নিশি রাতের ভূত

 

   নিশি রাতের ভূত

   সামসুন নাহার

 


সেদিন রাতে পড়তে পড়তে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। সম্বিৎ ফিরতেই দেখি বাইরেটা একদম নিস্তব্ধ । ঘড়িতে তখন আড়াইটা বাজছে। যেখানে বসেছিলাম সে ঘরে আমার পাশেই তিনটি বড় বড় জানালা খোলা ছিল । অবিশ্বাস্য ভাবে লক্ষ্য করলাম, সাদা থান পরিহিতা এক মহিলা জানালার ওপাশে একবার যাচ্ছে আবার আসছে । নিজের খেয়ালে সে এমন  করল কয়েক বার । আমি কোনদিনই ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী ছিলাম না । তাই জানালার একবারে কাছে এসে ব্যাপারটি অনুধাবন করতে লাগলাম । কিন্তু রাতে আর বিশেষ কিছু দেখা গেল না । কাউকে কিছু না বলে ঘুমাতে চলে গেলাম ।

 

পরদিন সকাল থেকেই মনে একটা রোমাঞ্চ জেগে রইল । শুধু মনে হতে লাগলো কখন রাত হবে । ইচ্ছে করেই বই মুখে নিয়ে মেলা সময় বসে থাকলাম । বারবার ঘড়ির দিকে দেখছি । ঠিক রাত আড়াইটা যখন আবার সেই একই দৃশ্য । মহিলা নিজের খেয়ালে এমন ব্যস্ত আমাকে যেন দেখতেই পাচ্ছে না । কয়েকবার গেল আর এল । তার এই আসা-যাওয়ার উদ্দেশ্য কিছুই বুঝলাম না ।

 

আমাদের বাড়িতে এক বয়স্ক মানুষ পেয়ারা বিক্রি করতে আসত । দাদুকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম - দাদু, মুখটা অমনশুকিয়ে গেছে কেন খাওয়া-দাওয়া হয়নি নাকি গো ?

একথা বলতেই দাদু দারুন কাতর স্বরে বলল - কে মোরে খেতে দেবে, বুবু ? তোমার দাদীরে তো জ্বেনে নিয়ে পালিয়ে গেছে ।

একথা শুনে সেদিন ভয়ানক হাসি পেয়েছিল । কিছুদিন পরপর জ্বেনে নাকি দাদিকে নিয়ে পালিয়ে যেত । তারপর অনেক খুঁজে দাদু বাড়ি ফিরিয়ে আনত দাদিকে ।

 

এরকম আরো একটি গল্প বলি । আমাদের এক পাড়াতুতো কাকার মাছ ধরার বেজায় ঝোঁক ছিল । সেদিন কাকা আর তার বন্ধু দুজনে মিলে ঠিক করলো ,পরেরদিন ভোরে উঠে নদীতে মাছ ধরতে যাবে । কথামতো কাকার বন্ধু কানাই এসে ডাকছে - ছিপখানা নিয়ে জলদি চল হারু । কাকাও ধড়মড়িয়ে ঠেলে উঠে খানিক ঘুম চোখেই বোধহয় নদীর ঘাটে চলে গেল । দুই বন্ধু কিছু না হলেও প্রায় 30 কিলোর ওপর মাছ ধরে ছিল । তারপর ভোরের আলো ফুটতেই চারদিক যখন ফর্সা হয়ে এলো তখন হারু কাকা দেখল একটাও মাছ নেই; বন্ধুটির ও দেখা নেই ।

 

পরদিন সকালে সই বন্ধুর সঙ্গে উক্ত ঘটনার অবতারণা করতেই বন্ধু আকাশ থেকে পড়ল । বলল - আমার শরীরটা খারাপ থাকার কারণে আমি ঘুম থেকে উঠতেই পারিনি ।

 

একথা শুনে হারু কাকা তিনদিন বেদম জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি । আর সেই ঘটনার পর থেকে হারু কাকাকে কোনোদিন মাছ ধরতে দেখা যায়নি ।

 

একবার এক অল্প বয়সী ছেলে নাকি এক পরীর প্রেমে পড়েছিল ।পরী ছেলেটির সঙ্গে দেখা করতে আসত রোজ । একথা ছেলেটি কাউকে বলবেনা এরকম শর্ত ছিল । কিন্তু ছেলেটি উত্তেজনার বশে তার এক বন্ধুকে সব বলে ফেলে । বন্ধু আবদার করে বসলো - আমাকে একদিন দেখাবি ?

সে বন্ধুকে আড়াল থেকে দেখবার অনুমতি দিয়েছিল । তারপর থেকে পরী আর অভিমানে আসে নি কোনদিন ।

 

তৃতীয় দিন আমি ওৎ পেতে থাকলাম। মনে মনে ঠিক করলাম, আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে ।যেমন ভাবা তেমন কাজ । তবে খুব নার্ভাস লাগছিল সেদিন । আমি যেই তার দেখা পেলাম তড়িত্ গতিতে খিড়কি টা খুলে জাপ্টে ধরে টর্চটা মুখের ওপর ফেলতেই....রুখসানা ভাবি , এত রাতে বাইরে কি করো তুমি রোজ ?

 

হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল ভাবী । বলল - তোমার বাবুদা রোজ রাতে ওই ছাইপাঁশ

গুলো গিলে এসে প্রচন্ড অশান্তি, এমনকি ইদানিং মারধর ও করছে ।

 

ওড়নাটা সরিয়ে দেখি পিঠে মোটা মোটা কালশিটে দাগ । আমি আঁতকে উঠলাম ।

-      নিজেকে বাঁচাতে আমি রোজ বাইরে বেরিয়ে পড়ি । আর কেউ যাতে চিনতে না পারে তাই এই সাদা ওড়না মুড়ি দিয়েছি ।

Post a Comment

Previous Post Next Post