কবিতা লিখতে হলে....

 







কবিতা লিখতে হলে....

     কলমে: আবির

    টি.এস. এলিয়টের লেখা একটি প্রবন্ধ হলো “ট্র্যাডিশন এন্ড দ্যা ইন্ডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্ট” (Tradition and the Individual Talent by….  Thomas Stearns Eliot) বইটিতে বলা হয়েছে একজন লেখকের কি কি গুনাবলী থাকা উচিত সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—

    ক) এলিয়ট বলেন যে-লেখালেখিতে ঐতিহ্য শব্দটাকে ইংরেজি সাহিত্যে সাধারনত নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করা হলেও একজন কবিকে তাঁর  সাহিত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে ভাল ধারনা রাখতে হবে।

    খ) নতুন কোন কবিকে পূর্ববর্তী যত কবি আছেন তাঁদের কবিতা পড়তে হবে। —–তাঁদেরসবার কবিতা পড়ার পর নব্য কবি তাঁর নিজস্ব মেধা দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন, যা আগে কোন কবি করেন নি। যেমনঃ ভালবাসা এমন একটি বিষয় যা নিয়ে যুগেযুগে কবি সাহিত্যিকরা লিখে গেছেন। কিন্তু তাতে কি? এলিয়ট ভালবাসাকে প্রকাশ করেছেন সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তাঁর “দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড” কবিতায়। প্রকাশ ভঙ্গিতেও রয়েছে নতুনত্ব, খন্ড খন্ড আকারে তিনি আধুনিক বহুগামী প্রেমকে এঁকেছেন।

    গ) নব্য কবি পুরনো বিষয়কেই তুলে ধরবেন কিন্তু সেটা হবে তাঁর সমসাময়িক চিন্তা ভাবনা সমৃদ্ধ। প্রেম আগেও ছিল। এখনো আছে। কিন্তু এলিয়ট দেখিয়েছেন তাঁর সময়কার প্রেমকে যা শুধু শরীরের ক্ষুধা মেটাতো, এতে মনের কোন সংযুক্তি ছিল না।

    ঘ) এলিয়টের মতে-কবিতা পড়ার পূর্বেই কবির সম্পর্কে কোন ভাল মন্দ ধারনা করা যাবে না। কার কবিতা সেটা না ভেবে আগে কবিতাটাই পড়া উচিত। তারপর সেটার ভালমন্দ বিচার করে কবির বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।

    ঙ) কোন কবির দু একটা কবিতা ভাল মানেই তাঁর সব কবিতা ভাল হবে, এমন ভাবাটাইভুল। কবিকে দিয়ে নয় বরং কবিতা কেমন তার ওপরেই কবিতার ভাল মন্দ বিচার করতে হবে। তাতে করে একেক কবির একেক কবিতা ভাল লাগবে।

    চ) কবিতা লিখতে চাইলে আপনাকে আগে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। শুধু নিজের কথা নয় বরং পুরো মানব জাতির মনের কথা আপনাকে কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিন্তু নিজেকে অতিক্রম করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সেটা করতে হলে অন্যান্য অনেক কবির কবিতা পড়তে হবে। তাহলেই আপনার ভেতরে নতুন ধারনার সঞ্চার হবে। অতঃপর এই নতুন ধারনাকে আপনার ভেতরের নিজস্বতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলবেন।

    ছ) আগের কবিদের লেখাকেই কাটছাট করে নিজের মত করে চালিয়ে দিলে কবি হওয়া যায়না। সেই কবিই সব থেকে সফল যিনি নিজের এবং নিজের সৃষ্টির মধ্যে দূরত্ব স্থাপন করতে পারেন। অর্থাৎ নিজের লেখাতে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ না করে বরং অন্যের অনুভূতিকে বুঝতে পেরে তা প্রকাশ করেন।

জ) কবিকে আগের যুগ সম্বন্ধে জানতে হবে এবং আগের যুগের সাথে বর্তমানে কতটুকু পার্থক্য সেই সমসাময়িকতাটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেইসাথে আপনার কবিতায় নতুনত্ব থাকতে হবে। যেমনঃ পূর্বে অনেক কবিই সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এলিয়ট দেখিয়েছেন হলুদ রঙের তুষার সন্ধ্যে। মানুষের মনের অশুদ্ধতায় প্রকৃতিও নোংরা, হলদেটে হয়ে গেছে।

    ঝ) কবিদের কল্পনাশক্তি থাকতে হবে প্রখর। যেমনঃ কীটস তাঁর কবিতায় নাইটিঙ্গেল পাখির এমন  গুন বর্ণনা করেছেন, যা সত্যিকার অর্থে পাখিটির নেই। মিলটন “প্যারাডাইস লস্ট” এ দোযখের বর্ণনা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনো দোযখ দেখেন নি। পুরোনো গ্রন্থ থেকে তিনি বিষয়টা নিলেও প্রকাশ করেছেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে, কারও অণুকরণে নয়।

    ঞ) একজন খারাপ কবির লক্ষণ হল, তিনি সেই বিষয়টাতে বেশি জোর দেন, যেখানে দেবার কথা নয়। আর সেটাতে জোর দেন না, যেটাতে দেবার কথা। (সংগৃহীত)

সবশেষে কবিকে নিজের আমিত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বজনীন হতে হবে। তাঁর লেখায় থাকতে হবে পূর্বের কবিদের থেকে ভিন্নতা এবং নতুনত্ব। নিজস্ব আবেগের উর্ধ্বে উঠে তাঁকে ভাবতে হবে এবং লেখার বিষয় বস্তু হবে আকষর্ণীয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post