বহুগামী আমি--৯১/সৈয়দ আসরার আহমদ

 

বহুগামী আমি

   সৈয়দ আসরার আহমদ 

পর্ব-৯১

 

 এভাবে কেটে যাচ্ছে দিনকাল৷ শোভার গর্ভধারণ তিন মাসে পড়ল৷ সে খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে ফুল্ল কুসমিত মনে অফিসে কাজ করে আমার টিফিন সে নিয়ে আসে৷ শোভার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি মাঝে মাঝে যাই গাঙুলিবাগানে৷ মৌমিতা প্রায় দিনই শোভার ঘরে আসে৷ দুই বন্ধুতে গল্পগুজব করে৷ শোভার গর্ভধারণটা দৃশ্যমান হয় নি অর্থাৎ বাইরে থেকে বোঝা যায় না৷ সে এখন হাতে শাঁখা পলা আর সিঁথিতে সিঁদূর পরে পুরো দস্তুর বিবাহিত রমনীর সাজে সেজে থাকে৷ অফিসের সহকর্মী মেয়েরা শোভাকে ওর স্বামী কি করে জানতে চাইলে সে বলে, তার বর সরকারি কর্মচারি৷ বরের বিষয়ে যাতে কেউ বেশী সওয়াল না করতে পারে তার জন্য ওদের এড়িয়ে চলে৷ 

  ক্রমশ তার তলপেট স্ফীত হতে থাকায় সহকর্মী মহিলারা কৌতূহলী হয়ে ওকে ক মাস চলছে জানতে প্রশ্ন করে৷

 শোভা ক্যালকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে দেখিয়ে কার্ড করে নিয়েছিল৷ অফিসের কাছে তাই  ওই হাসপাতালে ওকে কার্ড করার পরামর্শ আমি দিয়েছিলাম৷ প্রসবের সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই আমি এখন গাঙুলি বাগানে থাকছি৷ মৌমিতাও মাঝে মধ্যে এসে থাকে৷ শোভার উদারতার দৃস্টান্ত আমি ইতোপূর্বে পেয়েছি৷ এখন বেশ কয়েকবার আমাকে একান্তে বলেছে যে তুমি ইচ্ছে করলে মৌয়ের সঙ্গে সহবাস করতে পারো৷ 

 আমি ধমক দিয়ে বলেছি, কি সব ভুল ভাল কথা বলছ৷ 

 সেদিন রাত্রে শোভার লেবার পেইন উঠায় আমি আর মৌমিতা ট্যাক্সি করে মেডিকেলে ভর্তি করে দিয়ে গাঙুলিবাগানে  ফিরে গেলাম৷ ওই রাতে মৌ শোভার কিচেনে ঢুকে চা বানিয়ে আনল৷ হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে আমি শুয়ে পড়লাম৷ মৌও শোভার একটা অর্ডিনারি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে আমার বাম পাশে লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ল৷ শেষ পৌষের শীত মৌয়ের হাতের আঙুলগুলো ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল৷ সে আমাকে জড়িয়ে ধরল৷ তার শরীরের শাড়িটাকে সে খুলে ফেলেছিল৷ 

 সকালে উঠে মৌ চা আর ডিম টোস্ট করে এনে আমাকে ওঠাল৷ আমি মুখ ধুয়ে খেয়ে ফেলে বললাম, তুমি স্কুল যাবে না? 

- না আজ যাব না৷ তোমার জন্য ডাল ভাত আলু সেদ্ধ আর মাছ ভেজে দিচ্ছি খেয়ে তুমি অফিসে যাবে তখন আমি তোমার সাথে যাব৷ তুমি অফিস চলে যাবে আর আমি শোভার কাছে চলে যাব৷ 

 আমি বললাম, টিফিন আওয়ারে আমি শোভাকে দেখতে যাব৷ মৌ তুমি শোভার কাছে থাকবে৷ 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি হসপিটালে এলে ফেরার সময় এক সাথে ফিরব৷

- তাই হবে৷ তোমার কাছে টাকা আছে না আমি দেব?

- না না টাকা লাগবে না৷ আমার কাছে টাকা আছে৷ 

 আমি দু'শো টাকা হাতে নিয়ে মৌকে বললাম, টাকাটা সঙ্গে রাখো কোনও প্রয়োজনে লাগতে পারে৷

- না তোমার কাছে রাখো আমার কাছে টাকা আছে৷

 আমরা দুজনে গড়িয়া থেকে ছ নম্বর বাস ধরে মৌকে ধর্মতলায় নামিয়ে দিয়ে আমি  অফিস চলে গেলাম৷

 এগারটা নাগাদ আমি নিত্যদাকে জিজ্ঞেস করলাম, নিত্যদা আজ শোভাদি আসবেন না?

- কই আসলো, আসলে তো এতক্ষণ চলে আসতো৷ বাচ্চা হবে তো তাই হয়তো হসপিটালে ভর্তি হয়েছে৷ 

 আজ টিফিনের সময় করিম সাহেবের সঙ্গে ওল্ড চায়না বাজার স্ট্রিটে গ্রেট ইষ্টার্ণ হোটেলের ভেজ প্যাটিস আর কেক দুটো কলা খেয়ে টিফিন সারলাম৷ এখন শোভা পাঁচ ছ'মাস আসবে না৷ আমাকে করিম সাহেবের সঙ্গে টিফিন খেতে হবে৷ একথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ সাড়ে তিনটেয় কাজ সম্পূর্ণ করে নিত্যদাকে বললাম, আজ আমি কি একটু আগে অফিস থেকে যেতে পারি৷ 

  নিত্যদা বললেন, ধীরেনদা বলে চলে যাও৷

  আমি অফিস সুপার ধীরেন কাকুকে বলে চারটেয় বেরিয়ে গেলাম৷ ক্যানিং স্ট্রিট ধরে সোজা মেডিকেলে প্রসূতি বিভাগে হাজির হলাম৷ মৌ নীচে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল৷ ওর কাছে ভিজিটার্স কার্ড ছিল৷ মৌ বলল, শোভার ছেলে হয়েছে৷ তোমার মতো সুন্দর দেখতে হয়েছে৷ দুজনে এক সাথে শোভার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ আমাকে দেখে দারুণ খুশিতে শোভার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠল৷ আমি তার জন্য আপেল নাসপাতি কমলালেবু নিয়ে এসেছিলাম৷ আমি রসিকতা করে বললাম, তোমার পুত্র সন্তান হয়েছে আমাকে কি খাওয়াবে৷ 

- ঘরে ফিরে গিয়ে যা খেতে চাইবে খাওয়াব৷ তিন দিন পরে ছেড়ে দেবে৷ 

  এদিকে মৌমিতা বেবির জন্য প্রয়োজনীয় জামা কাপড় বেবি জনসন পাউডার অন্যান্য যা কিছু দরকার কিনে এনেছে৷ শোভার জন্য কাঁচের গ্লাস, জলের কুঁজো ইত্যাদি দরকারি সামগ্রী কিনে দিয়েছে৷ 

 আমরা সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত শোভার পাশে টুলে বসে থাকলাম৷ ওয়ার্ড বয় বিদায় ঘন্টি বাজাল৷ আমরা দুজনে নিচে নেমে পুঁতিরামে সিঙারা মিস্টি খাওয়ার পরে চায়ের দোকানে চা খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে শিয়ালদহ চলে গেলাম৷

 গাঙুলিবাগানে শোভার ঘরে আমরা গেলাম৷ ফ্রেস হয়ে মৌ কড়া চা বানিয়ে আনল৷ তারপর সে বাজারে গিয়ে মুরগীর মাংস নিয়ে এসে আলু আর ডিম দিয়ে দারুণ রান্না করল৷ 

 রাতের খাবার খেয়ে মৌ শোভার ট্রান্জিটার চালিয়ে গান শুনতে শুনতে ফ্রেস হয়ে চুল ঝেড়ে সেন্ট মেখে আমার বাম পাশে এসে শুয়ে পড়ল৷ শোভার পূত্র সন্তান হওয়ায় আমি খুব খুশি৷ মৌও খুব খুশি৷ আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারি নি৷ মৌ ট্রান্জিটার বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল৷ রাত দুটো আড়াইটেয় সময় আমি উঠে বাথরুমে গেলাম৷ মৌও উঠে গিয়েছিল৷ সেও বাথরুম থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল৷ আমাকে নিয়ে খেলা শুরু করল৷ খেলা সাঙ্গ হলে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম৷ সকালে মৌ চা বিস্কুট নিয়ে এসে আমার ঠোঁটে চুম্বন দিয়ে উঠতে বলল৷ চা খেতে খেতে আমি বললাম এভাবে সহবাস করলে তুমিও শোভার মতো গর্ভবতী হয়ে পড়বে৷

- কনসিভ করলে abortion করে নেবো৷ তোমাকে ভাবতে হবে না৷

 - আমি abortion এর পক্ষপাতি নই৷ জীবন আমরা দিতে পারি না অথচ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করি৷ আমরা খেলতে খেলতে খেলার ছলে ভ্রূণের জন্ম দিই অথচ আমাদের সাময়িক তৃপ্তির সময় ভুলে যাই একটা জীবনের সৃষ্টি হতে পারে৷ তার দায়িত্বভার নিতে অস্বীকার করে তাকে হত্যা করতে কুণ্ঠিত হই না৷ আমরা পশুর থেকে অধম৷ তুমি সেক্স করলে কন্ট্রাসেপটিক ট্যাবলেট খাবে৷ Precautionary measure নেবে তাহলে কনসিভ করার ভয় থাকবে না৷ আর কনসিভ না করলে জীবনহানির সওয়ালও উঠবে না৷

 মৌ আমার কথা চুপ করে শুনলো৷ কিছুক্ষণ পরে বলল, ঠিকই বলেছ আমাদের খেলার পূর্বাহ্নে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী৷ যাকে আমরা abortion এ হত্যা করছি সে তো আমাদের সন্তান৷

 

স্বতঃ লেখক                   

চলবে (৯২)

 

Post a Comment

Previous Post Next Post