আমাকে নিয়ে
- আজিজুল হাকিম
**************************************
তুমি বলেছিলে,
আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবেন ?
কেবল একটি মাত্র কবিতা ;
যে কবিতায় পদ্মার অবাধ খেয়ালিপনা,
উচ্ছ্বাসিত ঢেউ আমার দেহে ফুটে উঠবে ।
বর্ষার ভরা পদ্মার মতই
উদ্ভাসিত হবে আমার চোখে মুখে বিধ্বংসী রাগ -
উন্মাদনাময় যৌবনের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার ।
লিখবেন, একটা কবিতা ?
আকুতি ভরা কন্ঠে তুমি বলেছিলে,
লিখুন না, এমন একটি কবিতা —
কলমের ডগা থেকে নিঃসৃত
কলো কদাকার কালিকে
মনের হাজারো রঙের তুলি দিয়ে
হাজারো আলপনায়,
আপনার কবির কল্পনায়
আমাকে রাঙিয়ে তুলুন -
সাঁটিয়ে দিন দিগন্তের পটে ।
পারবেন না ? এমন একটি কবিতা ?
তুমি বলেছিলে,
আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবেন।
বসন্ত বা গ্রীষ্মের পুর্নিমার রাতে
পদ্মার উন্মুক্ত বুকে
বালুকাময় অস্বর্গীয় রুপোলী চরাচরে
রূপোলী জ্যোৎস্নার চন্দন ধারায়
অপনি আর আমি মুখোমুখী —-
বহুদূরে পলাশের বনে হতে ভেসে আসে
কাদের মাদল উল্লাস !
পলাশের নেশা আপনার মনে
আর আমার বুকে অরন্যের অগ্নিশিখা
চায় — হুহু বাতাস ।
পদ্মার নীল জলে
জ্বলে-নিভে অসংখ্য তারার প্রদীপ
ছোটছোট ঢেউয়ের মাথায়
চাঁদ হেসে হেসে নেচে বেড়ায়
অপন ছন্দে, খেয়ালিপনায়
জলের বুকে আকাশ পেতে দেয় বুক ।
মাছেদের খেলায়
আর রাতচরা পাখিদের চিৎকারে
নিস্তব্ধতা ভাঙ্গে যায় - খানখান ।
অনৈসর্গিক রূপকথার দেশের পরীর মতই আমি
বহুদূর হতে ভেসে আসে অতন্দ্রিত মাঝির গান,
“সখীরে, আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি......।”
কুঁচকানো শাড়ির শৈল্পিক ছন্দে
কাব্যিক তাল-লয়ে আমি হেঁটে যাব আপনার পানে
আমাদের চোখে লেগে থাকবে অভিলাষী অগ্নিশিখা ;
এমন সময় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়
আছড়ে পড়বে সারা বালুচর ।
উড়ে যাবে আমার অবাধ্য, অবিন্যস্ত চুল
খসে পড়বে শাড়ির আঁচল -
লেপটে রবে আপনার মুখের ওপর ।
তারপর, তারপর আপনি আর আমি মুখোমুখি –
দূর বনে শোনা যাবে কালবৈশাখীর সর্বগ্রাসী গর্জন
মেঘের উর্ণায় ঢেকে যাবে পূর্ণিমার চাঁদ ।
লিখুন না, আমাকে নিয়ে এমন একটি কবিতা ।
শরতের পড়ন্ত বেলায়
খসে পড়া শিমূল তুলোর মতই
সুভ্র সুভ্র ছিন্ন মেঘেদের দল
সুনীল আকাশের বুকে মেলেছে ডানা ,
আর গায়ে সোনালী রোদ মেখে সারসের ঝাঁক
তীরের ফলার মতই
দিগন্তের পানে দিয়েছে পাড়ি
আপনি আর আমি একেলা
ভাসমান একখানি ছোট্ট তরী
বুকের ওপর উথলে উঠে আহ্লাদের ঢেউ
দেখবেনা তো কেউ ।
দমকা বাতাসে আমার যত সব আলুথালু চুল
আর সারা পাড় জুড়ে হাতছানি দিয়ে যাবে
সুভ্র সুভ্র কাশফুল ।
কেবল একটা মাত্র কবিতা , আমাকে নিয়ে .........
কেবল আমাকে নিয়ে………
লিখুন না, প্লীজ !
আজকের প্রেম
আজিজুল হাকিম
******************************
আমার চোখে চোখ পড়তেই এক ছুট -
পালিয়ে গেলে তুমি তোমার সামনের ঘরে ।
অনেক দিন পরে দেখা হলেও
হল না কোন কথা --
মাঝখানে ছিল এক চিঁড় ধরা ব্যাথা ।
আমি ঢুকলাম অন্য ঘরে জরুরী এক কাজে ।
ভাগ্য চলছে বেজায় বাজে ।
ম্যাডাম বললেন, হবে অনেক দেরি ।
কি করি উপায় ? পড়লাম বসে বেঞ্চে ।
কিছুক্ষণ রইলাম বসে
আমার কোলের উপর চোখ রেখে ।
হঠাৎ করে আমার মাথাটা হল সাট ।
চোখ পড়ল এক বড় ভিজুয়াল স্ক্রীনে ।
চমকে উঠলাম আমি -
আমার দিকে তাকিয়ে আছ তুমি !
এক সি সি ক্যামেরার সামনে বসে
একাকি ।
আমি অন্য সি সি ক্যামেরার সামনে ।
তোমার চোখে মুখে মৌন হাসির ব্যাকুলতা --
অবিন্যাস্ত চুলে তুমিই যেন বনলতা ।
আমারও ঠোঁটে ফুটে উঠে এক আকাশ প্রসন্ন হাসি ।
এভাবেই চলল আমাদের ভালোবাসাবাসি ।
কত ডাকাডাকি এল না তো কানে ;
অবশেষে এক ধাক্কায় কেটে গেল ঘোর -
ম্যাডাম আমার পিঠের উপর দাঁড়িয়ে হাসছেন ।
বললেন, হারিয়ে গেছিলেন কোথায় ?
লজ্জায় আমার মাথা হল হেঁট ।
রচনাঃ- ০৪/১২/২০১৮
স্থানঃ - জিয়াগঞ্জ
কথোপকথন
আজিজুল হাকিম
**************************
__ তুমি আমার স্বপ্ন হবে ?
__ স্বপ্নের কথা বলনা গো
স্বপ্নের কথায় ডর লাগে ।
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন এলে
রাক্ষসেরা তেড়ে আসে __
গলার দিকে হাতটি বাড়ায়
ছুটে এসে বুকে বসে ।
__ তুমি আমার রাত্রি হবে ?
__ না, না, না
। বালাইষাট !
কেউ কি আবার রাত্রি হয় ?
রাত তো কেবল বেজায় কালো
নিশাচরদের ঘুরিং ফিরিং
দানবেরা সব বেরিয়ে আসে
ধর্মশালায় মেয়ের কাঁদন ।
__ তুমি আমার চাঁদ হবে ?
__ আমার যেমন রূপ চেহারা
তাও আবার চাঁদের বদন !
অত আলো পাব কোথায় ?
জীবন কাটে আঁধার বেলায় ।
সে তো ছড়ায় কেবল হাসি
আমি তো কেবল কেঁদেই বাঁচি ।
--- তুমি আমার জীবন হবে ?
--- আমার জীবন ধুকুর পুকুর
কচুর পাতায় এক ফোঁটা জল ।
ক্যামনে তোমার জীবন হবো ?
জীবন অত সোজা কথা ?
দেহের মাঝে মিশে থাকা ।
পারব নাকো ।
ভয় হয় তোমার তরে –
ছোট্ট ছেলের মত তুমি
পাতার গায়ে টোকা মেরে
পালিয়ে যাবে দূর বহুদূর
জীবন পড়ে মাটির ঊপর
মাটি হবে আমার জীবন ।
--- তাহলে ?
--- চলতে পারি তোমার সাথে
পাশাপাশি একি পথে ।
ঝড় ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে
চলতে পারি সুখে দুখে ।
ছল চাতুরি করব না গো
অবিশ্বাসের ছুরি দিয়ে
স্বর্গলোক চাই না আমি
অস্বর্গীয় ধুলির ধরায় ।
উথলে উঠা সাগর বেলায়
সংসার নামের ছোট্ট তরি
রইব চড়ে তুমি আমি
পোক্ত করে ধরবে হাল
আমি হব তরীর পাল ।
পারবে হতে ?
-- পারব আমি ।
আমার কুঁড়ো ঘরখানিতে রাখব তোমায় করে রাণী ।
রচনাঃ ০৩/১২/২০১৮
কোলান,
মুর্শিদাবাদ
তুমি চাও বা না চাও
-
আজিজুল হাকিম
*******************************************
তুমি চাও বা না চাও তোমাকেই ভালো
আমি বাসবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার বুকে প্রেমের আগুন আমি জ্বালবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার চোখ আকাশের নীলে আমি হারাবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার মন উদাসী বাতাসে আমি ভাসাবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার মনের ইথার তরঙ্গে অনুরণন তুলবই ,
তুমি চাও বা না চাও হাজারো কল্পনায় তোমাকে আমি সাজাবই ,
তুমি চাও বা না চাও আগুন নিয়ে তোমাকে আমি খেলাবই ,
তুমি চাও বা না চাও সেই আগুনে তোমাকে আমি পুড়াবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার মনের ডেস্কটপে আমি নাচবই ,
তুমি চাও বা না চাও হাজার স্ক্যানেও তোমার কলিজার বোর্ডে থাকবই ,
তুমি চাও বা না চাও কাজে কাজে তোমার ভুল আমি করাবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার ভূগোলের পরিসীমা আমি হারাবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার বুকে সাগরের ঢেও আমি আনবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার মাথায় ঘূর্ণি ঝড় আমি তুলবই ,
তুমি চাও বা না চাও তোমার বুকে আনন্দের ঝর্ণা আমি ঝরাবই,
তুমি চাও বা না চাও তোমার চোখে সাগরের নোনা জল ঢালবই ।।
রচনাঃ ০৯/১১/২০১৮
প্রতীক্ষায় আছি
আজিজুল হাকিম
হৃদয়ের পাতাগুলি সময়েরে বাতাসে
অলিখিতভাবে উল্টে যাচ্ছে পরস্পর ।
বাঁধভাঙ্গা আবেগে গলে যাচ্ছে প্রেমের জমাট বরফ চাঁই;
জীবন মরুভূমি গিলে খাচ্ছে হৃদয়ের বনভূমি ।
কৃষ্ণগহ্বর জগত-জীবনের দিকে ধেয়ে আসছে অহর্নিশ ।
লীনা, তবু তুমি আসছ না কেন ?
তোমার শরত চোখে চোখ রেখে
আমার ফাগুন মনে রঙের আগুন ধরেছিল ।
সেই আগুন হৃদয়ে লালন করছি আজও
লীনা, তোমার প্রতীক্ষায় আর কত বসন্ত পার করব ?
পৃথিবীতে রক্তের দাগে ইতিহাস রচিত হয় ।
মানবিক ধর্মের জঠরে অমানবিক শয়তানের জন্ম হয় ।
সম্প্রীতি আর প্রেমের বুকে পড়ে কাঁটাতারের দাগ ।
বর্বর রাজার জয়গান লেখা হয় শিশুর শুভ্র হৃদয়-পাতায় ।
লীনা, সকল মিথ্যাকে মুছে ফেলে আমার তমসাচ্ছন্ন হৃদয়ে
এক আকাশ সত্য আর প্রেমের আলো জ্বালবে বলেছিলে ।
এই অশান্ত সময়ে তুমি এসো –
তোমার প্রতীক্ষায় আছি, লীনা ।