Protesting Poems / প্রতিবাদী কবিতা, সিরিজ - ২ -- আজিজুল হাকিম

 

স্বপ্নের দেশ

আজিজুল হাকিম

 

পরিচিত নীল আকাশ আজ মাথার উপরে অগ্নি শলাকায় রঞ্জিত

আমার খেলার মাঠ, আমার স্কুল আমার নয়

যে ঘরে শুয়ে শুয়ে মা আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন পূর্ণিমার চাঁদ হওয়ার,

যে বাড়ি চৌদ্দ পুরুষের পায়ের স্পর্শে গর্বিত,

তাদের সোনার ফসলে মাঠ অব্যক্ত উল্লাসে হাসত সেই বাড়ি,

মাঠ এমন কি পাশের বাড়ির অপলা মাসী,

সেও নাকি আমাদের কেউ নয় ।

যে দেশের মানচিত্র আঁকতে হাতে খড়ি

যে দেশের জল-বায়ু-মাটির ছোঁয়ায় আমি পালিত,

যে দেশের শিশির বিন্দুতে আমার পায়ের স্মৃতি জ্বলজ্বল করে

সেই দেশটা নাকি আমার নয় !

আমি কি জন্মাবধি স্বপ্নের দেশে বাস করছি ?

 আমার স্কুল, দিদিমনি, খেলার সাথীরা, প্রতিবেশী সবই স্বপ্ন ?

তাহলে কোনটি আমার দেশ ?

কে দেবে জবাব ?

***************


ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব ?

আজিজুল হাকিম

 

তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব ?

একদম কুম্ভকর্ণের মতো ?

এত আর্তনাদ, এত বুক ফাটা কান্না

ইথারে ইথারে ভুলন্ঠিত মানবতার যন্ত্রনা ?

তবে সবই নিষ্ফল !

 

তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব

গণতন্ত্রের নির্মল বাতাস পেয়ে ?  

অনেক কাল আগে শুকিয়ে যাওয়া সাগর বেলায়,

না স্বার্থান্বেষী জনারণ্যের ভিড়ে

পথ হারিয়ে ফেলেছ ?

 

তুমি কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছ, বিপ্লব ?

না ড্রোন, মিসাইলের আগুন ঝলসানো উল্লাসে

আর অ্যাটম, হাইড্রোজেন বোমের রক্তলোলুপ চক্ষু দেখে

কোন এক পাহাড়ের গুহায়,

না কোন সুন্দরী ষোড়শীর তুলতুলে বুকের গভীরে

মুখ লুকিয়েছ ?

 

গাঢ় অন্ধকারের যোনিদ্বার ফেঁড়ে

একজন এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমার শিয়রে

বুকে ছিল তার এক আকাশ প্রত্যাশা

দু চোখে জ্বলছিল অগুনিত তারার আলো

বলেছিল, “তুমি ঘুমিয়ে গেছ নাকি, ভাই ?

বিপ্লব হোক বা না হোক

বিপ্লবী থাকবেই” ।

 

বুকের ভিতরে দুরুদুরু করছিল ভয়

মশাল জ্বালতে পারব কি আমি একেলাই !

**********************


তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা  

        আজিজুল হাকিম

 

যখন আঁধার নামে আমার চারিপাশে,  

মাথার ওপরে ঘন মেঘে ঢাকা আকাশ  

ঠিক তখন মনে পড়ে, অন্তরা

চাঁদ নয়,

তারা নয়,  

অন্তত একটি মাটির প্রদীপ হাতে

ঈপ্সিত হাসি মুখে

আলোকবর্তিকার মতো

আমার সামনে এসে দাঁড়াও ।

 

যখন আঁধার পথে আমার ঠিকানা হারাই,  

হোঁচট খাই বারবার  

ঠিক তখন তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা

ধ্রুব তারার মতো

পথের দিশারী হয়ে

আমাকে পথ দেখাতে

আমার হাতটি ধরো ।

 

যেখানে প্রেমের সাথে

অপ্রেমের সহবাস

ঠিক তখন তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা

প্রেম ফলাতে নয়,  

প্রেম দিতে নয়,  

প্রেম চিহ্নিত করতে

প্রেমের কষ্টিপাথর হাতে এখানে আবির্ভূত হও ।

 

যখন চারিদিকে খুধার্ত মিছিলের স্লোগান –

“চাই-চাই, দিতে হবে, দিতে হবে

ঠিক তখন তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা

হাতে রুটি নয়,  

ভাত নয়

অন্তত একটা হাতুড়ি হাতে এসো;  

কারণ লৌহ ভাঙ্গতে আর একটা লৌহের দরকার

 

যখন শ্রাবনীরা বিষ খায়

অথবা গলায় দড়ি দেয়

ঠিক তখন তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা

কপোলে কোন শোকাশ্রু নয় ।

সাহসিকার মতো রশি হাতে

সমস্ত সমাজটাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলাবার জন্য

এখানে একবার এসে দাঁড়াও ।

 

যখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং –এর কালো হাতছানি

ডাইনীর মতো মনে হয়

ঠিক তখন তোমাকে মনে পড়ে, অন্তরা ।

আজ এই বিষাক্ত সন্ধ্যায়

কারখানার চিমনিগুলো সব গুড়ে যাক,  

উড়ে যাক সুপ্ত বীজ

তোমার ধ্বংস-সৃষ্টির আয়লায় ।    

***********************


আমাকে ঘুমোতে দাও
 
আজিজুল হাকিম

 

অনেক বিপ্লব, অনেক স্লোগান
আজ ভোঁতা কাস্তের মত হয়ে গেছে,
হৃদয়ের মাঝে তুফান তোলার মন্ত্রগুলো
অলস বাতাসের মত নেতিয়ে পড়েছে,
সবুজের বনে বনে আজ
দাবাগ্নির আগুনের আস্ফালন
আমাকে হতবাক করে দেয়

 

নিজের অজান্তেই
মানুষ আঙুলের কালো ছাপের সাহায্যে
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জন্ম দেয় --  

সেই সন্ত্রাস সমস্ত জনগণকে বানিয়ে ফেলে গরু


সবুজ বিপ্লবের বুকে ক্ষুধার্তের আগুন
রক্তে ভিজে তৃষ্ণার্ত মাটির ফাটল

ধর্মের মৈত্রীর বাণী, অহিংসার কথা যখন
ধর্মগুর হায়েনাদের লালসায় অপবিত্র হয়;
তখন অসহায়, নিষ্পাপ শিশুদের ওপরে
নেমে আসে শয়তানের কুঠারাঘাত

ভগবানের সিংহাসনে আজ শয়তানের বসে আছে;  
তাই শত শান্তির নোবেল নাচে
রক্তলোলুপ পিশাচদের হাতে ।

আজ আমকে ঘুমোতে দাও -
কারণ আগামী কাল
আমার হাতে জ্বলে উঠবে
শতশত শাণিত তরবারি
গর্জে উঠবো আমি হাজারো অ্যাটম
আর হাইড্রোজেন বোমের উল্লাসে ।

**************

Post a Comment

Previous Post Next Post