অতি চালাকের গলায় দড়ি
সামসুন নাহার
অরুনবাবু একজন মাঝবয়সি
সরকারি ব্যাংকার । মাইনে ভালোই পান, কিন্তু হদ্দ কৃপণ আর নিজেকে অতি চালাক মনে করেন
। তাই গিন্নি অনিমা দেবীকে সবসময় অভাব অভিযোগের গল্প শোনান । পাছে সে যখন তখন এই চাই,
তাই চাই বলে বায়না করতে না পারে আর সংসারে বুঝে সুঝে খরচ-খরচা করে ।
ভাবখানা এমন যেন
তিনি স্ত্রীর ভীষণ বাধ্য । বাজার গিয়ে বাড়িতে ফোন দেন, "কুমড়ো কি একটু নেবো
।"
স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলে, "মরণদশা, ফোন রাখো ।যা পাও তাই নিয়ে এস
।"
সব্জি ওয়ালা লোকটি মনে মনে বলে, "কি দজ্জাল
বৌ রে বাপু, তা না হলে কি স্বামী বেচারার এমন অবস্থা হয় ।"
বাইরে থেকে দেখে
যা মনে হয় সবসময় যে আসলে তা ঘটেনা, বেচারা সব্জি ওয়ালা কি করে জানবে ?
চুনো মাছ এনে চালাকি করে বলেন, "বুঝলে গিন্নি
আজ বাজারে ভালো মাছ তেমন ওঠেনি ।"
গিন্নি ও বলে ওঠেন, "সে আর নতুন কথা কি ?"
তার মানে কর্তার চালাকি যে তিনি ও বোঝেন, সেটাই জানান দিলেন,
এই আর কি ।
অনিমা দেবী একদিন
বললেন, "শুনছো, সংসারে টুকটাক কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি
দরকার। "
কথাটা শুনে অরুনবাবু
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে সিদ্ধান্ত নিলেন, গিন্নিকে বিনা পয়সায় খুশি করার এমন সুযোগ
কি কেউ হাত ছাড়া করে ? তাই তিনি বললেন , "গিন্নি বাজারে
তোমারও যাওয়া চাই। তোমার সংসারের জিনিস তুমি নিজেই দেখে শুনে কিনে নেবে ।"
তবে যত রাজ্যের ঝোড়ো পোড়ো সব দোকান খুঁজে
খুঁজে সেখানে নিয়ে তুললেন গিন্নিকে । আর কেনাকাটা শেষ হতেই মোটেও আর কোথাও দাঁড়ালেন
না । গিন্নি যেন আর কিছু নেড়েচেড়ে দেখতে না পারে তার জন্য অরুণ বাবু পড়েন কি মরেন
এমন করে ছুট লাগান । বেচারী অনিমা দেবি তেমন কোথাও বেরোতে পান না । তার ইচ্ছে করে একটু
রয়ে সয়ে দেখতে দেখতে যাবেন । কোন দোকানে কোন জিনিসটা ভালো পাওয়া যায় তা একটু বুঝে
শুঝে নেবেন । কিন্তু কর্তার জন্য কিছুতেই তা হবার নয় । তাই মেজাজ হারিয়ে তিনি জানতে চাইলেন, "আহ মরণ ! তুমি এত ছুটছো কেন
গা"।
কর্তা বলেন,
"শিগগির রিক্সায় ওঠ তারপর বলছি ।"
গিন্নি ভাবেন, "কী জানি বাপু টয়লেটে
যাবে হয়তো তাই এত তাড়াহুড়ো করছে ।"
গিন্নিকে রিকশায় তুলে কর্তার মুখে স্বস্তির হাসি । কত রসের কথা উপচে পড়ছে
এতক্ষণে ।
"-এ যাহ, ভাবলাম তোমাকে একটু কচুরি খাওয়াবো তা তো ভুলেই গেলাম । লোকনাথের
দইটা খুব ভালো বুঝলে গিন্নি ।" কথা শেষ করতে না করতে অনিমাদেবি বলে উঠলেন, "যাক গে বাপু ছাড়ো । আমার আর
কচুরি খেয়ে কাজ নেই ।"
হাজার হোক কিপটে স্বামীর সংসার এতগুলো বছর
ধরে করতে করতে তার স্বরূপ বুঝতে তো আর গিন্নির বাকি নেই ।
ছেলেরা বড় হয়েছে । ভালো-মন্দ বোঝে তারা
এখন । বড় ছেলে অরূপ বলে, "বাবা এবার
তুমি একটা বাইক কেন ।"
অরুণ বাবু মনে মনে হাসেন । যখন মোড়ে দাঁড়ালেই
কারো না কারো বাইকের পেছনে উঠে কাজ মিটছে তখন ফালতু খরচ বাড়াবেন কেন । বাড়িতে আত্মীয়
স্বজন এলে বলেন,
"বল ভায়া,
কি খাবে ? মাছ ,মাংস, গলদা না বাগদা ?" তারপর বাজার থেকে কটা চারাপোনা নিয়ে বাড়ি
ঢুকলেন নানারকম গল্প ফাঁদতে ফাঁদতে ।
গিন্নি ও কম যান না । স্বামীর পকেটমারি করে
করে ভান্ডার খানা এক্কেবারে ভর্তি করে ফেলেছেন । নোট বন্দির সময়, না পারছেন চাপতে
না পারছেন বলতে । অগত্যা স্বামীর সামনে ভান্ডার খান উপস্থিত করতে বাধ্য হলেন । দেখা
গেল তাতে প্রচুর 500 টাকার নোট । নয় নয় করে 70 হাজার টাকা বেরোলো তা থেকে। স্বামীর
মাথায় হাত । কর্তা ভেবে কূল করতে পারছেন না, গিন্নি এ করেছে টা কি ! এত চোরের উপর
বাটপারি !