বহুগামী আমি-৯৫-সৈয়দ আসরার আহমদ

 


বহুগামী আমি

      সৈয়দ আসরার আহমদ

 পর্ব-৯৫  

 

       শুকরিয়া নাজমুল, তোমার কল্পকথার ধারাবিবরণীতে আমাকে সুযোগ করে দেবার জন্য৷
        পাঠকবন্ধু ও বান্ধবীরা প্রথমেই আপনাদের শুভেচ্ছা ও অফুরান শুভ কামনা জানাই৷ আমি আত্মভোলা ভাবাবেগ তাড়িত যৌবন উত্তীর্ণ বার্ধক্যের শেষ স্টেজে পৌঁছানো অবক্ষয়ে বিধ্বস্ত প্রায় এই সমাজের একজন প্রতিনিধি৷ আমি সারাজীবনই ভুল করে গেলাম৷ আর সেই ভুলের মাশুল বইলাম৷ মানুষকে সরল মনে বিশ্বাস করে কতবার যে ঠকেছি তার হিসেব নেই৷ আপনাদের সেই সব দুঃখজনক ঘটণার কথা যেমন জানাবো তেমনই আনন্দঘন কিছু উজ্জ্বল মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব৷
  মাশুমের সঙ্গে কথা বলে তার টিউটোরিয়ালে ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস,ইংরেজি, আর বাংলা পড়ানোর দায়িত্ব নিলাম৷ মাশুম বলল, আপনি একাদশ,দ্বাদশ ও বি.এ, অনার্সের স্টুডেন্টদের ইতিহাস পড়াবেন৷ নবম,দশম শ্রেণীর ছাত্রদের ইংরেজি ও বাংলা পড়াবেন৷ সপ্তাহে তিনদিন আপনার ক্লাশ থাকবে৷ সেইদিনগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় ক্লাশ শুরু হবে৷ আপনাকে মাসে পাঁচশো টাকা বেতন দেব৷ প্রতিমাসে একটা নির্দ্দিষ্ট দিনে পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেবেন৷ প্রশ্নপত্র আপনি করবেন৷ তার আগে আপনাকে পাঠ্য পুস্তকগুলো আমি দিয়ে দেব৷ একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন৷  পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের সিলেবাসে ব্যাপক পার্থক্য আছে৷
আমি বললাম, থাকাটা স্বাভাবিক৷
এরমধ্যে শরিফ সাহেবের মেয়ে সেলিনা পরোটা আর গরুর গোস্তের ভুনা এনে সোফার সামনে লো টেবিলে রেখে ওর আব্বাকে ডেকে বলল, আব্বু আপনারা খেয়ে নিন৷ অফিস থেকে আসছেন নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে৷
আমরা তিনজনের খাওয়া হতেই সেলিনা একটা ট্রেতে চায়না ক্লের কেটলি ও তিনটে কাপ নিয়ে এলো৷
মাশুম খুবই মিশুকে ছেলে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল৷ অনেকদিন পরে বাংলাদশে এক অনাত্মীয়ের বাড়িতে এসে মনটা ভাল হল৷ সেলিনা আমাকে বলল, ভাইয়া ভাবীজানকে নিয়ে আসবেন৷
- জ্বি, ইন শা আল্লাহ আনবো৷
শরিফ সাহেব P.W.D.র তার বন্ধু এস্টেট ম্যানেজার মাজহারুল সাহেবকে বলে সরকারি আবাসনে আমার নামে একটা কোয়ার্টার allot করে দিলেন৷
নতুন সরকারি আবাসনের দোতলায় কোয়ার্টারে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম ৷ বাড়িভাড়ায়
  বেতনের অর্ধেকের বেশি টাকা বেরিয়ে যেত তার থেকে রেহাই পেলম ৷ চাকরি আর কোচিং সেন্টারে যা আয় হচ্ছিল তাতে টেনেটুনে দিন চলে যাচ্ছিল৷ আরও উপার্জনের তাগিদ ছিল৷ কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷ মাশুমের বোন শেলীর স্বামি টিপুর সঙ্গে পরিচয় হল৷ সে একটা পেট্রল পাম্পে ক্যাশিয়ার ছিল৷ একদিন আমার অফিসে এসে আমাকে দাওয়াত দিয়ে বলল, দেলোয়ার ভাই, আমি রাত আটটায় গাড়ি নিয়ে আসছি শেলীও আমার সাথে আসবে৷ আপনি ভাবিকে বলবেন, ড্রেস আপ করে রেডি হয়ে থাকতে৷ একটা চাইনিজ রেস্তোঁরায় আমরা ডিনার খাবো৷
- এ সবের কি দরকার৷
- আমার ওয়াইফ ভাবির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছুক তাই ও বলেছে আপনাদের চাইনিজ রেস্তোঁরায় খাওয়াতে৷ আর বাকি প্রয়োজনীয় কথা রেস্তোঁরায় আলোচনা করবো৷
- কি প্রয়োজনীয় কথা?
- আমার এখন ডিউটিতে যাবার সময় হয়েছে, আসছি; তখন বলব বলে টিপু চলে গেল৷
- আচ্ছা তাই হবে৷
রাত ঠিক আটটায় টয়োটা গাড়ি নিয়ে হাজির হল আমার বাসায়৷ আমার স্ত্রী নাসরিনের এখানে কোন বন্ধু নেই মাশুমের বোন শেলী তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে শুনে খুব খুশি হয়েছিল৷ তবে সে ড্রেস করে নি৷ কেন না টিপু আসে কিনা তার ঠিক নেই অকারণে আগে থাকতে সেজেগুজে থাকবে ভেবে নাজনিন কাপড় চেন্জ করে নি৷ নীচে গাড়ি এসে থামার শব্দ ও দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে বলল, তোমার বন্ধু এসেছে৷
আমি গিয়ে দরজা খুলতে টিপু সালাম জানাল৷ আমি সালামের জবাব দিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিতেই টিপুও তার ডান হাত বাড়িয়ে দিল৷ আমাদের নতুন কোয়ার্টারে দুটো সিঙ্গেল খাট ছাড়া চেয়ার,টুল,টেবিল কিছুই কেনা হয় নি৷ দুটো বাঁশের মোড়া ছিল৷ একটা তাকে বসতে দিয়ে অন্যটাই আমি বসলাম৷ নাজনিন চা বানাতে যাচ্ছিল টিপু তা দেখে বলল, ভাবি চা বানাবেন না আমি এই মাত্র খেয়ে এলাম৷ আপনি ড্রেস চেন্জ করে নিন৷
আমাদের এই কোয়ার্টারে দুটো ছোট ছোট বেডরুম আর সামনে ডাইনিং স্পেস৷ ছোট্ট কিচেন ও বাথরুম৷ নাসরিন একটা রুমে গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে মুখে স্নাে দিয়ে রেডি হয়ে এলো৷ নাসরিন খুবই রূপবতী ওকে দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছিল৷ আমি আমাদের পুত্র ববিকে প্যান্ট শার্ট পরিয়ে দিয়ে জুতোর ফিতে বেঁধে দিলাম৷ নাসরিন ববির মুখে স্নো দিয়ে মুছিয়ে দিল৷ ববিকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল৷ আমি অফিস থেকে এসে প্যান্ট শার্ট পরে বসেছিলাম৷ নাসরিন বলল, তুমি শার্ট প্যান্ট বদলে নাও৷
- না কি দরকার?
  আজকেই তো এটা পরেছি৷
আমরা চারজনে দরজায় তালা লাগিয়ে সিঁড়ির মুখে যেতে টিপু ববিকে কোলে তুলে নিল৷ আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম৷ দশ মিনিটের মধ্যে একটা চাইনিজ রেস্তোঁরার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টিপু আমাদের গেটটা খুলে দিল৷ আমরা তিনজনে নেমে টিপুর সঙ্গে আধাঅন্ধকার রেস্তোঁরার একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম৷ এটাই আমার জীবনের প্রথম বাংলাদেশে কোনও চাইনিজ হোটেলে খেতে যাওয়া৷ মিউজিক সিস্টেমে ইংরেজি গানের সুর বাজছে৷ কিছুক্ষণ পরে স্টুয়ার্ট অর্ডার নিতে এলে টিপু ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন আর চিংড়ির মালাইকারি চারজনের জন্য অর্ডার দিচ্ছিল৷ আমি নিষেধ করে বললাম, তিনজনের জন্য অর্ডার দাও৷
- কেন বাবুর জন্য দেব না?
- আরে পাগল নাকি? ববি কতটা খাবে? ওর জন্য আলাদা নেবার প্রয়োজন নেই৷
টিপু খাওয়া শুরু করতেই বলল, আমি পেট্রল পাম্পে কাজ করি৷ বাংলাদেশ সরকার নতুন লুব্রিকেন্ট নীতি চালু করে পুরনো লুব্রিকেন্ট কমিটিকে পুনর্গঠিত করে নয়া লুব্রিকেন্ট কমিটি ঘোষণা করেছে৷ ওই কমিটির চেয়ারম্যান মিনহাজউদ্দিন সরকার তোমাদের বাঁকুড়া জেলার লোক৷ তুমি যদি তাঁকে বলে আমাদের শেলী ট্রেডার্সের নামে ডিলারশিপ নিতে পারো তাহলে মাসে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা তুমি লভ্যাংশ পাবে৷ আমি তোমাকে শেলী ট্রেডার্সের পার্টনার করে নেবো৷ আমার ট্রেড লাইসেন্স, আই.টি. ফাইল আছে৷ শোরুম ও গোডাউন আছে৷
- কঠিণ কাজ৷ মিনহাজউদ্দিন সাহেব তো আমাকে চেনেন না আমিও তাকে চিনি না৷ তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে হবে৷
- তাহলে একদিন ঢাকা যেতে হবে৷
- যাওয়া যাবে৷
টিপু একদিন সন্ধ্যেয় তার স্ত্রী শেলীকে নিয়ে আমাদের বাসায় এলো৷ টিপুদের সঙ্গে টিপুর ভাগ্নে ষোল সতের বছর বয়সের সফিকুলও এসেছিল৷ ছেলেটি কোরআনে ষোল পারা পর্যন্ত হিফজ করে ছেড়ে দিয়েছিল৷ সে যে একটা বখাটে টাইপের ছেলে তা প্রথমে বুঝতে পারি নি ৷ নোয়াখালির লক্ষীপুরে তার বাড়ি৷ তার আব্বা পি ডব্লু ডি-তে চাকরি করেন৷ সে আর পড়াশোনা করে না৷ মামার বাড়িতে এসে থাকে খায় দায় গান গায় আর কি! ছেলেটি সময়ে অসময়ে আমার বাড়িতে চলে আসত৷ নাজনিন ওকে কোরআন পড়ে শুনাতো আর ভুল উচ্চারণ সংশোধন করে নিত৷ টিপুর প্রচুর রোজগার মামার কাছ থেকে টাকা এনে ফুটাত৷ প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসত ববির জন্য চকলেট, পেস্টি, কেক মিস্টি খেলনা নিয়ে আসত৷ তার ছেলেকে বাংলাদেশে কেউ ভালবাসার মানুষ ছিল না৷ সফিকুল ববিকে ভালবাসত বলে নাসরিন সফিকুলকে খুব স্নেহ করত৷ একদিন নাসরিন আমাকে বলল, সফিকুল সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে চাচ্ছে আমি যাবো?
- আমার তো তোমাকে সিনেমা দেখানোর মতো পয়সার সংস্থান নেই৷ তুমি চাইলে যেতে পারো৷
সরল বিশ্বাসে আমি অনুমতি দিয়েছিলাম৷ আমার অন্ধ বিশ্বাস ছিল নাসরিনের উপরে৷ এখন একেক বার
  মনে হয় সেই অনুমতি দেওয়াটা বিরাট ভুল হয়েছিল৷ কিন্তু নাসরিনের চারিত্রিক দুর্বলতা যে ছিল না সে বিষয়ে আমি এখনও দৃঢ় বিশ্বাসে অটল৷
ববির জন্মদিন উপলক্ষ্যে সেলিনা,মাশুম, শেলী,টিপু,আমার বন্ধু কামালসহ কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম৷ সেদিন সফিকুল ববির জন্য চকোলেট না এনে একটি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছিল৷ তারপর ছোট ঘরটায় ঢুকে নাসরিনকে ফুলটি দিয়ে ঠোঁটে কিস করেছিল৷ আমি তা দেখতে পেয়ে ভদ্রতার খাতিরে কোন scene create করি নি৷ অনুষ্ঠানের শেষে নাসরিনকে জিজ্ঞেস করলাম, সফিকুল তোমাকে কিস করল তুমি ওকে এক চড় মারলে না কেন?
জবাবে নাসরিন বলেছিল, দেখো তো অসভ্য ছেলেটার বেয়াদপী৷ লোকজন ছিল বলে আমি কিছু বলি নি৷
নাসরিনের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল৷ আমার উচিত ছিল পরের দিন সফিকুলকে ঘরে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া৷ আমি তা না করে যে বিরাট ভুল করেছিলাম তার সেই ভুলের মাশুল আমাকে পরে দিতে হয়েছিল৷
   পাঠক বন্ধুরা তো জানেন, ভুল করলে তার খেসারত দিতে হয়৷ এই প্রবাদ বাক্যটি যে সত্য তা বারবার প্রমাণিত হয়৷
টিপু একদিন আমার অফিসে এসে বলল, পার্টনারশিপ ডিডের ড্রাফট রেডি করেছি৷ তুমি তো সরকারি চাকরি কর তাই ভাবির নাম পার্টনার হিসেবে রেখেছি৷ আজ সন্ধ্যায় কাগজটা নিয়ে যাব তুমি পড়ে দেখবে৷ আগামীকাল স্ট্যাম্প পেপারে agreement টা টাইপ করে সই সাবুদ করে নিয়ে রেজিস্ট্রি করে নেব৷ তারপর ঢাকার টিকিট কাটব৷
  দুদিন পরে পার্টনার শিপ ডিড রেজিস্ট্রি করে টিপু বলল, আজ ঢাকার টিকিট কাটছি৷ কাগজপত্র সব ঠিক করে নিয়েছি৷
আমি বললাম, কিন্তু বউ ছেলেকে কে দেখবে?
- সেসব তোমাকে চিন্তা করতে হবে না আমি আমার মাকে বলে দিয়েছি৷ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সব প্রতিদিন লোক মারফৎ পৌঁছে দেবেন৷
আমি একজন অপরিণামদর্শী হিতাহিত
  ও বাস্তব জ্ঞানশূন্য ভাবাবেগ তাড়িত মানুষ৷ আমি যে, নাসরিন ও ববিকে একা রেখে ঢাকায় যাব ওদের বিপদ আপদ যে হতে পারে তার চিন্তা মোটেই মাথায় আসে নি৷ অসুখ বিসুখ হলে কে দেখবে তাও ভাবি নি৷ পাশের কোয়ার্টারে ইনকাম ট্যাক্সের ইমদাদ সাহেবকেও বলে আসা উচিত তাও মাথায় আসে নি৷ ওর ফোন নম্বরটিও জেনে আসিনি৷ ভদ্রলোক কুমিল্লার সজ্জন মানুষ৷ ওর ছেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ত৷ সে খুব ভাল ছেলে আমার সঙ্গে দাবা খেলতে আসত৷
যা'হোক নাসরিনকে একা রেখে আমি আর টিপু ঢাকা যাওয়ার আগে কেবলমাত্র অফিসে শরিফ সাহেবকে বলে গেলাম৷ উনি বলছিলেন, কাজটা করে ফিরবে তাতে যতদিন লাগে আমি অফিসটা ম্যানেজ করে দেব৷
ঢাকায় পৌঁছে টিপু ওর আত্মীয় বাড়ি চলে গেল৷ আমি আমার বন্ধুর ফিরদৌসের বাড়ি গেলাম৷ পরের দিন গুলিস্তানে বাংলাদেশ লুব্রিক্যান্ট কমিটির অফিসে গিয়ে মিনহাজ সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য শ্লিপ জমা দিলাম৷ উনি মিটিংয়ে ছিলেন৷ দুপুর একটায় আমাদের ডাকলেন৷ আমি আর টিপু তাঁর চেন্বারে ঢুকে সালাম দিতে উনি বসতে বললেন৷ আমি তাঁর সুঠাম দেহ সুন্দর চেহারা দেখে অত্যন্ত খুশি হলাম৷ রাজপুত্রও কিছুই নয় তাঁর কাছে৷ উজ্জ্বল মুখমণ্ডলে বড়ো বড়ো চোখ দুটির মাঝে টিকালো নাক বিধাতা অনেক যত্নে আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় করে তাঁকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন৷৷ ঠোঁটের উপরে কালো চুলে সুসজ্জিত গোঁফ৷ দেবানন্দের মতো চুলের ড্রেসিং৷
তিনিই জানতে চাইলেন আমরা কি জন্য এসেছি৷
টিপু আমার দিকে চাইল৷ আমি তাঁকে আমাদের শেলী ট্রেডার্সের নামে ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম৷
তিনি বিচক্ষণ লোক আমার মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ইন্ডিয়া থেকে কবে এসেছ? বাড়ি কোন জেলায়?
আমি বললাম, বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসে৷
উনি একটা ওহ শব্দ উচ্চারণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমাদের বাড়ি বাঁকুড়ার রোলে ছিল৷
- রোলে? ও আল্লাহ৷
পায়ের নীচে কলিং বেল টিপতেই পিওন এসে বলেন, সা'ব কি আদেশ করুন৷
- কফি আর এগ টোস্ট এদের দাও৷
স্বদেশের মানুষকে পেয়ে কি যে খুশি হয়েছিলেন তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব৷ কথা বলতে বলতে আমাকে তাঁর একটা কার্ড দিয়ে বললেন, সম্ভব হলে আমার বাসায় আসবে৷ আর আমি দেখছি তোমাদের কাজ কিভাবে করা যায়৷ এখন তো বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা সব ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে৷ খোদ রাস্ট্রপতি, উপ রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন আসছে৷ পাকিস্তান আমলে এসব ছিল না৷ জঘন্য পরিস্থিতি৷ আমি ভেবে দেখব তোমাদের ডিলারশিপ কিভাবে দেয়া যায়৷ প্রয়োজনে দুয়েকজন M.P. সুপারিশ জোগাড় করতে পারবে?
আমি টিপুর দিকে চাইলাম৷ টিপু বলল, পারা যাবে৷
- ঠিক আছে তোমরা তোমাদের দরখাস্তের উপরে দুজন M.P.কে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে নিয়ে আসবে৷
আমরা কফি আর এগ টোস্ট খেয়ে তাঁকে কদমবুসি করে চলে এলাম৷
টিপু বাইরে এসে বলল. কদমবুসি করে তো অর্ধেক কাজ হাসিল করে ফেললে৷ ওখান থেকে বেরিয়ে গুলিস্তানে রাজ্জাক কবরী অভিনীত রংবাজ সিনেমা দেখতে ঢুকলাম৷ এদিকে আমার স্ত্রী ও পুত্র যে কিভাবে আছে তার খোঁজ নিই নি৷

 

স্বতঃ লেখক                       

চলবে (৯৬)

 

Post a Comment

Previous Post Next Post