আজিজুল হাকিমের একগুচ্ছ বিপ্লবের কবিতা
(এক)
আরো একটি বিপ্লব
লীনা, তোমার ভালবাসা
আর গভীর প্রেম
হৃদয়ের তাকে সাজিয়ে
রাখো, প্রিয়া!
এখন প্রেম, ভালোবাসার
সময় নয়,
দেখ, রক্ত বরণ নদী-জল
বিলাপের সুরে প্রলাপ বকছে
শোন, কান পেতে শোন,
কারা যেন আমাদের
ডাকছে
রাজপথে রাজপথে তরুণের
দল
দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার
হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড
–
ওরা যুদ্ধের জন্য
ডাকছে।
এখন প্রেম-ভালোবাসার
সময় নয়, প্রিয়া –
এখন যুদ্ধের সময়।
সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা
বর্ণ আর ধর্মের খেলায় মত্ত
ভিন ধর্ম আর ভিন
বর্ণের নারী বিবস্ত্র হয় রামরাজ্যে
হনুমানজি বেজাতি
আপেল খেয়ে যান নির্ভাবনায়
এদিকে বেকারত্বের
সংক্রমণ মহামারীর রূপ নিয়েছে
কিশোর সমাজ শিক্ষানীতিতে
বিমুখ
চাষির থালায় বিষের
প্লাবন
নীতিহীন নৈতিকতার
ধূসর জীবন চালায় দেশ, সমাজ
গণতন্ত্রের শিরদাঁড়ায়
প্রবাহিত হয় ‘শক্তি হি কেবলম’
সরকার নামক পাণ্ডাটা
বিচ্ছিন্নতার সন্ত্রাস চালায়।
আমাদের ভালোবাসা
সাজিয়ে রাখো সিঁকের
মনোরম বিনুনির ভাঁজে।
বিপ্লবের সময় হয়েছে,
প্রিয়া!
আরো একটি বিপ্লব
চাই।
(দুই)
মাকে ঘুমোতে দাও
অনেক বিপ্লব, অনেক
স্লোগান
আজ ভোঁতা কাস্তের
মত হয়ে গেছে ।
হৃদয়ের মাঝে তুফান
তোলার মন্ত্রগুলো
অলস বাতাসের মত নেতিয়ে
পড়েছে ।
সবুজের বনে বনে আজ
দাবাগ্নির আগুনের
আস্ফালন
আমাকে হতবাক করে
দেয় ।
নিজের অজান্তেই
মানুষ আঙুলের কালো
ছাপের সাহায্যে
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের
জন্ম দেয় ।
সেই সব সন্ত্রাসীরা
সমস্ত জনগণকে বানিয়ে ফেলে গরু ।
সবুজ বিপ্লবের বুকে
ক্ষুধার্তের আগুন
রক্তে ভিজে তৃষ্ণার্ত
মাটির ফাটল ।
ধর্মের মৈত্রীর বাণী,
অহিংসার কথা যখন
ধর্মগুরু হায়েনাদের
লালসায় অপবিত্র হয়;
তখন অসহায়, নিষ্পাপ
শিশুদের ওপরে
নেমে আসে শয়তানের
কুঠারাঘাত ।
ভগবানের সিংহাসনে
আজ শয়তান বসে আছে -
তাই শত শান্তির নোবেল
নাচে
রক্তলোলুপ পিশাচদের
হাতে ।
আজ আমকে ঘুমোতে দাও
-
কারণ আগামী কাল
আমার হাতে জ্বলে
উঠবে
শতশত শাণিত তরবারি
গর্জে উঠবো আমি হাজারো
অ্যাটম
আর হাইড্রোজেন বোমের
উল্লাসে ।
(তিন)
আমার পরিচয় হোক মানুষ
বন্ধু, কেন আমার
নামে ধর্মের গন্ধ খুঁজো?
কেন প্রশ্ন কর, তুমি
মুসলমান?
তুমি হিন্দু? তুমি
খ্রীষ্টান?
তুমি জৈন? পার্শি?
বৌদ্ধ?
সাম্প্রদায়িকতার
বাণে কেন কর বাকরুদ্ধ?
কেন প্রশ্ন করনা,
তুমি মানুষ?
না অমানুষ?
কেন জিজ্ঞেস কর,
তুমি উঁচু, না নীচু জাত?
যারা করে এমন প্রশ্ন,
তারাই চরম বজ্জাত।
তুমি কি দেখনি কখনও
আই,এস,আই,
যারা মুসল্লিদের
মাঝেও হামলা চালায়?
তুমি কি শুননি কখনো
আর,এস,এস,
মন্দিরের মাঝেও কুকাজে
ব্যাস্ত বেশ।
তুমি কি দেখনি কখনও
নিষ্ঠুর তালিবান
মানুষের রক্ত পানে
তারা কত বেগবান।
তুমি কি ভুলে গেছ
প্রিয়, বজরং দল
মানুষের রক্ত স্নানে
রঞ্জিত করতল।
তুমি কি দেখনি মায়ানমারে
বৌদ্ধ সন্ন্যাসী,
অন্য ধর্মের রক্তের
প্রতি তারা কত পিয়াসী?
আমি হতে চাই না গোঁড়া
ধার্মিক অন্ধ ভক্ত বাবা,
আমি তো পারব না বসাতে
হিংস্র হায়নার থাবা।
লড়াই করব তাদের বিরুদ্ধে
যাদের ধর্মের নামে
উদ্ধত ত্রিশূল, তরবারি;
যারা ধর্মের নামে
দেশ, মানুষ করে ভাগ
ভাঙব তাদের আহামরি।
ধর্মের নামে লুট
হচ্ছে আজও ইজ্জত, সম্পদ, দেশ;
তোমার সাথে আমার
দাঙ্গা বাধিয়ে বক ধার্মিকরা থাকে বেশ।
কোন জাতের নামে নয়
– আমার পরিচয় হোক মানুষ।
যারা জাত ভাঙ্গিয়ে
দাঙ্গা বাধায় তাদের বলব, খামোশ!
(চার)
ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব ?
তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব?
একদম কুম্ভকর্ণের মতো?
এত আর্তনাদ, এত বুক ফাটা কান্না
ইথারে ইথারে ভুলন্ঠিত মানবতার যন্ত্রনা?
তবে সবই নিষ্ফল !
তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ, বিপ্লব?
গণতন্ত্রের নির্মল বাতাস পেয়ে!
অনেক কাল আগে শুকিয়ে যাওয়া সাগর বেলায়,
না স্বার্থান্বেষী জনারণ্যের ভিড়ে
পথ হারিয়ে ফেলেছ?
তুমি কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছ, বিপ্লব?
না ড্রোন, মিসাইলের আগুন ঝলসানো উল্লাসে
আর অ্যাটম, হাইড্রোজেন বোমের রক্তলোলুপ চক্ষু
দেখে
কোন এক পাহাড়ের গুহায়,
না কোন সুন্দরী ষোড়শীর তুলতুলে বুকের গভীরে
মুখ লুকিয়েছ?
গাঢ় অন্ধকারের যোনিদ্বার ফেঁড়ে
একজন এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমার শিয়রে
বুকে ছিল তার এক আকাশ প্রত্যাশা
দু চোখে জ্বলছিল অগুনিত তারার আলো
বলেছিল, “তুমি ঘুমিয়ে গেছ নাকি, ভাই?
বিপ্লব হোক বা না হোক
বিপ্লবী থাকবেই” ।
বুকের ভিতরে দুরুদুরু করছিল ভয় ------
মশাল জ্বালতে পারব কি আমি একেলাই!