২৩শে জুন, ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

  
২৩শে জুন, ঐতিহাসিক পলাশী দিবস 

    শাহেদুজ্জামান শাহেদ


   আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে ব্রিটিশদের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রহসনের যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার  অস্তমিত হয়।

   মীরজাফর-ঘষেটি বেগমরা সেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কুশীলব।  প্রহসনের যুদ্ধে পরাজয় ঘটে বাংলা, বিহার ও ওডিশার নবাব সিরাজউদ্দৌলার। 

   ইতিহাসবিদ মোবাশ্বের আলী তার ‘বাংলাদেশের সন্ধানে’ গ্রন্থে লিখেছেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রায় লাখ সেনা নিয়ে ক্লাইভের স্বল্পসংখ্যক সেনার কাছে পরাজিত হন মীর জাফরের মোনাফেকিতে। অতি ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠরোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি এই যে, মীর জাফররা বার বার গোর থেকে উঠে আসে। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুর আগে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে নবাবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারি করে যান। নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসেন। নবাবের খালা ঘষেটি বেগম ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান।

   সেনাপতি মীর জাফর আলি খান, ধনকুবের জগত শেঠ, রাজা রায় দুর্লভ, উমিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। ধূর্ত ইংরেজরা সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে চন্দন নগরের ফরাসিদের দুর্গ দখল করে নেয়। এরপর ১৭৫৭ সালের ১৭ জুন ক্লাইভ কাটোয়ায় অবস্থান নেয়। নবাব ২২ জুন ইংরেজদের আগেই পলাশী পৌঁছে শিবির স্থাপন করেন। ২৩ জুন সকাল ৮টায় যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে।


হায় পলাশী!

এঁকে দিলি তুই জননীর বুকে কলঙ্ক -কালিমা রাশি,

হায় পলাশী! 

আত্নঘাতি স্বজাতি মাখিয়া রুধির কুমকুম্

তোরই প্রান্তরে ফুটে ঝ'রে গেল পলাশ কুসুম।

তোরই গঙ্গার তীরে পলাশ-সকাশ

সূর্য্য ওঠে যেন দিগন্ত উদ্ভাসি।।

  ---- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম 


ঐতিহাসিক ম্যালেসন লিখেছেন,

“সিরাজউদ্দৌলা তার প্রভুর (আলিবর্দি) সাথে বিধাসঘাতকতা করেননি ও দেশকেও বিক্রয় করেননি।…ক্লাইভ অপেক্ষা সিরাজের মানমর্যাদা অনেক উচ্চে। মর্মস্পর্শী নাটকে প্রতারণার আশ্রয়গ্রহণকারী সকল প্রধান নায়কদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম।”


  যে মানুষটির সাথে বাঙালি জাতির ভাগ্য গাথা হয়ে গেছে তিনি হলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। আগ্রাসী কূটকৌশলী ইংরেজ ও দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের হাতে নবাবের পতন কেবল একটি ব্যক্তির পতন ছিলো না, উনার পতনের সাথে সাথে আমাদের জাতিরও পতন ঘটে। 

   পলাশী যুদ্ধে সিরাজ বিজয়ী হতে পারেন নি। কিন্তু গ্লানিও পাননি। তবে পলাশীর যুদ্ধে যারা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ইংরেজদের জিতিয়ে দেন পরবর্তীতে তাদের সকলের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিক এবং করুণভাবে। মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক থাকবে হবে ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকেও। নবাবের বীরত্বের অধ্যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহনমান থাকবে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সততা, দেশপ্রেম, আদর্শ, চেতনা, ভালোবাসা আজও বাংলার দেশপ্রেমী প্রতিটি হৃদয়কে অনুপ্রাণিত করে।

   কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন,

"কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,

বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।"

    মীরজাফরেরা দূরিভুত হয়ে সিরাজউদ্দৌলার মত দেশপ্রেমিকে দেশ ভরে উঠুক।

Post a Comment

Previous Post Next Post