঁড়িয়ে আছি আমি ।

আর সে !

হঠাৎই নিঃসঙ্কোচে, নির্দ্বিধায় এলিয়ে দিল ওর দেহ

আমার বুকে – নিবিড় আলিঙ্গনে ।

 

পূর্ব দিগন্তে সোনালি উল্লাসে হেসে উঠল পূর্ণিমার চাঁদ

সারা নীল আসমানের উঠোন জুড়ে জ্বলে উঠল তারাদের প্রদীপ

চারিপাশে জেগে উঠল ঝিঁঝিঁপোকাদের উল্লাস

জোনাকিরা মেতে উঠল আলোকিত নৃত্যের তালে

লতাপাতা, পল্লবে আর গাছেদের ডালেডালে

ভাবিনি কখনো এমন অনাকাঙ্খিত স্বর্গীয় সুখ

নেমে আসবে হৃদয়ে, জীবনে আমার ।

কে জানে, আজ এই মুহূর্তে হয়ে যেতে পারে জীবনের অবসান

এমন আনন্দ ঘন বেলা আর যদি না আসে জীবনে দুবার

আজ সে আমার, কেবলই আমার ।

কাল সে চলে যেতে পারে মুছে ফেলতে অন্য মনের অন্ধকার  

সবই তো ভাগ্যের লিখন !

তবুও মরণের আগে এমন সুখ স্মৃতি

বয়ে নিয়ে যেতে পারব, বলে যেতে পারব,

ও আমার জীবনে এসেছিল একবার ।     

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post