কোলান-২/ Kolan-2

 

       কোলান

    (পাড়া-লক্ষ্মী নারায়ণ পুর)

       আজিজুল হাকিম 

 

আমাদের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা কোলান গ্রামটির বিভিন্ন অংশ বা পাড়া নিয়ে । কোলান মূলত দুটি অংশে বিভক্ত । একটি লক্ষ্মী নারায়ণপুর আর অপর অংশটি কোলান রাধাকান্তপুর নামে অবিহিত । লক্ষ্মী নারায়ণপুর আবার তিনটি পাড়ায় বিভক্ত - যেগুলি হলো কলোনি পাড়া বা দক্ষিণ পাড়া, মধ্য পাড়া আর উত্তর পাড়া বা পলে পাড়া । আর কোলান-এর অপর অংশ ; যাকে আমরা কোলান রাধাকান্তপুর নামে চিনি ও জানি; এই কোলান রাধাকান্তপুর আবার সাতটি পাড়ায় বিভক্ত । সেগুলি হলো, (১) কোলান কাশিপুর পাড়া, (২) কোলান বেলদার পাড়া, (৩) কোলান গাঙ্গুলী পাড়া, (৪) কোলান বালি পাড়া, (৫) কোলান কাছারি পাড়া, (৬) কোলান রমনা পাড়া, (৭) কোলান মারফত পাড়া ।

প্রথমে আসি লক্ষ্মীনারায়ণপুরের আলোচনায় । এই লক্ষ্মীনারায়ণপুরের একটি পাড়ার নাম কলোনি পাড়া । বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া থেকে কিছু পরিবার এসে এখানে বসতি গড়ে তোলে এখানকার খাস জমিতে । সে কারণে এ পাড়ার নাম করণ হয় কলোনি পাড়া । তবে সকলেই যে খাস জমিতে বসতি স্থাপন করেছে এমনটা নয় । এ পাড়ার অপর একটি নাম ছিল; সেটি হল চামার পাড়া । এখানে কয়েকটি দাস সম্প্রদায়ের পরিবার আছে ; যারা চামড়া জাত দ্রব্যের কাজে নিযুক্ত থাকত । বর্তমানে দু-এক জন এই পেশায় নিযুক্ত থাকলেও অন্যরা সেই পেশা থেকে সরে কৃষি কাজে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে । চামড়ার দাম বৃদ্ধি এবং চামড়া জাত দ্রব্যের চাহিদা কমে যাওয়া এর মূল কারণ । এ পাড়ার মূল রাস্তার দুপাড়ে ঘন বসতি লক্ষ্য করা যায় । তবে লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও সোনাডাঙ্গা গোরস্থানের পূর্ব পাড়ে ও কোলান মৌজার শেষ প্রান্তে পশ্চিম দিকে একটি সরু রাস্তা কিছুটা চলে গেছে । তার দুপাড়ে খুব ঘন বসতি লক্ষ্য করা যায় ।

কলোনি পাড়া 

লক্ষ্মী নারায়ণপুরের মধ্যে অবস্থানের কারণে অপর অংশটি মধ্য পাড়া নামে পরিচিত । অবশ্য বর্তমানে এই গ্রামের গোড়া পত্তন এই পাড়া থেকেই শুরু হয়েছে । এই পাড়াতেও অতি ঘন বসতি দেখা যায় এবং এই পাড়ার বিভিন্ন দিকে ছোট ছোট রাস্তা সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে মাঠের দিকে হারিয়ে গেছে । এই পাড়াতে একটি জুম্মা মসজিদ আছে; যেটি এই গ্রামের সব চেয়ে  পুরাতন মসজিদ । এই পাড়ার পূর্ব দিকে একটি খেলার মাঠ আছে এবং সেই মাঠের উত্তর পাশে একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র আছে । এই পাড়াটি আড়াইশো থেকে তিনশো বছরের বেশি পুরাতন হবে না ।

মধ্যপাড়া 

কথিত আছে, এই এলাকায় দু-একটি বাড়ি ছাড়া সম্পূর্ণ জঙ্গল ছিল । নীলকর সাহেবদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক ইংরেজকে পিটিয়ে মেরে ফেলে রাতের অন্ধকারে কিছু লোক ডোমকল জলংগীর কোন এক গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে প্রথম বসতি স্থাপন শুরু করে ।   

এই গ্রামের পরের পাড়াটি হল উত্তর পাড়া বা পলে পাড়া । এর মাঠ ও মাটি পলি সমৃদ্ধি হওয়ায় এই পাড়ার নাম পলে পাড়া । কথিত আছে , পূর্বে এই পাড়ার নাম ছিল মরিচা ডাঙ্গা , গ্রাম্য ভাষায় মচ্চেডাঙ্গা । এর মাটি লোহার মরিচা পড়ার মত কিছুটা রঙ হওয়ায় এই পাড়ার নাম মরিচাডাঙ্গা হয়েছিল হয়ত । এই বর্তমান পাড়াটির বয়স দেড়শ বছরের বেশি হবে না । তবে এই পাড়ার উত্তরের মাঠে প্রাচীন কালে বসতি ছিল বলে জানা যায় । এই পাড়ার ঘর-বাড়িগুলো মূল রাস্তার দুদিকে ঘনভাবে দাঁড়িয়ে পুরব-পশ্চিমে লম্বাভাবে চলে গেছে । এই পাড়ায় একটি জুম্মা মসজিদ আছে ।

উত্তর পাড়া বা পলে পাড়া 

লক্ষ্মী নারায়ণপুর নামটি আসার দুটি কারণ হতে পারে । প্রথমত এই এলাকাটি ব্রিটিশ আমলে হিন্দু জমিদারের অধীনে ছিল । তার কোন এক সন্তানের নামানুসারে এই উপ গ্রামটির নাম হতে পারে । দ্বিতীয় কারণ হল, এই উপ গ্রামটির চারিপাশের মাঠে ধানের চাষ প্রচুর পরিমানে হত । ধানকে যেহেতু লক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেই কারনেও হতে পারে ।

Post a Comment

Previous Post Next Post