জাহাঙ্গীর আলম সোহেলের
একগুচ্ছ কবিতা
১
স্বাধীনতার কবিতা
যেদিন শহীদ
মিনারের আগে পুষ্পস্তবকে ভরে যাবে
প্রতিটি
বীর শহীদের সমাধিস্থল
সেদিন আমিও
একটি স্বাধীনতার কবিতা লিখবো
রক্ত মিশ্রিত
পতাকায় রক্তিম মাটির বুকে।
যেদিন দেশের
সকল মানুষ রাজনীতি ধর্ম জাতি
ভেদাভেদ
ভুলে স্বাধীনতার বিজয়ে উজ্জীবিত হবে
এক মাঠে,
এক কাতারে, এক স্লোগানে
সেদিন আমিও
আনন্দে গাইবো
মুখরিত হবো
স্বাধীনতার নতুন গানে।
২
মানুষ
মানুষতো
এমনি!
কেউ মারবে
কেউ বাঁচাবে
কেই আহারে
বলবে
কেউ তাকিয়ে
দেখবে
কেউ কষ্ট
দেবে
কেউ সুখ
দেবে
কেউ বদলাবে
কেউ বদলে
দিবে
কেউ আবার
নিজের স্বার্থে আপন হবে পর হবে।
কেই ভালোবাসবে
কেউ ধোকা
দেবে
কেউ প্রশংসা
করবে
কেউ গীবত
করবে
কেউ সাহায্য
করবে
কেউ আদর্শের
কথা শোনাবে
কেউ নিজের
কুকীর্ত গর্ব করে বলবে।
কেউ জয়ি
হবে
কেউ পরাজিত
হবে
কেউ খারাপ
হবে
কেউ ভালো
হবে।
কেউ আশীর্বাদ
করবে
কেউ অভিশাপ
করবে
অতঃপর সব
শেষে সবাই এসব কিছু
নিজের মাঝেই
দেখতে পাবে।
৩
দ্বিমত
তোমরা যা
কিছু দেখাইছো আমায়
শিখেছি আমি
তাই,
যদি কিছু
ভুল হয় পাপ হয়
তোমাদেরকেই
নিতে হবে তার দায়।
আমিতো দেখেছি
মুরুব্বিয়ান ব্যাক্তিদের
সিগারেটের
শৈল্পিক ব্যাবহার।
কিভাবে ধুয়া
টানিতে টানিতে
প্রকাশ্য
দিবালোকে জনসম্মুখে
কিশোর যুবকদের
উৎসাহিত করে বলে,
তোমরাই জাতীর
ভবিষ্যৎ
আমাদের মতো
তোমরাও ধরবে সমাজের হাল
রাখবে দেশের
মান।
তবে কেনো
আজ আমার হাতে
সিগারেট
জ্বলজ্বল করলে বলবে
ছেলেটা বেয়াদব
কুলাঙ্গার,
এসবতো ছিলো
তোমাদেরই শিষ্টাচার।
দেখাইছো
কিভাবে হয় গরীবের উপর অত্যাচার
বুঝাইয়াছো
সমাজে ধনী গরীবের তফাৎ
তাহলে আমি
তফাৎ খুঁজিলে কেনো বলিবে
আমি নীতি
হীন জুলুমবাজ
এসবতো তোমাদেরই
ছিলো চলোমান।
নির্বাচনের
আগে দেখিছি রোজ মিথ্যে প্রতিশ্রুতির সমাহার
সালিসি দরবারের
আগে পরে কত-শত টাকার ভাগবাটোয়ার
আজ আমি এসব
করিলে কেন করিবে গালিগালাজ
তবে কি তোমাদের
সামাজিকতা ছিলো শুধুই মিথ্যাচার?
দিনের আলোতে
নারীর প্রতি দেখাও কতো সম্মান
রাতের বেলায়
নারীকে তুমি ব্যাশ্যালয়ে বেঁচে দাও।
সুদ খাওয়া
হারাম বলো ঘুস খাওয়া অন্যায়
বড়ো বড়ো
নীতি কথা শুধু মুখেই শোভা পায়।
বিদ্যালয়ের
বিদ্যান দিয়ে পারিনি জীবন গড়তে
শিক্ষকের
শিক্ষা আজ ভীষণ মিথ্যে লাগে।
বলে এক করে
ভিন্ন শোনে যাহা দেখে অন্য
উল্টা পাল্টা
নিয়ম নীতি সত্যি মিথ্যার বদলা বদলি।
৪
একটি দেশের কাহিনী
এই পৃথিবীতে
ছোট্ট একটি দেশ আছে
প্রকৃতি
সুন্দর করে দেশটাকে সাজিয়েছে।
সে দেশে
যতই দারিদ্রতা আসুক না কেনো
উন্নয়নের
আমাবস্যা সবসময় লেগেই থাকে।
সে দেশে
একজন বিজ্ঞানী আছে
যার কোন
আবিষ্কার নেই।
সে দেশে
একজন কৃষিবীদ আছে
যাকে কোনদিন
দেখেনি কেউ কৃষি কাজ করতে।
সে দেশে
একজন তথ্যবীদ আছে
যার মুখ
দিয়ে কোনদিন সঠিক তথ্য বের হয়নি জনতার সামনে।
একজন খেলোয়াড়
আছে যে সবসময় বলে খেলা হবে
কিন্তু কোনদিন
মাঠে গিয়ে খেলতে পারেনি।
একজন অলরাউন্ডার
নারী মওলানা আছে
যে সকল বই
কিতাবের পাণ্ডিত্য হয়া ফাইট্ট গেছে।
একটা চতুর
পাখি আছে
যে কিনা
মিষ্টি সুরে কা কা বলে গেয়ে উঠে সব ঋতুতে।
কিছু বাহিনী
আছে জনগণের বন্ধু রূপে চাকর পদায়নে
যাদের সামনা-সামনি
ভয় করে আড়ালে অভিশাপ করে
সে দেশ এতটাই
শক্তিশালীযে বাঁশ দিয়ে রডের কাজ
চালিয়ে নেয়া
যায় অনায়াসে।
সাহসা কেউ
এগিয়ে গেলে পাদু’টো কেটে
হুইলচেয়ার
দান করে, চীর দিন বসে খেতে।
এতটাই মহান
বিচার বিভাগ সে দেশে।
সে দেশের
সবচেয়ে বড়ো সম্পদ হচ্ছে
একটি অলৌকিকভাবে
বাবা আছে
যার নামে
জিকির করলে উন্নয়নে ভরে যায়
ঘর থেকে
বাহিরে।
সে দেশে
সব আছে সব আছে উন্নয়ন হয় দিনে রাতে
উন্নয়নের
জোয়ারে দেশ সাঁতার কাটে মহাকাশে।
৫
শেষ আশ্রয়
যখন আমরা
অনেক বেশি বুড়ো হবো
কৌশলে তোমার
হাতে আমি খুন হবো,
আর খুনের
মামলায় তোমাকেই ফাঁসাবো
যাতে তোমার
হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
যানি তুমি
কষ্ট পাবে আর প্রচুর বকবে আমাকে
বলবে কি
বেঈমান বিশ্বাসঘাতক ছিলাম আমি
কিন্তু আমি
এতে ভীষণ খুশী
অন্তত তোমায়তো
একটা
নিরাপদ আশ্রয়
দিতে পারবো।
জানো আমার
খুব ভয় করে
আমি মরে
গেলে আমাদের সন্তানেরা
তোমায় কি
আমার মতোই যত্ন করবে!
নাকি মূল্যহীন
বয়স্ক মানুষ ভেবে
তোমাকে ফেলে
আসবে বৃদ্ধাশ্রমে?
এ সমাজ আজ
বড়ো নিষ্ঠুর নিয়মে বেঁধে গেছে
কেউ মরে
গেলে লাশ দেখতে আসে
লাশের কি
লাগবে যেমন কাফন আতর আর কতো কি!
লাশের প্রয়োজন
মেটাতে কেমন ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
যখন বৃদ্ধ
মানুষটি একা বেঁচে ছিলো
তখন কেউতো
বসেনি পাশে।
আমিযে তোমায়
সবসময় রাখতাম আগলে
আমি মরে
গেলে তোমায় কে দেখবে?
এই সব ভেবে
আরো অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে।
যদিও আমাদের
সন্তানেরা ওমন নির্দয় হতে পারেনা
ওরাতো তোমার
আদর্শেই বেড়ে ওঠা।
তবু ভয় হয়,
ওরা কি পারবে?
আমার মতো
তোমাকে আগলে রাখতে!
৬
পুড়া গন্ধ
খুব কাছ
থেকেই একটা পুড়া গন্ধ আসছে
নিজের হাতে
জ্বলন্ত সিগারেটের গন্ধ
আর রান্না
ঘর থেকে আসা তরকারি পুড়া গন্ধ।
বাংলার আকাশে
বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে
শুধুই নতুন
নতুন পুড়া উদ্ভট গন্ধ
কতখন নাক
ধরে রাখা যায় বন্ধ?
একদিক থেকে
ভেসে আসছে
নতুন রাস্তা
বানানোর পিচঢালা গন্ধ
অপরদিকে
রাজপথে টায়ার পুড়ার গন্ধ।
আমি গন্ধ
পাচ্ছি কারো ক্ষুধার জ্বালায়
পেটের নাড়ী
পুড়া গন্ধ
চাকুরির
জন্য দ্বারেদ্বারে ঘুরা
বেকারের
স্বপ্ন পুড়া গন্ধ।
গন্ধ পাচ্ছি
কোথাও ধাও ধাও করে জ্বলা
পরকীয়ায়
জেরে সংসার পুড়া গন্ধ
সাথে অবুঝ
শিশুটির ভাগ্য পুড়ার গন্ধ।
আমি গন্ধ
পাচ্ছি কিশোর কিশোরীর
মন পুড়া
গন্ধ
কারো কারো
একাকিত্বের বিছানায়
যৌবন পুড়া
গন্ধ।
এখানে গন্ধ
ওখানে গন্ধ
চারিদিকে
আজ বিভৎস গন্ধ
গ্রামে গন্ধ
শহরে গন্ধ
মানুষের
ভেতর বিবেক পুড়া গন্ধ।
হঠাৎ কারখানা
আগুনে পুড়া গন্ধ
আন্দোলনে
পুলিশের গুলির ধুয়ার গন্ধ
কেরোসিনের
গন্ধ পেট্রোলের গন্ধ
বিক্ষোভ
মিছিলে মানুষ পুড়ার গন্ধ।
উপরে গন্ধ
নিচে গন্ধ
আদালতে আইন
পুড়া গন্ধ
ভেতরে গন্ধ
বাহিরে গন্ধ
সংসদে পাই
গনতন্ত্রের পুড়া গন্ধ।
পূর্বে গন্ধ
পশ্চিমে গন্ধ
উত্তর দক্ষিন
সবদিকে গন্ধ
চিতায় জ্বালানো
লাশের গন্ধ
কালো ধুয়ায়
ইট পুড়া গন্ধ।
কোথাও এসিডে
ঝলসানো
মাংস পুড়ার
গন্ধ
কোথাও গার্মেন্টসের
শ্রমিকদের
জীবন পুড়ার
গন্ধ।
গ্যাস পুড়া
গন্ধ বিদ্যুৎ পুড়া গন্ধ
কাঁচাবাজারে
দিনমজুরের পকেট পুড়া গন্ধ
প্রেমে বিশ্বাস
আর লজ্জা পুড়া গন্ধ
সমাজে মানবতা
পুড়া গন্ধ।
গন্ধ গন্ধ
গন্ধ --------
কতশতো হাজার
স্বাদের নতুন নতুন গন্ধ
বাংলার মাটিতে
আজ শুধুই পুড়া পুড়া গন্ধ।