গল্প
চৌদ্দ-পোয়া
পর্ব-০২
রাহুল পারভেজ
জেকেরালীর
‘ঢাকি’ নামের ফর্দটি যথেষ্ঠ লম্বা। তার কিছু নমুনা
এই আখ্যানে থাকা দরকার।
কাঠ
ফাড়াই ছিল তার পেশা। সাথে ছিল দু’টো নেশা। খাওয়া ও মাছ
ধরা। আর তিন নম্বর নেশাটা ছিল ঐ যে লোকে বলে না ‘হাত-লবকা’! সেটা ছিল এক ধরণের সুপ্ত
অন্তর্টানের ব্যাপার বা ব্যারাম! এই টানই তাকে গভীর রাতে টান দিত কারো দীঘির পাড়ে,
আম-বাগানে, আখের-ক্ষেতে কিম্বা কারো কুমড়ো-কদুর মাচায়।
তো
একদিন ডাক এল কাঠ-ফাড়াইয়ের।
এলাকার ধন্বন্তরি ডাক্তার
খানার দোতলার ঝুলন্ত মাধবীলতার ছায়া তলে বসে আছে জেকের আলী। তাকে দেখেই ডাঃ মাখনলাল
রায় ঘটক স্মিত মুখে বললেন--আরে, তুমি এসে গেচো!
--জি..ডাক্তার
বাবু। আপনার কাঠগুলান কুন দিকে আছে বইল্যা দেন। আমি ঐ নিমতলার ছায়া খানে আরাম-সে কাঠ
কোবাব। আর ঘন্টা খানিক পরে লাহারীর বেবস্থাটা কইরা দিয়েন। বেশি না। তিনখানা কলাই রুটি।
নুন-পিঁয়াজ। আধপুড়া লঙ্কা বাটা, আচারের ত্যাল আর কিছুটা
আখের গুড়।
--আরে
বাবা, কলাই রুটি পাব কতি? তবে হ্যাঁ, লুচি মিষ্টি বুঁদিয়া তরকারি যত খুশি খাও চলে
আসবে।
--পেট
পুইরা দিবেন তো?
--হ্যাঁ
হ্যাঁ। যত খুশি খাও, পাবে। তবে কাঠের গুড়ি গুলান ভালো
করে ফেড়ে দিও।
ঘন্টাখানেক
কাঠ ফাড়াইয়ের কাজ শেষ হতেই তন্দারীরা লুচি মিষ্টি বোঁদে তরকারি নিয়ে হাজির। জেকেরও
শুরু করে যাকে বলে, “খাইব আজব খাওয়া ভোজ কই যাহার।”
তিন
তন্দারি লুচি মিষ্টি বোঁদে তরকারি নিয়ে আসে আর যায়। কখনো তরকারি থাকে তো লুচি-মিষ্টি
বোদে নাই। কখনো লূচি মিষ্টি থাকে তো তরকারি নাই! অবশেষে বেবাক বিরক্তিতে জেকেরালী বলে--
তোমাদের মুরোদ বুইঝা গেছি। থাক থাক। যা হল তা হল। দৌড়-ঝাঁপের আর দরকার নাই।
খানিক
পরেই ডাক্তারবাবু এসে জিজ্ঞেস করেন-- কি জেকেরালী, ঠিকঠাক খাওয়া হয়েছে তো?
--
কি আর খাব বাবু, আপনার তন্দারিরা তো খাওয়াতে আইসা বেতাল হয়্যা গেল। তেবে খুব মন্দ
হয়নি। এই ধরেন কুড়িগন্ডা লুচি, এক চাটুই বুদিয়া আর ষাইটখানা রসগোল্লা।
--ও
তাহলে তো ভালো করে খাওয়াই হইনি!
এক
কাজ কর রাতের বেলা আরেক বার চলে এসো। মাংস পোলাও দই মিষ্টি রাজভোগ পেট পুরে খেয়ে যাবে।
আজ আমার ছোট মেয়ের বিয়ের আশীর্বাদ।
--না
না ডাক্তার বাবু। রাইতে আমার অন্য কাজ থাকে।
--
রাতে আবার কি কাজ!
---
ঐ আগান বাগান ঘুরাঘুরি করি। পাহারাও দিতে হয়। দেন আমার মজুরি ট্যা দিয়া দেন। হাট-বাজার
কত্তে হবে।
ভিন আকাশের তারা সম্পাদক আজিজুল হাকিম মহাশয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই গল্পটি প্রকাশ করার জন্য। ভিন আকাশের তারার সঙ্গে জড়িত পাঠকদের কাছে কামনা করি গল্পটি তারা যেন পড়েন এবং মতামত দান করেন।
ReplyDeleteআকাশের তারা কোনো পাঠক তো দেখছি না।
ReplyDelete