একটি ধর্ষিতা মেয়ের জীবনকথা
স্বপনকুমার পাল
তোমরা শুনতে চেয়েছ
একটা ধর্ষিতা মেয়ের জীবন কথা
কেমন করে বলি বল
কোথা থেকে করি শুরু –
কেন প্রথম থেকে শুরু
করো আমরা শুনতে ভীষণ আগ্রহী
শোন তবে-- আমার বাবা
ছিলেন এক দরিদ্র চাষী বিঘে দুই জমি ছিল সম্বল
ক্ষেতের থেকে ফসল
এনে ভরণ-পোষণ করতেন মা
সারা দিনে তিন বোনের
আবদার আল্লাদ
পড়াশোনা ঘরকন্না
কাজে ব্যস্ত সারাদিন
বোনেদের মধ্যে আমি
ছিলেম ছোট তাই আদর ভালোবাসা ছিল প্রচুর
বাবা কঠোর পরিশ্রমের
শেষে মাঠের থেকে বিকেলের পড়ে যাওয়া রোদ গায়ে মেখে
ঘরে ফিরে আমায় দেখতে
না পেয়ে তার দুটি বিচলিত চোখ অস্থির হত
বাবার আদর মায়ের
ভালোবাসা দিদিদের স্নেহের পলেপ গায়ে জড়িয়ে
আমি প্রতিদিন স্কুলে
যেতাম মাইল দুয়েক দূরে
দেখতে দেখতে বয়স
আমার ষোল পেরিয়েছে
আমার শরীরে তখন কৈশোরত্বের
পূর্ণতা
লাবণ্যময় ত্বকের
জৌলুস ডাগর চোখে বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা
মনেতে পাহাড়ি ঝর্ণার
উৎতাল স্রোত
বিদ্যালয়ে বেশ নামডাক
আমার প্রতি ক্লাসে প্রথম
আমি সেই সুবাদে মাস্টার
দিদিমণি একটু আলাদা চোখে দেখেন
পড়াশোনার বিষয়ে
সহযোগিতার হাত বাড়ান
বেশ চলেছিল ভবিষ্যৎ
গড়ার মানভূমি
একদিন হঠাৎ স্কুল
থেকে ফেরার পথে ঘটল অঘটন—
একটি অচেনা লোক আমায়
তুলে নিয়ে গেল গাজিয়াবাদ
সেখানে বিক্রি হলাম
এক কসাইয়ের হাতে
প্রতিদিন সে আমায়
অন্তর্বাস খুলে আমার গোপন অঙ্গে চুম্বন আঁকে
দীর্ঘ পথ ধরে একটি
কুঠিরে বন্দী করে
প্রতিদিন দশ বার
জনকে দিয়ে আমার শরীরে সব উত্তাপ শুষে নেয়
এরকম ভাবে দীর্ঘ
কয়েক মাস যেতে আমার শরীর ক্রমশ অবশ হতে থাকে
আমার নিম্নাঙ্গে
ক্ষতের সৃষ্টি হয়
একটু শুশ্রষা সুস্থ
হলে আবার চলে দেহ বিক্রির ব্যবসা
যদি কোনদিন যৌন তৃষা
মিটাতে রাজি না হই প্রহারের পর প্রহার
নিরবচ্ছিন্ন গালি
আমার বুক ফেটে কান্না আসে অশ্রু জলে ভাসি
নিরবে একাকী ভীষণ
মনে পড়ে মায়ের মুখ পিতার আদর
আমি দুমড়ে-মুচড়ে
পাথর হয়ে যাই
কি নিদারুণ যন্ত্রণা
শরীরের প্রতি লোমকূপে !
পুরুষের আঁচড় আমাকে
বিবস্ত্র করে
আমি প্রতিদিন নগ্ন
হই কামার্ত পুরুষের তৃষা মেটাতে
আমার শরীরের সমস্ত
রস শুষে নিংড়িয়ে ওরা আনন্দ সুখের উল্লাসে মাতে
আমার শরীরকে বিক্রি
করে পাজা পাজা টাকা গোনে কসাই কারি
আমি ফ্যাল ফ্যাল
করে চেয়ে থাকি আর ভাবি কবে পাবো এই জীবন থেকে মুক্তি
একদিন ওরা অসুস্থ
অবস্থায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল হাসপাতালের দরজায়
আমি বেডে শুয়ে আছি
কাতর যন্ত্রণায় নিঃশ্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে যায়
অক্সিজেন আর অক্সিজেন
চলল দীর্ঘসময়
আমি জ্ঞান ফিরে জানতে
পারি এইচ আইভি পজিটিভ
চলল অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সপ্তম মাস অবধি হাসপাতালের
বিছানায় শুয়ে রাত দিন কেটে যায়
আর কি শোনাবো শুনবে
বলো-- এই ধর্ষিতা মেয়ের জীবনকথা !
আমি বড় অসহায়
! দু চোখের জল শুকিয়ে গেছে পাথর হয়ে দেয়াল পাহারায়
আমি কী অপরাধ করেছিলাম
সমাজের কাছে ?
একটু কোথাও কী মানবতা
ছিল না !
মানুষ নামের পশুরা
আমার পরে যে নির্মম অত্যাচার আর অন্যায় করেছে
তার প্রতিবাদে ধিক্কার
জানাই, ভাবতে লজ্জা হয় এই কী সমাজ ?
নিষ্ঠুর সমাজের কঙ্কাল
গুলো ঝুলছে প্রতি কঙ্কালে
সমাজ দর্শনে জমেছে
কালো মেঘ
এই কী আধুনিকতার
নমুনা ধিক্ ধিক্ ধিক্ !