টেরাকোটার
সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন আজিমগঞ্জ বড়নগরের গঙ্গেশ্বর মন্দির
আজিজুল হাকিম
আজিমগঞ্জ সিটি থেকে
প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে টটো বা অটোতে যাওয়ার পথ। গ্রামের নাম বড়নগর। খুব শান্ত
ও নির্জন পরিবেশে একাকি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে টেরাকোটার সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন - গঙ্গেশ্বর
মন্দির। এটি দুচালা দুচালা করে দুটি কক্ষকে সংযুক্ত করে চার চালার মন্দিরে পরিণত করা
হয়েছে। রাঢ় অঞ্চলের মাটির বাড়ির চালের আদলে এর চালা তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরটি দেখতে
দারুণ সুন্দর। কথিত আছে বর্তমান বাংলাদেশের নাটোরের রানী ভবানী ১৭০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি
সময়ে এই মন্দিরটি তৈরি করেছেন।
এই মন্দিরের বৈশিষ্ট
হল, এই মন্দিরের দেয়ালে এবং স্তম্ভে টেরাকোটার নিদর্শন। টেরাকোটা বলতে কাদাকে বিভিন্ন
ছাঁচে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির নকশা, লতাপাতা-গাছ, বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি তৈরি করে সেগুলিকে
রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। তারপর সেগুলিকে চুনসুরকির মসলা দিয়ে দেয়ালের গায়ে লাগানো
হয়।
এখানে মৃৎশিল্পীদের
স্থাপত্য শিল্পের এক চমৎকার কারুকাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এই মন্দিরের সামনের দিকে চালার
নীচে বিভিন্ন লতাপাতার কারুকাজ মালার মতো করে সাজানো হয়েছে। তার নীচে শিকারের ছবি,
খেজুর গাছের সুন্দর নকশা দেখার মতো। এই মন্দিরে চারটি খিলান যুক্ত তিনটি প্রবেশ পথ
আছে। এই ফটকগুলির উপরে মোট ছয়টি মুখোমুখি ছুটন্ত ঘোড়ার মতো কাল্পনিক কোন হিংস্র প্রাণীর
ছবি পরিলক্ষিত হয়। এই সব জন্তুদের চারিপাশে বিভিন্ন ধরণের ফুল ও লতাপাতা দিয়ে সাজানো
আছে। স্তম্ভগুলির চারিদিকে প্রচলিত রীতিনীতি, তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট,
নারী-পুরুষের রমণ ক্রিয়া, এমনকি অবাক করার বিষয় যে মানুষের সঙ্গে পশুর রমণ ক্রিয়াও
পোড়া মাটির দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। তার সঙ্গে ফুটে উঠেছে তৎকালীন গ্রাম্যজীবনের নারীপুরুষের
চিত্র। সেই সময় পালকীর ব্যবহার যে ছিল তারও সুন্দর প্রতিফলন এই ছবিগুলির মাধ্যমে প্রস্ফুতিত
হয়। এছাড়া ঘোড়ায় টানা গাড়ি, হাতির পিঠে ভ্রমণ, উপঢৌকন বহন, বাংলার নারীদের মাথায় জলের
কলশি এজাতীয় অনেক কিছু চোখে পড়ার মতো। মানুষের জীবনের বিভিন্ন অবস্থা, রামায়ণ মহাভারতের
কাহিনি অবলম্বনে কিছু ছবি অসামান্যভাবে অঙ্কিত হয়েছে। এগুলি সবই পোড়া মাটির তৈরি। ঝাড়খণ্ডের
মুলটি গ্রামের যে টেরাকোটার মন্দির দেখা যায় তার চায়তে এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার
কাজ অনেক সুন্দর ও জীবন্ত দেখায়।