কোলান
পর্ব-১
আজিজুল হাকিম
সবুজ গাছপালার জৌলুসে মাতোয়ারা, সবুজের সমারোহে
সুসজ্জিত, সবুজ ফসলের উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত, সবুজ ঝোপঝাড়ে-বনবাদারের প্লাবনে প্লাবিত,
নানান পাখিদের কলতানে কল্লোলিত, ভোরের শিশিরের নিঃশব্দ হাসিতে উৎফুল্ল, ছয় ঋতুর পরশে
আবিষ্ট, হাজারো হাসি-কান্নায় ভেজা সবুজ ঘাসে, লতায়-পাতায় আচ্ছাদিত একটা গ্রাম - তার
নাম কোলান ।
ইতিহাসের ট্র্যাজিক নায়ক - বাংলা, বিহার ও
উড়িষ্যার নবাব সিরাজ উদ্দৌল্লার রাজধানী তথা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত , রানীতলা
থানার অধীনে ও আমডহরা গ্রাম পঞ্চায়েত - এর বক্ষস্থলে কোলান অবস্থিত । এর যোগাযোগ ব্যাবস্থা
মনরোম থাকলেও চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথভাবে উন্নতি লাভ করতে পারেনি । সে সব কথায়
পরে আসব । এই গ্রামটি মুর্শিদাবাদ শহর যা আধুনা লালবাগ শহর; যেখান থেকে পূর্ব দিক ঘেঁষে
প্রায় উত্তর দিকে পনেরো কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে । জিয়াগঞ্জ বাজার থেকে আখেরীগঞ্জ-এর
পথে প্রায় সাত কিলোমিটার পূর্ব দিকে আর ভগবানগোলা থেকে প্রায় পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কিছুটা
হেরফেরে বারো কিলোমিটার দূরে এবং রানীতলা থানা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ
কোণে এই শ্যামলীমা গ্রামটির অবস্থান ।
"কোলান" - এর নাম করণের ইতিহাস নিয়ে অনেক চিরুনি তল্লাশি করেছি; কিন্তু কারো কাছেই কোন সদুত্তর খুঁজে পাইনি । অনেক বৃদ্ধ মানুষকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি । তারা বলেছে এখানে নাকি ছত্রিশ জাতের লোক বাস করত, তাদের মধ্যে কোনো এক সম্প্রদায়ের নাম অনুসারে কোলান নামটি এসেছে । আবার কেও বলেছে জার্মানের প্রাচীন কলন শহরের মতই এখানে শহর ছিল; সে কারণেও হতে পারে । তবে সঠিকভাবে উত্তর না পাওয়া গেলেও ঝাড়ায় বাছায় করে মোটামুটি তিনটি ধারণা পাওয়া গেছে । প্রথম ধারণাটা প্রয়াত গোলাম রসুল মামার কাছে পেয়ে ছিলাম । তাঁর মতে, বল্লাল সেন ও লক্ষণ সেন - এর আমলে এই গ্রামে কুলীন সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রথম বসতি স্থাপন করেন । সেই কারণে কুলীন সম্প্রদায়ের নাম অনুসারে 'কুলীন' নামটি অপভ্রংশ হয়ে 'কোলান' নামটি এসেছে । দ্বিতীয় ধারণাটি এই, আমি এই গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায়, বিভিন্ন মাঠে ঘুরেঘুরে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে প্রাচীন কালে এই গ্রামে কোল উপজাতির লোকেরা বাস করত যার নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম "কোলান" হয়েছে । প্রাচীন কালে কোল অর্থাৎ কুমোর বাস করত তাঁর প্রচুর নিদর্শন এখনও পাওয়া যায় । যদিও কোল উপজাতির পেষা সময় ও পরিস্থিতির চাপে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে । তৃতীয় ধারনা হচ্ছে, এই গ্রামে অবশ্য ‘কলু’ বা ‘কুলু’ সম্প্রদায়ের আধিপত্য ছিল । তারা কখনো ঘোড়া, কখনো বা বলদের সাহায্যে ঘানী টেনে তেল বের করে সেই তেল গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করত । তাঁর ইতিহাস এখনো আছে । কয়েক বছর পূর্বেও কাশিপুরপাড়াকে গ্রাম্য ভাষায় ‘খুলু’ পাড়া নামে অভিহিত করা হতো । এমন কি সেই কলু সম্প্রদায়ের বাস এখনো এই গ্রামে আছে । সেই কলু সম্প্রদায়ের নাম অনুসারেও ‘কোলান’ নামটা আসতে পারে ।
এবার কোলান-এর চারিপাশটা ঘুরে দেখা যাক ।
সরকারি মতে মৌজাকে যেহেতু গ্রাম বলা হয় ; তাই আমরা কোলান বলতে কোলান মৌজার সমস্ত অংশটাকে
গ্রাম বলবো । কোলান-এর উত্তরে পড়ছে তোপীডাঙ্গা আর সুলতান পুর গ্রাম । পশ্চিমে ছকন্নগর;
যার পূর্বে নাম ছিল সুকুর নগর । তারপর হোসেন
নগর এবং রমনা পাড়া মৌজা অবস্থান করছে । দক্ষিণ-পশ্চিমে ভান্ডারা, দক্ষিণে আরাজি নেস্তা
এবং পলাশী-সোনাডাঙ্গা আর পূর্বে ধব্জমাটি গ্রামটি কোলানকে বেষ্টন করে আছে ।