জীবন মৃত্যুর আলেখ্য/আজিজুল হাকিম

 

জীবন মৃত্যুর আলেখ্য 

- আজিজুল হাকিম 


কোথায় যাব, বল? 
কেউ কি আছে? তুই ছাড়া কোন আশ্রয়?
তুই ডাকলেই আমি তোর কাছে যেতে পারি,
তোকে দিতে পারি সারা জীবনের ক্লান্তির হিসেব।
বল, কখন তুই ডেকে নিবি এক দুর্বোধ্য ভালবাসায়?

কখনো কখনো তোর চোখের সবুজ রশ্মি আমাকে স্ক্যান করে 
আর কোন এক মোহ ঘোরে তোর চোখের শ্বেত গহ্বরে হারিয়ে যাই আমি
ওই নৃত্যরত আঁখি-পল্লবে যখন মধ্যাকর্ষণের ইঙ্গিত
তখন এক টুকরো পেঁজা তুলোর মতোই 
এক বৃক্ষ প্রত্যাশা নিয়ে হারিয়ে যাই ওই শ্বেত গহ্বরের ভেতর।  
আত্মসমর্পণ এত ভাল লাগার হয়!

এত সুখ, এত শান্তিময়!
তারপর আমার সামনে অচেনা বেআব্রু পৃথিবী 
তখন আমি যাযাবর পথিক 
সহস্র বছর কেটে গেলে আদিম গহীন অরণ্য ভেদ করে 
উন্মুক্ত পৃথিবীর বুকে গিয়ে দাঁড়াই
চোখের সামনে ভেসে ওঠে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান 
তখন তোর চোখের কোণে বিগার জলপ্রপাতের কান্না 
সেই ঝর্ণায় আমি ভিজতে থাকি
তারপর জীবনের গান গাইতে গাইতে 
তোর পাহাড়ি পাড়া ঘেঁষে কখন ভেসে যাই নদীপথ ধরে 
উত্তাল সাগর সঙ্গমে।

তোর চোখের ইশারায় আমি বন্দর খুঁজে পাই
যেখানে স্ফটিক আলোয় ঝলসে ওঠে সাদ্দাদের বেহেশত 
সেখানে সামনাসামনি বসি তুই আর আমি 
চারপাশে জীবনের বেলাভূমি 
হেসে উঠে বিচিত্র আলপনায় 
আবার সেসব ধুয়েও যায় ঢেউয়ের পাখনায়;
এই আলপনা আঁকা আর এই ধুয়ে যাওয়াই তো জল আর আগুনের অনন্ত খেলা।
তোর মুখে খিলখিল হাসির ঝংকার 
আর আমার হৃদয়ে রোমাঞ্চকর বাসর উদ্যান 
তারপর এক মল্লভূমিতে তোর আমার তুলকালাম কাণ্ড 
অনেক যাত্রার পর মল্লভূমি পেরিয়ে গেলে
হেসে হেসে মাথা দোলায় অজস্র ফুল।

কখন যেন খসে পড়ে তোর অবাধ্য চুল 
উড়তে থাকে আপন খেয়ালে
আমি রহস্য-ঘন গভীর বনানীতে হারিয়ে যাই
সেখানে ঘন কালো অন্ধকারে 
শ্যাওলার মখমলে শান্তির ঘুম আসে নেমে
আমার দুচোখের পাতায়। 
কখন যেন হারিয়ে যাই জোনাকিদের পাড়ায় -- 
চারপাশে আনন্দমুখর উৎসব
মিটিমিটি নেচে যায় জোনাকির ঝাঁক 
তোর পায়ে বেজে চলে অনন্তকাল ধরে বেহিসেবি ঘুঙুর।
চারপাশে নানান ছন্দে বাজে ঝিঁঝিঁদের কোরাস 
হয়তো তাই, এই পৃথিবী, এই বিশ্ব জগৎ 
কেবল সুর আর ছন্দেই চলছে!

আমি জানি, আজ না হোক কাল, 
তোর হীরক উজ্জ্বল চোখের হাসিতে আমাকে ডাকবি-ই।
বল, ডাকবি না? 

রচনা: ৩০-৩১/০৩/২০২৫

Post a Comment

Previous Post Next Post