বসন্তচারীর বন্দনা
আজিজুল হাকিম
কি গান গাও তুমি?
আমি যে কান পেতে শুনি।
তোমার গানের মাধুরিমায় বাঁশরিও হার মানে
হার মেনে যায় পৃথিবীর যত সুর, সব গানগুলি।
তুমি কি গান গাও?
আমি যে কেবল কান পেতে শুনি।
তুমি কেন কেবলই বসন্তে আসো?
কেন এমন মধুর সুর উড়াও এই বসন্ত বেলায়?
বাসন্তিক দুয়ার খুলে ফুলেরা আজ রঙ ছড়ায়
আতরগন্ধে ভরে ওঠে এই বাংলার ফিরদৌসি বুক
সেই সুগন্ধে মোহিত হয়েই কি, সেই রূপে মুগ্ধ হয়েই কি
তুমি আসো আমার এই গাঁয়ে?
গাছ থেকে গাছে, ডাল থেকে ডালে,
পাতার আড়ালে আড়ালে গান গেয়ে যাও
আমি খুঁজি তোমায়
তবু তুমি থেকে যাও অদৃশ্যের সীমানায়
প্রভাত আলোর মতো উদ্ভাসিত হয় মনের দুয়ার।
তুমি কোথায় পেলে এমন সুর? কার কাছ থেকে?
ভরে আছে এমন সুর কোন স্বর্গলোকে
কোন মায়াবী জ্যোৎস্নায়?
সেখানে কি যামিনীরা টাঙেনাকো ঝুল-কালি কোনদিন, কোন কালে?
সেখানে কি হাওয়া লাগে কেবল সুখেরই পালে
পুলকিত আলোর রোশনাই?
তুমি কি জান,
এখানে চাঁদের বুকেও লুকিয়ে থাকে বিরহের ক্ষত?
এখানে সঞ্জীবনী মেঘের বুকেও চমকিত হয় বজ্রপাত?
তুমি কি জানো এই ক্যাসিনো বুকেও মেলোডি সুর বয়?
ফুলশয্যা ফেলে প্রজাপতি পুড়ে মরে আগুন পিপাসায়
তুমি কি জান ঘুণধরা এই জীবনের কথা?
হয়তো তাই মরু যন্ত্রণায়
গাইতে পারি না তোমার মত গান।
পৃথিবীর কোন মানুষ কোন কালে
কাউকে মাতাল করতে পারেনি এমন করে।
আজও তো শুনিনি কোন এক নারী
তুলেছে এত সুন্দর সুরের রিনিঝিনি
এমন মধুর সুরে জাগিয়েছে আমায় কোন এক ভোর বেলায়।
তোমার গানের কোন অর্থ বুঝিনা হায়!
তবু কেন ওই সুরে মন গলে যায়?
কি কথা আছে ওই সুরে!
কি আনন্দের ফল্গুধারা নিত্য বহে চলে!
এই পৃথিবীতে থেকেও তুমি নেই
তুমি কি থাকো পুলসিরাতের পারে -
জান্নাতুল বাগিচায়?
কেবল তোমার সুর বয়ে যায় দূর থেকে দূরে,
মাঠ থেকে মাঠ পেরিয়ে তেপান্তরের পথে।
তুমি তো মুছে দিতে চাও আমাদের পাথরচাপা কথা
তোমার বাসন্তিক উল্লাসে।
তুমি আমাকে শেখাও সেই মাধুরী সুর।
তোমার সুরের এক কণা যদি পাই
তাহলে সারা বিশ্বকে ভরিয়ে দেবো আমার সুরের মূর্ছনায়।
***