(অণুগল্প)
চিঠি
মুহাম্মদ ফারহান ইসলাম নীল
সকাল বেলা কুরিয়ার অফিস থেকে কল করেছিল ৷ আমার
নামে নাকি একটা চিঠি এসেছে ৷ আমি এই সংবাদ শুনে অবাক হয়ে গেলাম ৷ আমাকে চিঠি লেখার
মতো মানুষ এই শহরে নেই ৷ তাহলে কে চিঠি পাঠালো ? কুরিয়ার অফিসের লোকটা ভুল করে আমাকে
কল করেনি তো ?
যাই হোক
বিকাল বেলা কুরিয়ারে গিয়ে সন্দেহটা দূর হলো ৷ যে মেয়েটা আমাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে
সেই মেয়েটাই চিঠি পাঠিয়েছে ৷ আপনারা সবাই জানেন মেয়েটা কে ! তাই মেয়েটার নাম বলছি না
৷ যারা জানেন না তাদের গল্পের শেষে জানতে পারবেন ৷ যাই হোক ভালোবাসার মানুষটার পাঠানো
ভালোবাসা জড়ানো চিঠিটা হাতে নিয়ে বাসায় ফিরলাম ৷
কয়েকদিন যাবত মেয়েটার সাথে কথা হয় না ৷ কল করলে
নাম্বার অফ ৷ মেয়েটা চিরতরে আমাকে ছেড়ে চলে গেল ! আমাকে ছেড়ে চলেই যেহেতু যাবে তাহলে
চিঠি লিখলো কেন ? আর চিঠিতে কী লিখেছে জানার জন্য মনের ভিতর উতাল পাতাল ঢেউ শুরু হলো
৷ আমি মনটাকে শান্ত করতে পারছিলাম না ৷ তাই ভালোবাসার মানুষটার পাঠানো চিঠিটা খাম থেকে
বের করলাম৷
প্রিয়তমঃ-
বকুলফুল,
পত্রের শুরুতে আমার ভালোবাসা নিও৷ আশা করি আল্লাহ
তোমাকে ভালো রেখেছে ৷ দোয়া করি আজকের পর থেকে আরো ভালো থাকবে ৷ কারণ তুমি এই চিঠিটা
পাওয়ার পর থেকে আমি তোমার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবো ৷ আর কখনো তোমাকে ভালোবাসি
বলে বিরক্ত করবো না ৷ এই কালো মেয়েটা কখনোই তোমার কাছে দুই মিনিট সময় চাইবে না ভালোবাসার
জন্য ৷ কখনো বেহায়ার মতো বলবো না তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ ৷ আর কখনো তোমার সাথে কথা
বলার জন্য মধ্যরাত অবধি জেগে থাকবো না ৷ আর কোনো দিন দেখতে পাবে না কালো মেয়েটার মুখখানি
৷ তোমাকে মনে প্রাণে ভালোবাসতাম বলেই র্নিলজ্জের মতো বৈধভাবে কাছে থেকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম
৷ কিন্তু তুমি গায়ের রঙ দেখে আমাকে অপমান করেছো ৷ তোমাকে ভালোবাসতাম বলেই মুখ বন্ধ
করে তোমার অপমান সহ্য করেছি ৷ কিন্তু আমি আর এখন তোমার দেওয়া অবহেলা নিতে পারছিনা ৷
তোমার দেওয়া বিরহে বেদনায় আমি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছি ৷ মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় আমার
আমিটাকে শেষ করে দেই ৷ কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে সিলিং ফ্যানে নিজেকে ঝুলিয়ে দেই না
৷ আজ গায়ের রঙ কালো বলেই তোমার মতো সু-পুরুষকে পাওয়া হলো না ৷ আমি আল্লাহর কাছে দোয়া
করি তোমার জীবনে একটি পরীর আগমন ঘটুক ৷ তুমি পরীটাকে নিয়ে সুখী হও ৷ আমি তো তোমার অন্তরে
আমার জন্য মায়া জন্মাতে পারিনি ৷ কিন্তু আমার অন্তরে তোমার জন্য যতোটুকু ভালোবাসা আছে
তাতে বাকী জীবনটা একলা কাটাতে পারবো ৷ আমার কথাগুলো তোমার কাছে আবেগী মনে হতে পারে
৷ কিন্তু এটাই সত্য কথা ৷ সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ৷ আমি আর লিখতে পারছিনা
৷ আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন সঙ্গীকে তোমার বুকে জায়গা দিও ৷ আমি নাহয় গোপনে কেঁদে কেঁদে
বুক ভাসিয়ে ফেলবো ৷ তোমাকে নিজের থেকেও অনেক ভালোবেসেছি ৷ তাই ভুলে থাকার কল্পনা করতে
পারি না ৷ আমি চাই না আমার জীবনে অন্যকোনো পুরুষ আসুক ৷ আমার আমিটাকে শুধু তোমার করতে
চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু অধিকার তুমি দিলে না ৷ সব শেষে একটা কথা বলতে চাই,তোমার মতো আর
কাউকে ভালোবাসতে পারবো না ৷ তুমি মিশে আছো অন্তরে ৷ আল্লাহ তোমার মনের আশা পূরণ করুক
৷ তোমার জন্য ভালোবাসাটুকু তুলে রাখলাম ৷ আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক৷"
ইতিঃ- তোমার রক্তজবা৷
জান্নাতের পাঠানো চিঠিটা পড়ে আমার নয়ন থেকে
বিরহের অশ্রু ঝরতে শুরু হলো ৷নিজেকে সামলাতে পারলাম না ৷ হুহু করে কেঁদে ফেললাম ৷ ভালোবাসার
মানুষটাকে হারানো কতটা কষ্টের সেটা এখন টের পাচ্ছি ৷ আমি চিঠিটা বিছানার উপর রেখে বাইরে
চলে গেলাম ৷
আজকে খুব
কাঁদতে ইচ্ছা করছে ৷ জান্নাতের বিরহে একটু কান্না করে মনটাকে হালকা করে নিতে চাই ৷
ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার মতো যন্ত্রণা প্রথিবীতে নেই ৷ জান্নাত ফিরে আসুক ভালোবাসার
মানুষটার কাছে ৷ আবার ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হোক ৷ আমি আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে
আছি ৷ ঠিক এভাবেই কেটে যাক জীবন ৷ ভালো থাকুক ভালোবাসার জান্নাত ৷