চ্যাট
জিপিটি ও সাহিত্য
আজিজুল হাকিম
বর্তমান বিশ্বে একটি বিস্ময়, একটি বিপ্লব, একটি নবজাগরণের অপর নাম ChatGPT. এটি প্রযুক্তি বিদ্যার জগতে একটা অমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছে।
এই চ্যাট জিপিটি কি করতে পারে আজকে এটাই প্রশ্ন। বলা যায় এমন
কোন কাজ নেই যা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করতে পারে না। ওয়েবসাইট তৈরি থেকে যে কোন সৃষ্টিশীল
কাজ করার সক্ষমতা আছে। লিখনের জগতেও এমন কোন কাজ নেই যে চ্যাট জিপিটি সেই কাজটা করতে
পারে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সেগুলো কি চ্যাট জিপিটি লিখতে পারবে?
আমি বলব, হ্যাঁ! অবশ্যই পারবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অবলীলায় একটি সুন্দর এবং সম্পূর্ণ
মৌলিক একটি কবিতা লিখে দিতে পারবে। যাদেরকে অকবি বলে অনেক কবিরা সম্বোধন করেন তাদের
চেয়ে অনেক অনেক ভালো মানের কবিতা উপহার দিতে পারবে।
(বাংলা কবিতা)
তাহলে আবার প্রশ্ন এসে যায়, আমরা কি করে বুঝবো যে এটা একটি
মনুষ্য সৃষ্টি কবিতা, না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইএ র সৃষ্ট কবিতা? বর্তমানে এটা
বলা খুব মুশকিল। যদিও আমি কবিতার তেমন কিছু বুঝিনা তাই মানুষের তৈরি কবিতা আর এই যন্ত্রের
তৈরি কবিতা র পার্থক্য বুঝতে পারছি না। তবে ২০২১ সালের আগের প্রায় সব কবিদের রচনাশৈলী
এই যন্ত্র মানব আয়ত্ত করে নিয়েছে। যদি কেউ একদম অভিনব পন্থায় নতুন রচনাশৈলীতে কবিতা
লিখে তাহলে জানা যাবে যে এটা মানব সৃষ্ট কবিতা। তাছাড়া নয়। বর্তমানে যে কোন কবিতাকে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফসল হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে।
তাহলে এত সুন্দর কবিতা লিখতে পারবে? হ্যাঁ, পারবে। সুন্দর এবং
অদ্ভুত শব্দ ব্যবহারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তুলনা হয় না।
এবার আমাদের আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে আমরা কেন কবিতা
লিখব? যদি এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট আমাদেরকে ভালো ভালো কবিতা উপহার দেয় তাহলে
কবিতা লিখে আমাদের কোন লাভ নেই। এমনকি আমরা আজকে আর কোন কবিকে তেমনভাবে বিশ্বাস করতে
পারব না যে তিনি এই কবিতাটি আমাদেরকে উপহার দিচ্ছেন না এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপহার?
মাঝে মাঝে এটাও মনে হচ্ছে আজকে আর কবিতা লিখে কোন লাভ নেই। এ আবার গল্প, প্রবন্ধও লিখতে
পারে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি এত কিছু করতে পারে এবং আমাদের সাহিত্যে একটা
বিশাল প্রভাব খাটাতে পারে; সাহিত্য জগতকে শাসন করতে পারে তাহলে আর মানুষের দরকার হবে
কি? আজকে আমরা এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চলেছি। একসময় আমরা গর্ব অনুভব করতাম। কিন্তু
এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আসার পরে আমাদের সমস্ত গর্ব সমস্ত অহংকার ভেঙ্গে চুরমার
করে দিতে শুরু করে দিয়েছে। তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমরা কেন ব্যবহার করব?
সাহিত্য সৃষ্টি বলে নয় কোন না কোন কাজে এর সাহায্য নিতে হবে।
নইলে পিছিয়ে যাব। আর এগিয়ে যেতে যেতেই আমাদের অজান্তে নিরব উল্লাসে আমরা
তার দাসে রূপান্তরিত হব।