i কবিতা: হিরণ্ময় প্রাসাদের ধ্বংসলীলা

কবিতা: হিরণ্ময় প্রাসাদের ধ্বংসলীলা

 
(চ্যাট জিবিটি থেকে ছবি সংগৃহীত)

হিরণ্ময় প্রাসাদের ধ্বংসলীলা 

কলমে: আজিজুল হাকিম 

(সিরাজ উদ দৌল্লা ও তার হীরাঝিল প্রাসাদের স্মরণে)

এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক সেইখানে 
যেখানে চিহ্নহীনতায়  ভোগা এক মৃত রাজপ্রাসাদ
যা গড়ে ওঠেছিল সেই কালে 
তোমার নিখাদ ভালোবাসা আর সোনালী স্বপ্নের তালে।
আর আজ সেখানে 
তোমার স্মৃতিগুলো শুকনো বাঁশের পাতায় মর্মর ধ্বনি তোলে
শোকস্তব্ধ বাঁশবন দাঁড়িয়ে থাকে অবিচল
কখনও ডুকরে উঠা হাওয়া তুমি হারা বেসামাল হয়
ঝিল থেকে উঠে আসে বিলাপের সুর 
সে কি লুৎফুন্নেসার অশরীরী আত্মার প্রলাপ?
ছাপিয়ে যায় কূল - দূর বহু দূর....
মনে হয় শত কণ্ঠে চিৎকার করে ওঠে, 
সবই ছিল ভুল, সবই ছিল ভুল। 

পায়ে পায়ে আমি এসে দাঁড়ালাম সেইখানে 
যেখানে অতীত নক্ষত্রের ছিল বাস 
সেই হিরন্ময় প্রাসাদ বেদখল হয়ে গেল একদিন 
চলল দানবদের তাণ্ডব লীলা
দুরমুশ হয়ে গেল হীরাঝিল প্রাসাদ
লুঠ হয়ে গেল খিলান, বর্গা, তীর।
সেদিন দেখেছি সেখানে কত ইবলিশের ভিড়! 
খুলে পড়ল স্বর্ণলতা, হীরা আর জহরত
যার মূল্য ছিল লক্ষকোটি মোহরের হিসেব 
ভিনদেশী জাহাজ ভর্তি করে 
সাগরের বুক চিরে নিয়ে গেল সুদূর অচীনপুরে।

আজ লুপ্তপ্রায় শিলা কথা বলে: 
স্বাধীন অস্তাচলের গল্প,
পরাজিতের হত্যাযজ্ঞের গল্প,
পরাধীন শিকলের নির্মম পীড়নের গল্প,
ভাতের থালা কাড়ার অসহনীয় কাহিনী। 

আমি পায়ে পায়ে এসে দাঁড়ালাম সেই তীরে
যেখানে সময়ের ঘূর্ণি ঝড়ে 
হীরাঝিলকে টেনে নিয়েছে ভাগীরথী 
আপন বুকের গভীরে 
এক নির্মম নিশ্চিহ্ন খেলার ছলে। 
আমি তাকালাম ওপারে অনতি দূরে 
যেখানে হাজারদুয়ারি দাঁড়িয়ে আছে মাথা তুলে 
প্রতারণা, অবজ্ঞা আর দাম্ভিকতাপূর্ণ এক প্রাসাদ 
যেখানে অতীত নক্ষত্র বিনাশের নির্লজ্জ গল্প লেখা আছে।

আজও এই দিনের শেষে 
অতীত নক্ষত্রের গল্প শুনি - 
শুকনো বাঁশপাতার মচমচ ধ্বনি,
পাখিদের বিলাপী কাকলী, 
আর ঝিঁঝিঁদের ডাকে। 

রচনা: ৩০/০৯/২০২২

2 Comments

  1. খুব ভালো লেগেছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ অনিঃশেষ

      Delete
Previous Post Next Post