চারুন রথিকের দুটি কবিতা

 

প্রকৃতি মায়ার দেশে

চারুন রথিক

 

এখানে এসে,

জীবনকে মেলে ধরা যায়,

শালবনের বৃষ্টিকে দেখানো যায় অভিমান,

আকাশকে দেওয়া যায় চুম্বন

বলবো না বলবো না করেও, বলা হয়ে যায় মধুবনের ছোটো গল্প।

এখানে এসে

তোমার বহিরঙে মেলানো যায় আমার অন্তরঙ্গ

ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে শুনতে পাই তোমার নুপুর।

এখানে এসে

নদীর জল বাড়ে,

আমি এলিট সীমান্তে দিই বাঁধ

পরিশোধ করি ঝোড়ো হাওয়ার ঋণ।

হাতে সময় কম থাকে, একটু দেরি হলেও শুনে রাখি আলেয়ার উপকথা।

এখানে এসে

লুকিয়ে রাখা যায় এ বুকের আধখানা পাঁজর

নুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ, আর পান্তাভাত

বাঁশের খুঁটি, মাটির দেওয়াল,

খড়ের ছাওনি ঘেরা আমার শালুক স্বপ্নপুরী।

এখানে এসেই তো শুরু হয়, অমৃতপ্রীতির রহস্য রোপন।

তাকিয়ে দেখা যায়, শূন্য মাঠ।

ক্ষয়ুষ্ণ শোকের নীরবতা দিয়ে মেপে নিই তার গভীরতা।

ঘোমটা ফেলে তখন বেরিয়ে আসে কাশবনের রাজকন্যা।

আমি মাটির ভাঁড়ে শীতঘুমের বিছানা ছেড়ে তাকে উপহার দিই এই বীরেন্দ্র শরীর,

মিটিয়ে ফেলি জীবনের সব ঋণ।

 

 

বিশ্বনাগরিক

 একটা নামহীন ইস্টিশনে থামতে চেয়েছিলাম আমি। রোদ পেকে সুগন্ধ ছড়ালে, পুবের হাওয়াটাকে কিছুটা পশ্চিমে, পশ্চিমের হওয়াটাকে কিছুটা পুবে ঘোরাবো বলে অঙ্গীকার করেছিলাম। মানি প্লান্ট লাগানোর তোড়জোড়ে সবাই যখন ব্যস্ত, আমি অর্ধনগ্ন ঐতিহ্যের শেকল ছিঁড়ে বাইরে আশ্বস্ত হয়েছিলাম নীল ডুবুরীর খোঁজে। আমার ভুল হয়নি, আমি ভুল করেছিলাম, আমি সময় মতো আমার নিজের নামটা দিতে পারিনি আজও। কান্নার নোনা জলে অ্যালকোহল মিশিয়ে, এ বুকের তেপান্তরে বয়ে গেছে যে সোনালী নদী, আমি তার পাড়ে বসে, পাথর ঘষে গায়ের রং তুলেছিলাম। লিঙ্গ ছিঁড়ে রেখেছিলাম গোল টুপিতে। টুপির টাপরে বিকেল হলে ফুটবল খেলেছিলাম। মুখের গর্বে মুক্তির আহুতি দিইনি কোনোদিন। আমি এখন মহাজাগতিক মুসাফির, আমার এঁটো বাতাসের রঙ্গমঞ্চে যাদের তিমি শিকারের প্রহসন, আমি জানি তারা পারবে না, তাদের দেবতারাও নয়, তাদের রাষ্ট্রনায়কেরাও নয়, সময় হলে শুধু আমিই দিতে পারি আমার নাম।

Post a Comment

Previous Post Next Post