এখন প্রেমের সময় নয়, প্রিয়া
আজিজুল হাকিম
লীনা, তোমার চোখের উত্তাল সাগর বেলায়
আমি আরও একটি নোঙর ফেলতে চাই-
অগুনিত নক্ষত্র খচিত জাহাজ ।
তোমার আমার ভালোবাসা হৃদয়ের খাঁজে, ভাঁজে লুকানো থাক ।
এখন প্রেমের সময় নয়, প্রিয়া !
আহা ! যাদের রক্ত ঘামের বিনিময়ে
সবুজে সবুজে হেসে উঠে মাঠ
সোনালী ফসলে ঝলসে উঠে রোদ্দুর
তারা আজ বিষ হাতে অদৃশ্যের ঠিকানা খুঁজে,
মৃত্যুর বুকে খুঁজে ফিরে চির শান্তির নীড় ।
খবরের ফেরিওয়ালারা চোখে কালো পট্টি বেঁধে
নগ্ন রাজার ভেলকি নাচন দেখতে, দেখাতে ব্যস্ত,
সাম্প্রদায়িকতার কশায় খানায়
সংখ্যালঘুর রক্ত পিপাসায় উন্মাদ ।
জনতার কোষাগারে দিবারাত্রি চলে হরির লুট
সীমান্ত চুরি যায় অন্ধকার ঠিকানায় ।
লীনা, তোমার চোখের উত্তাল তরঙ্গ তটে
প্রেম নয়, আরো একটা বিপ্লবের আগুন জ্বালো
তোমার মোহিনী প্রেমাতুর কণ্ঠে
আগুন ঝরানো গান গাও
তোমার দেহে আনো বৈপ্লবিক প্রেরণাময়ী উন্মাদনা ।
লীনা, স্বৈরতন্ত্রের মৃত্যু চিতা জ্বেলে,
সেখানে ফলাবো গোলাপি প্রেমের ফসল ।
রচনাঃ ১৮/০৯/২০২০
******************
সবুজের আহ্বান
আজিজুল হাকিম
খুবলে খাওয়া জ্যোৎস্না ভেজা রাস্তায় হেঁটে চলেছি আদিগন্ত পারে
নির্জন চরাচরে ।
নির্জন চরাচরে ।
কেবল আমি ছাড়া
বিবর্ণ রাতের শ্রীহীন আলো ছায়ায় অশরীরী প্রেতাত্মারাও এপারে নেই ।
নির্জনতার অদৃশ্য দানবিক থাবার মৃত্যু গ্রাসে
অবাক পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে নিঃশ্চুপ ।
এখানে কোন জীবন নেই,
মানবতা হার মেনেছে বারেবারে
বেবুঝ মানুষের মৃত্যুর মিছিলে ।
রক্ত নদীর স্রোত ধারায় ডুবে যাচ্ছে দুটি পা
এক আকাশ লজ্জা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
মন্দির, মসজিদ, গীর্জা
পাথর দেহে
পাশাপাশি ।
কোন আজান নেই, কোন ঘন্টা নেই, কোন আরতি নেই
তাদের গা বেয়ে ঝরে পড়ছে বিধাতার অশ্রু ধারা
যত্নহীন আঙিনায় , দেয়ালের খাঁজে খাঁজে
একশত সকালের হাসি নিয়ে
জন্ম নিচ্ছে ঘাস, গাছ, লতাপাতা ।
রচনাঃ ০৩/০৫/২০২০
*********************
উল্টো পথের পাঁচালী
আজিজুল হাকিম
ঘরের ভিতরে ঘর বেড়ে চলছে অবিরত -
বিচ্ছেদের দেয়াল ভীষণ স্পর্ধায় আকাশ ছুঁতে চায় ।
বিশেষ চিহ্নের রঙ-তুলিতে দেয়াল ছয়লাপ হয়
হিংসা,জাতপাত,ভাষা আর আঞ্চলিকতার শ্লোগানে ।
উর্বরা জমিনে বন্ধ্যাত্বের বালু জমে -
মরু গ্রাস করে ক্যাক্টাসের বনানীতে ।
খিদের ক্ষয়রোগে দেহ রক্ত মাংস হারায়
শকুন ওঁত পেতে থাকে মৃত্যুর উপত্যাকায়
চারিপাশে রাক্ষস দানবের হুঙ্কার -
শান্তির আগুনে পুড়ে স্বপ্নিল ছেলেবেলা,
ভরা যৌবনি প্রেম, সুখের স্বপ্ন ।
অত্যাচারী মৃত্যুর দূত গেয়ে চলে অমরত্বের গান
আকাশে বাতাসে ছড়ায় শান্তির, অহিংসার বাণী ।
হে ভগবান, তুমিও কি গেয়ে যাও ভাঙনের গান,
অপ্রেমের গান, অশান্তির গান ?
রচনাঃ ১৫/১০/২০১৯
***************
সৈনিকের আত্মকথা
আজিজুল হাকিম
সীমান্তরেখায় লুকোচুরি খেলার আত্মমগ্নতায় বিভোর আমি ।
বিনিদ্র রজনীর নিটোল লাবণ্যময় চাঁদের স্বর্গীয় হাসি
আর সুডৌল স্তনচূড়ার মতো পার্বত্য সৌন্দর্য
ম্লান হয়ে হয়ে যায়
আমার বীভৎস জীবন আর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় ।
ঈগলের চোখ স্থির থাকে সীমান্তের পারে;
বুক উঁচিয়ে দাঁড়াই শত্রুর বন্দুকের নলায় ।
আমার রক্তপানে রতিময়ী হয়ে উঠে যুবতী দেশ ।
আমার নির্মম শহীদে রাক্ষুসে ক্ষমতার দম্ভ
ফিরে পায় নর কুলাঙ্গার পিশাচ -
দেশের অন্দরে প্রলাপ বকে রাজনৈতিক ভাঁড় ।
বুদ্ধিজীবীদের কলমও ভয়ে নড়বড় করে
শত মাইল দূর থেকে ভীতু কাপুরুষ দেশদরদী পান্ডা
হিংস্র হুঙ্কার ছেড়ে হাততালি লুফে
উল্লুক জন সমুদ্র হতে;
আমাকেও উল্লুক বানায় প্রশংসার অজুহাতে ।
অন্ধকার ক্যাসিনোতে জমে উঠে দেশ জুয়ার রোমাঞ্চকর আড্ডা
আমি পড়ে থাকি কনকনে শীতে
খোলা আকাশের নিচে
মৃত্যুও লুকোচুরি খেলে আমার সাথে বুলেট আর বারুদের আড্ডায় ।
এক সুন্দরী বেশ্যা যুবতীর মতো হাত বদল হয় প্রিয় স্বদেশ--
বাসন্তিক উন্মাদনায় নেচে উঠে পরপুরুষের হাতে ।
কেবল ফালতু ফালতু অকালে নষ্ট হয়
আমার স্বপ্ন, উজ্বল সম্ভাবনা আর জীবনের ফুল ।
রচনাঃ ০৭/০৮/২০২০
********************
কোন এক বিষাক্ত সন্ধ্যায়
আজিজুল হাকিম
কোন এক বিষাক্ত সন্ধ্যায় আমি হেঁটে চলেছি মাইলের পর মাইল ।
পশ্চিম দিগন্তের আয়না থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে
লাল টুকটুকে অরুণ আভা
অন্ধকার , আরো অনেক অনেক অন্ধকারের স্তর
নিঃশব্দে ছেঁয়ে ফেলছে চারপাশ ।
অন্ধকারের আবরণে
আমার কাছের মানুষেরা কেমন অদ্ভূত হয়ে যাচ্ছে
চোখ, মুখ, কণ্ঠ সবই
কেমন যেন রক্ত, মাংস খাই খাই ভাব ।
কোন এক বিষাক্ত সন্ধ্যায় আমি হেঁটে চলেছি
চারিপাশে চুপ, চুপ ! শব্দ
ফিসফিস গলার স্বরে সতর্কতার সংলাপ,
দূর থেকে ভেসে আসছে বর্বরতার হুংকার ।
দেশ জুড়ে চলছে রামের বাণে রহিমের বধের পালা,
গঙ্গার জল পবিত্র হচ্ছে মানুষের লহু বর্ষিত লাশে,
ক্ষুধাতুর মানুষ আজও ধর্মের গান গায় !
ফুটপাতে পড়ে থাকে কঙ্কাল দেহ ,
ধর্মের পেয়ালায় চুমুক দেয় মন
স্বর্গের সুখ স্বপ্নে মশগুল হৃদয়;
খাদ্য পাচার হয় , ইজ্জত বাজিমাৎ করে ও পাড়ায় ।
কোন এক বিষাক্ত সন্ধ্যায় আমি হেঁটে চলেছি
এক অদৃশ্য ব্ল্যাকহোল গিলে খাচ্ছে আমায়
দূর থেকে ভেসে আসছে কোন নারীর বস্ত্র হারানোর চিৎকার ।
সন্তান অনাথ হয় হিংস্রতার নখরে
অস্ত্রের ডগায় শিশু খুঁজে মাকে ।
তবু , তবু আমি হেঁটে চলেছি একটি নিটোল আলোর উৎসমুখে ।
রচনাঃ ১৯/০১/২০২০
দারুণ দারুণ দারুণ কবিতা। প্রথম দুই কবিতা খুব ভালো হয়েছে।
ReplyDeleteহৃদয়ের গভীর থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, প্রিয় দাদা ।
Delete