বহুগামী আমি
সৈয়দ আসরার আহমদ
পর্ব-১০১
পরের দিন সন্ধ্যে
সাড়ে সাতটায় শামিম ভাইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল টিপলাম৷ শামিমভাই আমাকে দেখে খুব
খুশি হলেন৷ তিনি বললেন, শুনেছিলাম তুমি নাকি বাংলাদেশ চলে গিয়েছিলে৷
- হ্যাঁ গিয়েছিলাম
চলে এসেছি৷
- কেন চলে এলে,ভাল
লাগল না?
- না একদমই না৷
- আমি জানলে তোমাকে
যেতে নিষেধ করতাম৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে যাওয়া উচিত হয় নি৷
- দেশের মানুষ ভাল
কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মাওলানা ভাসানি ছাড়া সব জালি, সব দু নম্বরী৷ শেখ মুজিবসহ তাঁর মন্ত্রী পরিষদের
সদস্যদের শতকরা ৯৯ ভাগ বেইমান ঠগ জালিয়াত৷ আর শাসকদলের সব নচ্ছার কমিনা
লোকজন৷
- সে তো বুঝলাম ভাল
কি দেখলে ? বলো৷
- ভাল বলতে নদীমাতৃক
দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সব শ্রেণীর মানুষের আতিতেয়তা অতুলনীয়৷
পশ্চিমবাংলায় যা ভাবা যায় না৷
- তাই?
- হ্যাঁ ভাইয়া ঘরে
মেহমান এলে সেকি সমাদর যা এ বাংলায় অমিল৷
- সে তো তোমার স্বপ্না
ভাবির আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি গিয়ে কিছুটা বোঝা যায়৷
- স্বপ্না ভাবী কোথায়?
ঘরে নেই?
- না সে তার দোকানে
গেছে৷ শ্যামবাজারের দুটো দোকানের মালিকানা আমার শ্বশুর মশায় নিঁখোজ হবার আগে স্বপ্নার
নামে হস্তান্তর করে যান৷ তিনি ওই দুটো বাড়ির মালিকানা স্বপ্নাকে দিয়ে গেছেন৷ দোকান
তো লোক দিয়ে চলবে না চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ বিশ্বস্ত লোকের খুবই অভাব তাই ওকে
যেতে হয়৷
- কখন ফিরবেন স্বপ্না
ভাবী?
দেয়াল ঘড়িটার দিকে
তাকিয়ে শামিমভাই বললেন, সময় হয়ে এসেছে ওর আসার৷
- তুমি চা খাবে?
- না কিস্যু খাবো
না৷ কতদিন পরে আপনাকে দেখতে পেলাম৷ শামিমভাই আমার জন্য একটা চাকরি দেখবেন৷ খুব প্রয়োজন৷
- সে তো জানি বিয়ে
শাদি করে সংসার করেছ৷ উপার্জন ছাড়া চলবে কিভাবে? আমি কতদূর কি করতে পারবো বলতে পারছি
না তবে নিশ্চয় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব৷ আল্লাহ রুজির মালিক৷ তোমার স্বপ্নাভাবির বন্ধু
সেচ মন্ত্রীর স্ত্রী৷ আমার মনে হয় স্বপ্না চেষ্টা করলে একটা কিছু হবে৷
শামিমভাইয়ের কথায় মনে প্রশান্তি এলো৷ আমি বললাম, আপনি স্বপ্নাভাবিকে বলবেন৷
- আগে তুমি বলবে৷
তোমার কথা স্বপ্না খুব বলে৷ তারপরে আমি বলব৷ আমার মনে হয় তোমার সরকারি চাকরি হতে পারে৷
আর যদি তা না হয় তবে একটা ভাল বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা হবে৷
- শামিমভাই যদি সরকারি চাকরি করতে
ঘুষ লাগে তা দেওয়া যাবে৷
- ধুস পাগল তোমার
স্বপ্নাভাবি মন্ত্রীর বউকে বলে চাকরির ব্যবস্থা করবে তাতে আবার ঘুষ লাগবে কেন? এমনিই
হবে৷
শামিমভাইয়ের কথা শুনে খুশিতে বাক্যহীন
হয়ে পড়লাম৷ কি বলব না বলব তা মনে আসছিল না৷ কেবল আমার চোখে মুখে তার স্পষ্ট প্রকাশ
লক্ষ্য করে শামিমভাই বললেন, সরকারি চাকরি হলে ভাল; না হলেও একটা ব্যবস্থা হবে৷
রাত ন'টা পঁচিশ মিনিটে
স্বপ্না ভাবি ফিরলেন৷ আমাকে দেখে কি যে খুশী হলেন তা তাঁর মুখশ্রীতে প্রতিফলিত হল৷
স্বপ্নাভাবি বললেন, কবে ফিরেছ বাংলাদেশ
থেকে?
- বেশ কয়েকদিন হয়েছে৷
- এখানে কখন এসেছ?
- অনেকক্ষণ হয়েছে৷
- চা খেয়েছ? প্রশ্নটা
করে শামিমভাইয়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ওকে চা খাওয়ান নি?
- না৷ আমি চা বানাতে
যাচ্ছিলাম, দেলোয়ার বলল, ভাবি আসলে এক সাথে চা খাবো৷
- ইয়ার্কি করার আর
জায়গা পাও না? বাড়িতে মেহমান এলে আপ্যায়ন করতে হয় জানো না৷
- জানবো না কেন?
ওকে শুধাও আমি মিথ্যা বলছি কি না? তাঁর স্ত্রীর সওয়ালের জবাব দিয়ে শামিমভাই আমার দিকে
মুখ ফেরালেন ৷
আমি বললাম, ভাবি শামিমভাই সত্যিই চা
খাওয়াতে চেয়েছিলেন আমিই খেতে চাই নি৷
- তাই? ঠিক আছে দু
জনে গল্প কর আমি দশ মিনিট পরে চা নিয়ে আসছি৷
স্বপ্নাভাবি পাশের কামরায় চলে গেলেন৷
শামিমভাই বললেন, তুমি তো বিয়ে করেছ ছেলে মেয়ে হয়েছে?
- হ্যাঁ ভাই, দুটো
ছেলে৷
- বাহ খুব ভাল৷ আর
ছেলেপিলে নিও না৷ ওই দুটোকে মানুষ করো৷
- না না আর নেব না৷
এদের ব্যয়ভার বহনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এখন তো আব্বার ঘাড়ে ফেলতে হত কিন্তু নাসরিন
বলল, আমাকে মায়ের কাছে রেখে দিয়ে তুমি কলকাতা যাও৷ একটা সুবিধা আছে নাসরিনের নামে ওর
দাদিজান দশ বিঘা জমি লিখে দিয়ে গেছেন৷ আর পিতার মৃত্যুর পর আরও ছ সাত বিঘা জমি পাবে৷
- যাক শুনে ভাল লাগল৷
তবুও তোমার যতদিন না একটা ব্যবস্থা করতে পারছি আমি শান্তি পাব না৷ জানো না তোমাকে আমি
খুব ভালবাসি?
- সে কি বলতে হবে
ভাইয়া?
স্বপ্নাভাবি ড্রেস চেন্জ করে একটা
ট্রেতে চায়না ক্লের কেটলিতে চা, সুদূৃশ্য মূল্যবান চায়ের তিনটে কাপ, চানাচুর, বিস্কুট
ও মিষ্টি নিয়ে সোফার সামনে লো টেবিলে রেখে শামিমভাইয়ের পাশে বসলেন৷ তাঁর শাড়ির আঁচলের কাপড় টেনে মাথায় দিয়েছেন৷
তা দেখে অবাক হলাম না কেন না শামিমভাই যে ধর্মপরায়ণ তাতে তাঁর স্ত্রীও যে প্রভাবিত
হবে তা অস্বাভাবিক কিছু না৷
চলবে……………….