জীবনের আয়না
আজিজুল হাকিম
এক রহস্যময় প্রাগৈতিহাসিক
বাড়ির বারান্দা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কিছুটা হেঁটে গিয়ে দেখলাম একটি নির্জন বড় ঘরে
সারিসারি বিভিন্ন কারুকার্যে মোড়া সাতটি আয়না; যেগুলি দেয়ালে ঝুলে আছে। আমি প্রথম আয়নাটির
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আর অবাক হয়ে গেলাম। ওই আয়নায় আমাকেই আমি ভীষণ ভীষণ কুৎসিত দেখলাম।
কিন্তু আমি কখনই অত কুৎসিত নই। আমাকে খুব বিরক্ত লাগল। তবুও আমি আস্তে আস্তে দ্বিতীয়
আয়নাটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে আমাকে ভীষণ পাগল দেখাল। আমি একটু অবাক হলাম। আমি
তো পাগল নই! আমার মধ্যে আমি কখনই পাগলামির লক্ষণ খুঁজে পাইনি। হতাশ হয়ে সেখান থেকে
গিয়ে তৃতীয় আয়নাটির সামনে দাঁড়ালাম। সেখানে আমাকে উন্মত্ত হিংস্র পশুর মতো দেখাল। আমাকে
দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সেখান থেকে পালিয়ে অন্য আয়নাটির সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে
আমাকে অবোধ শিশুর মতো মনে হল। হঠাৎ আমার মনের মধ্যে কৌতূহল জন্মাল। পরের আয়নাটি দেখার
প্রবল ইচ্ছে জাগল। আমি এক-পা দু-পা করে হেঁটে গেলাম পরের আয়নাটির সামনে। আয়নাটির দিকে
তাকালাম। সেটি আমাকে একজন বুদ্ধিমান ও আত্মপ্রত্যয়ী দেখাল। এর পর মনের মধ্যে একটি কৌতূহল
আরও বেড়ে গেল। পরেরটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেটায় আমাকে একজন সাহসী যোদ্ধা দেখলাম।
এভাবেই কখন আমি শেষ আয়নাটির সামনে চলে গেলাম। কিন্তু সেখানে আমাকে দেখতে পেলাম না।
এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। মনে হল অন্ধকারের
মাঝে এক মায়াবী আলো আমাকে ডাকছে আর আমি ওর মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছি। মনের মাঝেই প্রশ্ন
জাগল, আমি কে? কোথায় আমি!