অনুগল্প
ভাঙ্গন
লীন একটি নদীর ধারে
বসে আছে। একাগ্রতা নিয়ে চেয়ে আছে নদীর আশান্ত জলের দিকে। ঢেউগুলি ওপারের পাড়কে ভেঙ্গে
যাচ্ছে অহর্নিশ। লীন নিজের বুকে হাত দিল। সে দেখল, বুকের মাঝে হৃদয় নেই। ও গভীর বিশ্বাসে
রজনীকে খেলতে দিয়ে ছিল। রজনী ওর হৃদয়কে উপড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে খেলার
ছলে ছিঁড়ছে।
~~~~~~~~~
খেলা
মা রান্না
ঘরে ব্যস্ত। বাবা কাজে বাড়ির বাইরে। ললিত ঘরে একা। বয়স আট বছর। উৎসুক মনে আলমারিতে
কি যেন খুঁজতে ব্যস্ত। হঠাৎ নজরে আসে মায়ের শাড়ির তলায় একটা খেলনা। এরকমই একটা খেলনা
সে পাশের বাড়ির টনিকের হাতে দেখেছিল। খেলনা থেকে আগুন ছুটছিল। ফটাক, ফটাক করে শব্দ
হচ্ছিল। শব্দের সঙ্গে আগুনও ছুটছিল। বেশ মজা লাগছিল। তবে সেটি সাইজে ছোট। এটি তার চেয়ে
অনেকটা বড়। ও ভাবল, “আমার জন্য বাবা খেলনা এনেছে; তবে আমাকে দেয়নি কেন?" ও খেলনাটিকে এদিক ওদিক
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরখ করছিল। ওজনও বেশি। ললিত নলটা বুকের দিকে নিয়ে গেল। আঙ্গুল চলে গেল ট্রিগারে।
টনিকের চায়তে অনেক জোরে শব্দ হল। ঘর কেঁপে উঠল। রান্না ঘর থেকে মায়ের আর্ত চীৎকার ভেসে
এল। ললিত মেঝেয় নাচছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর।
~~~~~~~~~~~
মোহের পিছনে ছুট
সেই ছোট বেলায় স্বপ্নে একটি সোনার হরিণ আমাকে বলেছিল, আমাকে ধরতে পারলে
তুমি আমাকে পাবে। তারপরই হরিনটি দিল ছুট। ওর পিছুনে ছুটতে শুরু করলাম।
দেখলাম, আমার মতো আরও অসংখ্য লোক ওই হরিণটির পিছুনে ছুটছে। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি হাঁপিয়ে
গেলাম। এক সময় জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলাম। তখনও নাগালের বাইরে দাঁড়িয়ে, এক ঝলক
মোহিনী হাসি নিয়ে ও বলল, আমাকে তুমি কোন দিনও পাবে না। আমি পৃথিবী, আমিই মায়া যার পিছুনে
তুমি ছুটছো।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
~~~~~~~~~~~~~
মানুষের মৃত্যু
রামের ভক্তদের সঙ্গে
আল্লার বান্দাদের তুমুল লড়াই চলল। ফলে অনেক মন্দির, মসজিদ ভাঙ্গাভাঙ্গি হল। ঘর-বাড়ি
লুটপাট, ভিটে থেকে উচ্ছেদ, আগুন লাগানো, হুঙ্কার প্রতি হুঙ্কার, আর্ত চিৎকার - সবই
চলল। মারা পড়ল অনেক মানুষ। তাদেরকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হল। ময়না তদন্ত হল। কিন্তু কারো
দেহ থেকে কে রামের ভক্ত বা কে আল্লার বান্দা এমন কোন চিহ্ন বা প্রমান পাওয়া গেল না।
চারিপাশ থেকে কেবল স্বজন হারা মানুষের কান্না শোনা গেল।
~~~~~~~~~~~~~~
পাল তোলা নৌকা
নীলাভ পায়চারি করতে করতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল।
সামনে অগভীর সুন্দর কাশবন। দমকা বাতাসের তালেতালে ফুল ফোটার নেশায় আকুলি বিকুলি করছে।
পাশেই নদী। একটি বিস্তৃত বালুচরকে পাশে রেখে আপন খেয়ালে বয়ে চলেছে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের
আলোয় সোনার চন্দন মেখে জল মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছে।
তিন বছর আগে, ঠিক এরকমই এক সময়, ঠিক এই কাশ
বনে লুকোচুরি খেলতে খেলতে লীনা বিভিন্ন ভঙ্গিতে ইশারা করেছিল। নীলাভ ওর ইশারায় আত্মসমর্পণ
না করে পারেনি। তারপর গালে একরাশ রক্তিম হাসি টেনে লীনা বলেছিল, “তুমি খেলবে? আমার
সাথে? এভাবেই সারা জীবন?"
নীলাভ বহুদূরে নদীর দিকে চোখ ফেরাল। তখনও
একটি সুন্দর পাল তোলা নৌকায় লীনা ভেসে যাচ্ছে অদৃশ্য সীমানার দিকে।
******