অস্তিত্বের ভিক্ষা
চারুন রথিক
আমাকে বলা হয়েছিল সেই সময়ের প্রতিষেধক খুঁজতে। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন আমি খুঁজেছি। আমি চেয়ে দেখেছি রক্তিম দিগন্তে পথিকের ক্লান্তি। শুভ্র বাতাসকে গায়তে দেখেছি তোমার সঙ্গে শেষ দেখার গান। সময় যখন সময়ে শেষ হয়, তখনও আমি প্রতিষেধক খুঁজি।
আমাকে বলা হয়েছিল রাত্রি যাপন আর জীবন যাপনের পার্থক্য বুঝতে। সূত্রের পর সূত্র, অঙ্কের পর অঙ্ক কষে বুঝতে চেয়েছি। আমি বিরাম বিরতিকে ভাড়া দিয়েছি আত্মীয়ের কাছে,
বিনয়ী মননচক্রকে সৃজন করতে দেখেছি তোমার না-বলা কথা। জীবন যখন যাপন অঙ্কের দিশায়, তখনও আমি বুঝেই চলেছি।
আমাকে বলা হয়েছিল, চলতি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুকে স্পর্শ করতে। মনের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে আমি স্পর্শ করেছি প্রত্যেকটি চেতন ঢেউয়ের অবচেতন চূড়া। আমি তরল সময়কে সরল ভেবে বিক্রি করে দিয়েছি কল্পচারীদের কাছে। স্পর্শকে বলতে দিয়েছি তার নিজের ভাষা।
কল্পনা যেখানে কল্পনাতেই শেষ হয়, সেখানেও আমি বিকর্ষণের ঘাত পেরিয়ে আকর্ষণের প্রতিঘাতে ঘুরছি তো ঘুরছি।
আমাকে বলা হয়েছিল, টাকা দিয়ে মাথা ঢাকতে।
সমতল আর জলাভূমির চাতুর্য দিয়ে, পাহাড়-পর্বতের মাধুর্য দিয়ে আমি তো ঢাকতে চেয়েছি। আমি প্রাণের জানালা দিয়ে ঢুকতে দিয়েছি তোমার চতুরঙ্গ লীলা। দোষ দিয়েছি বেনামি ভাগ্যকে। তবু, যে খেলা খেলাতেই শেষ হয়, তার জন্য আমি পরিহাস হতে পারিনি।
আমাকে বলা হয়েছিল, ঈশ্বর অস্তিত্বের ভিখারী নয়, তুমি ওকে ওর জায়গায় রাখো। আমি দলের পর দল, ঝাঁকের পর ঝাঁক, অস্তিত্বের অধিকারকে নাস্তিত্বের নগ্ন চূড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছি। সান্তনাকে শান্ত হতে দিইনি কখনও, দূর্গভবনের দালালকে শুনিয়েছি তোমার নয়নকুমারী গল্প। আধিপত্যের বর্মনাশা দস্যুদের সঙ্গে আপোষ করেছি বারবার। নির্বিচারী রথের চাকা যখন সদাচারী চাদরের মোড়কে পথে পথে ঘোরে, তখনও আমি তার তলায় চাপা পড়িনি।
অস্তিত্বের জন্য কোনো ভিক্ষেই আর আমার কাছে নেই।