মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ/ Murshidabad Travel

ঘড়িঘর

  আজিজুল হাকিম   

 

       সেদিন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা বেলা। সারা দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। রাস্তা ঘাট ফাঁকা। মাথার উপরে ঘন কালো মেঘগুলি খেলে বেড়াচ্ছে। তবুও গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম হাজারদুয়ারির মাঠ। লক ডাউনের জন্য সমস্ত মাঠ খাঁখাঁ করছে। কেবল সামান্য কিছু লোক ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই মাঠে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম ঘড়িঘরের দিকে। চারিদিকে বিভিন্ন ফুলের লতাপাতায় রাস্তা আর তার চারিদিক জঙ্গলের আকার ধারণ করেছে। লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে পর্যটক না আসায় সেই ঝোপঝাড়গুলো পরিষ্কার করা হয়নি। তাছাড়া ঘন বর্ষার মায়াবী ছোঁয়ায় এসব ঘাছগুলি সবুজ আনন্দে উৎফল্লিত হয়ে উঠেছে।


(লকডাউনের সময় তোলা ছবি) 

       আমি এক-পা দু-পা করে ঘড়িঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই একজন ছুটে এসে বললেন, “ওদিকে যাবেন না। এসব জঙ্গলে বড়বড় সাপ আছে।”

       আমি লোকটির দিকে তাকালাম। বললাম, “আপনি কে?” উনি বললেন, “আমি একজন কর্মচারি। হাজারদুয়ারি আর এর চারিপাশ দেখার জন্য আছি। আপনি এখান থেকে চলে আসুন।”

       আমি উনার পিছুন পিছুন কিছুটা গিয়ে মাঠের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গায় বসলাম। মুখটা আমার ঘড়িঘরের দিকে। হলুদ রঙে সুশোভিত হয়ে আছে ঘরটি। এর উত্তর দিকে ইমামবাড়া, দক্ষিন দিকে হাজারদুয়ারি। পূর্বে কিছুটা খোলা মাঠ। পশ্চিম দিকে বাচ্চাওয়ালী কামান আর তার পশ্চিমে মদিনা শরীফ।

     (লকডাউনের আগের তোলা ছবি ) 

       এই টাওয়ার বা ঘড়িঘরটি বেশ উঁচু এবং স্থাপত্য শিল্পের জাঁকজমকপূর্ণ এক সুন্দর উদাহরন। প্রদীপ শিখার মতই অলঙ্করণ উদ্ভাসিত হচ্ছে। এই ঘরটি বড় ঘণ্টা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর যখন ঘড়িটি চালু ছিল তখন অনেক দূর থেকে এর শব্দ শুনতে পাওয়া যেতো। ঘরটি চারকোণা আঁকারে মাটি থেকে কিছুটা উপরে গিয়েছে। তার উপরে চারিদিকে ঢালের মতো নকশা এঁকে চালা নামানো আছে। তার উপরে চার কোনায় চারটি সিংহের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলি সবই চুনসুরকি দিয়ে বানানো। তার উপরে ঘড়িঘর। সেই ঘড়িঘরের উপরে ঘড়ি স্থাপন করে রাখা হয়েছে। ঘড়ির মুখটি আছে পশ্চিম দিকে। বাকি তিন দিকে বড় বড় গোলাকার ছিদ্র। সেই ছিদ্র দিয়ে ঘড়ির ঘণ্টার শব্দ বহু দূরে ভেসে যেতো। তার উপরে খিলানযুক্ত ঘর আর তার উপরে ভারি সুন্দর গোলাকার গম্বুজ। এটিকে ‘মুর্শিদাবাদের বিগ বেন বা Big Ben Of Murshidabad’ বলা হয়।          

       সেদিকে তাকাতে তাকাতেই আমি চলে গেলাম অতীত ইতিহাসের দিকে। এই ঘড়িঘরটি স্থাপত্য শিল্পী মি. কোল ম্যাকলিওড এর তত্ত্বাবধানে সাগর মিস্ত্রী তৈরি করেছেন।

       আমি বেশ কিছুক্ষণ সেই ঘড়িঘর বা Big Ben of Murshidabad-এর দিকে তাকিয়েই ছিলাম। এমন সমই ওই ব্যক্তি এসে বললেন, “সন্ধ্যা হয়েছে। আপনার আর এখানে থাকা হবে না। চলুন।”      

    

Post a Comment

Previous Post Next Post