হাসান আজিজুল হক/Hasan Azizul Huq

 


‘আগুন পাখি’র স্রস্টা হাসান আজিজুল হক চলে গেলেন না ফেরার দেশে

 কলমেঃ আজিজুল হাকিম 

চিরস্তব্ধ হয়ে গেল আগুন পাখির কলম। বাঙ্গলা সাহিত্য জগতের আরও একটি নক্ষত্র পতন ঘটল। গত ১৫ই নভেম্বর ২০২১ সালে ৮২ বছর বয়সে দুই বাঙ্গলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক পরলোক গমন করলেন। তার বিদায়ে দুই বাঙ্গলার সাহিত্য জগতে নেমে এসেছে এক গভীর শোকের ছায়া।

তিনি ১৯৩৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাঙ্গলার বর্ধমান জেলার যবগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ দোয়া বখশ্‌ এবং মাতা জোহরা খাতুন। তিনি ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশান পাশ করেন এবং ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৫৮ সালে থেকে দর্শন-এ সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন।

তিনি যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকেই লেখার জগতে হাতে খড়ি। তারপর রাজশাহী থেকে প্রকাশিত 'চারপাতায়' প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পরে 'সমকাল' পত্রিকা থেকে 'শকুন' নামক গল্পের মাধ্যমে সাহিত্য অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া ‘পূবালী, ‘কালবেলা, ‘গণসাহিত্য’, ‘ছোটগল্প, ‘নাগরিক, ‘পরিক্রম’, ‘কণ্ঠস্বর’, ‘পূর্বমেঘ’ ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন রচনা প্রকাশ পায়।

তাঁর উপন্যাস গুলি হল 'শামুক', 'সাবিত্রি উপখ্যান', 'শিউলি',  'বৃত্তায়ন', 'আগুন পাখি'। 'আগুন পাখি' প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে এবং এই উপন্যাসের জন্য ২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭০ সালে তিনি বাঙলা একাডেমি, ১৯৯৯সালে একুশে পদক, ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্ককার ইত্যাদি পান।  

তাঁর গল্প গ্রন্থগুলি হল সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), রোদে যাবো (১৯৯৫), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭)

এছাড়া তাঁর প্রবন্ধগুলি হল কথাসাহিত্যের কথকতা (১৯৮১), চালচিত্রের খুঁটিনাটি (১৯৮৬), অপ্রকাশের ভার (১৯৮৮), সক্রেটিস (১৯৮৬), অতলের আধি (১৯৯৮), কথা লেখা কথা (২০০৩), লোকযাত্রা আধুনিক সাহিত্য (২০০৫), একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা (২০০৫), ছড়ানো ছিটানো (২০০৮), কে বাঁচে কে বাঁচায় (২০০৯), বাচনিক আত্মজৈবনিক (২০১১), চিন্তন-কণা (২০১৩), রবীন্দ্রনাথ ও ভাষাভাবনা (২০১৪)

তিনি শিশু সাহিত্যে বিচরণ করেছেন। লালঘোড়া আমি (১৯৮৪ সালে প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস), ফুটবল থেকে সাবধান (১৯৯৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গল্প)।

সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

এই বিখ্যাত সাহিত্যিক দীর্ঘদিন অসুখের পর নিজের বাড়িতে রাত প্রায় ৯টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  

Post a Comment

Previous Post Next Post