ছোট গল্প
পরজীবী
লেখনী: পিউ সাহা বাড়ৈ
আজ তাকে
দেখে মনে হয়, সে যেন কত গভীর ভাবনায় মগ্ন। চোখমুখে শত দুঃখের ছাপ। সেই
চোখ নাক, মুখ ,ঠোঁট আর ঐ ভাঙ্গা মন,দেখেই বোঝা যায়।
সকলেরই
চিন্তা ভাবনা থাকে কারও কম, কারো বেশি। যখন আমাদের চিন্তা ভাবনা না থাকে, চোখ মুখ নাক
দেখে বোঝা যায়,জীবনের খুশির জোয়ার এবং যারা ভিতরে ভিতরে গুমড়ে গুমড়ে মরে……সেই ভাঙ্গা
হৃদয়ের ছাপ, শত ব্যথার ছাপ মুখমণ্ডলে আকড় কেটে যায়, তখনও দেখা যায় সে কতটা বিধ্বংসী।
সে
আমায় একটি গল্প করেছিল, গল্প সঠিক নয় বাস্তব
ঘটনাই।
তার একটি ছোট ছেলে
আছে। ছেলেটির ছোটবেলা থেকে গাছ লাগানোর ভীষন শখ। ছেলেটি তার বাড়ীতে কোনকিছুর বীজ পেলেই
সে আগ্রহের সাথে সেই বীজ মাটিতে পুঁতে দেয়। তার ঐ নরম হাতের স্পর্শ এবং আগ্রহের অনুভূতি
ও গাছের প্রতি ভালোবাসা দেখে, কোন বীজ ই বোধহয় ছেলেটিকে নিরাশ করে না।
একদিন সে হাতের কাছে
একটি কুমড়োর দানা পেলো। ছেলেটি খুব আনন্দের সাথেই তার মাকে সাথে নিয়ে সে বীজটি কে
মাটিতে পুঁতে দিলো, খানিক জল ছিটিয়ে দিলো।
আস্তে আস্তে গাছটি ক্রমশ বাড়তে লাগলো। সেই
লতানো কুমড়ো গাছের পাশেই ছিল একটি বড় আম গাছ।
আমরা সকলেই জানি কুমড়ো গাছ ‘লতানো উদ্ভিদ’
তাকে ‘পরজীবী উদ্ভিদ’ বলা হয়। অন্য কোন গাছ অথবা কোন কিছুর নির্ভর ছাড়া সে তো কোন ভাবে বেড়ে
উঠতে পারে না।
ছেলেটির মা হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলো তার ছেলের
লাগানো গাছটি বড় হয়েছে। সে মনে মনে ভীষণ আনন্দিত হলো। এবং গাছটি যাতে বেড়ে ওঠে, তার জন্য সেই পাশের গাছটির সাথে একটি
নারকেলের ডগা গাছের সাথে বেঁধে দিল। যাতে গাছটির বেড়ে উঠতে কোন অসুবিধা না হয়।
আজ গাছটি
স্বাবলম্বী ভাবে বেড়ে উঠেছে তার থেকে ফুল, ফল এবং শাকপাতা তো আছেই। আমরা সকলেই জানি
যে কুমড়ো গাছের ফুল,ফল, ডালপালা কোনটাই আমরা বাদ দি না। সবটাই খাদ্য রূপে গ্রন্থ করা
হয়। সবকটাই রান্না করে খাওয়া যায়। তা তো হলোই, এবার ফেরা যাক আসল কথায়, কেউ কি
কোন কিছু লক্ষ্য করলাম এই বাস্তবটি থেকে? যদিও না……।
তাহলে
ঘটনাটা বিশ্লেষণ করা যাক।
সবাই
আমরা, ঐ পরজীবী গাছটিরই মতো; যেভাবে বেড়ে উঠছে,কিভাবে তার ফল ফুল এবং ডালপালা দিয়ে
আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসাবে আমাদের খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু এটাই লক্ষ্য
করলাম। কিন্তু কেউ কি লক্ষ্য করলাম, গাছটার কি স্বার্থ আছে ।
তুমি
বেড়ে ওঠো এই স্বার্থপর মানুষ গুলোর জন্য। তাদের সাহায্যের জন্য। তোমার নিজের কোনো বিনিময়ে
প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই, যদিও তোমাকে কেউ ই মনে রাখবে না। কিন্তু ওই যে নিষ্পাপ বাচ্চা ছেলেটি সে মনে রেখে দিয়েছে ,সে মনে
রাখবে তোমায়। কারন সে নিষ্পাপ তার মনে কোন জটিলতা নেই, হিংসা নেই ,বিদ্বেষ নেই, স্বার্থপরতা
নেই। আর বাকি রইল মানুষের কথা তারা তো নিঃস্বার্থ ভোগী।
তারা নিজেরাই একে অপরের কথা ভাবে না।
তোমার
কথা তো ছেড়েই দাও। তুমি তো একটা উদ্ভিদ।
তারা তোমাকে গিলে
খেয়ে নিয়ে মুখ মুছে সব ভুলে যাবে।
লেখক প্রথমেই যে মেয়েটির কথা বলেছিল গল্পের
শুরুতেই, সেই মেয়েটির জীবনও
আজ পরজীবী নিঃস্বার্থ উদ্ভিদের মত। সেই মেয়েটির নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তাকে টুকরো
টুকরো করে দিয়েছে। তার নিঃস্বার্থতা জীবন, বিলিয়ে দেওয়া ভালোবাসায়।