বহুগামী আমি-১০২-সৈয়দ আসরার আহমদ

 


বহুগামী আমি 

সৈয়দ আসরার আহমদ

পর্ব-১০২

 

  কদিন সন্ধ্যেয় মেসে বিশ্বজিৎদার সঙ্গে গল্প করছিলাম এমন সময় শামিমভাই এসে হাজির৷ তিনি কামরায় ঢুকেই হাঁক দিলেন বিশ্বজিৎ দেলোয়ারকে পেয়ে খুব গল্পে মজেছ বলে মনে হচ্ছে!

- আরে শামিমদা যে, এসো এসো৷ কি মনে করে?

- আরে ওই ছোকরাটার জন্য আসতে হল৷ দেলোয়ার তোমার বায়ো ডাটা রেডি করা আছে৷

- হাতে লেখা আছে৷ টাইপ করা হয় নি৷

- কালকে সকালে টাইপ করে সন্ধ্যেয় আমার ঘরে নিয়ে যাবে৷ তোমার স্বপ্নাভাবি তার বান্ধবি সুমিত্রাকে বলেছে৷ সুমিত্রা বায়ো ডাটা চেয়েছ৷ 

- জ্বি ভাইয়া নিয়ে যাব৷

- বলো বিশ্বজিৎ কেমন আছো?

- আমার বেঁচে থাকা মরার সমান৷ বইই এখন আমার সঙ্গী তাকে নিয়েই বেঁচে আছি৷

- অনেক পড়াশোনা করেছ এবার লেখালেখি কর৷

- উরে বাবারে! লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ 

- কি যে বল বিশ্বজিৎ! মানুষই তো লেখালেখি করে না কি ফেরেস্তারা লেখালেখি করে?

- শুনেছি ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের কার্যকলাপ ফেরেস্তারা লিখে থাকেন৷

- ও তো পৃথক বিষয়৷ ফেরেস্তারা তো উপন্যাস বা ছোটগল্প লেখেন না৷

- তা ঠিক৷

- তাহলে তুমি কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়  দেখবে আপনা থেকে কলম চলতে থাকবে৷

- কি যে বলো শামিমদা আমি লিখতে পারব? বিশ্বাস হয় না!

- বিশ্বাসে মেলায় বস্তু.. কথাটা শুনেছ তো এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস দরকার, তাছাড়া কিছুই লাগবে না৷

- উপন্যাসের বা গল্পের প্লট পাবো কোথায় ?

-কেন জীবনে চলার পথে অজস্য ঘটণাবলীর সম্মুখীন তুমি হয়েছ এবং হবে৷ সেগুলো তো প্লট হিসেবে কাজ করবে৷ তাছাড়া তোমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা অর্থাৎ রেহানা আর তোমার বিয়োগান্তক প্রেম কাহিনী এবং আমার ও স্বপ্নার দীর্ঘ বিরহ যন্ত্রণা ভোগ করে মিলনের কাহিনী কি ভাল প্লট নয়? সেইসব সত্য ঘটণাকে কল্পনার রসে সিক্ত করে পরিবেশন করলে লোকে খাবে না বলে কি তোমার মনে হয়?

- না; তা মনে হয় না৷ এ তো দেখছি শামিমদা তুমি আমাকে সাহিত্যিক করেই ছাড়বে৷

- এভাবে তো বড় বড় সাহিত্যিকরা বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের আসরে হাজির হয়েছেন৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি পারবে৷ কেননা তুমি বিশ্বসাহিত্যের অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলোতে নিজেকে enrich করেছ৷

- তুমি আমাকে খুব ভালবাসো তাই এই প্রত্যাশা তোমার মনে জন্মেছে৷ আচ্ছা যখন তুমি বলছ তখন আমি লেখার কথা মাথায় রাখলাম৷ লেখার চেষ্টা করবো৷ আর প্রথম উপন্যাসের গল্পটা তোমার আর আমার প্রেমকাহিনী নির্ভর লেখার চেষ্টা করবো৷ লেখা হলে তোমাকে জানাব৷ তুমি পড়ে বলবে কেমন লাগল৷

- That's like a good boy. All the best.Wish your great success in this field.

 Thnx a lot Shamimda.

- Most welcome.

 বিশুদা আমাকে বললেন, বাবুর্চি সাহেবকে তিন কাপ চা দিতে বলো৷

 চা খেয়ে শামিমভাই চলে যাবার সময় আবার বললেন আগামীকাল অবশ্যই বায়োডাটা দিয়ে আসবে৷

- জ্বি অবশ্যই যাব৷ টাকা পয়সা আছে?প্রয়োজনে বলবে৷ 

- জ্বি টাকা আছে লাগবে না৷

- শামিমদা তুমি ভাববে না দেলোয়ারের যতদিন না কিছু একটা ব্যবস্থা হচ্ছে ততদিন আমি দেখব৷

- খুব ভাল কথা বিশ্বজিৎ৷ তোমার উদার্য প্রশংসার দাবি রাখে৷

- আরে শামিমদা কি বলছ দেলোয়ার তো আমার ছোটভাইয়ের মতো৷ হুটপাট একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল৷ ওর এখন বিপদ৷ আর এই বিপদের দিনে আমাদের তার পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলে আমি মনে করি ৷

- আমিও ছোকরাটার জন্য খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছি৷ তোমার বৌদিও দেলোয়ারকে খুব লাইক করে৷ ব্যবস্থা একটা কিছু হবে তবে সময় লাগবে৷

- চাকরি তো গাছের ফল না যে পেড়ে দেবে৷ সুপারিশ ও ভাগ্য দুটোই জরুরী৷

- সেটাই আসল কথা৷ বেশ ভাল ছিল৷ এখানে এতদিনে চাকরি পরীক্ষা দিয়ে একটা ব্যবস্থা হত৷ বদখেয়ালে বাংলাদেশ ছুটল৷ তাও আবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত সর্বনাশা পরিস্থিতির ঘূর্ণাব্যতে গিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল৷ কি দূর্মতি হয়েছিল জানি না৷

- ছাড়ো শামিমদা, ও আবেগী ছেলে ভুল করে অভিজ্ঞতা হয়েছে আর করবে না৷

- যারা ভুল একবার করে তারা বারবার ভুলের শিকার হয়৷ আমি নিজে দেখেছি কয়েকজনের জীবনে লাগাতার ভুলের সমারোহ৷ তাই আমি শঙ্কিত৷ এই ছোকরাটাকে আমি সবচেয়ে বেশি স্নেহ করতাম৷ স্নেহের কারণে অমঙ্গল চিন্তা হয়তো বারবার ঘুরে ফিরে আসছে ৷

- না, ভেবে না শামিমদা ও এখন থেকে আমাদের কথামতো চলবে৷ আর আমার তো কেনও বার্ডেন নেই দেলোয়ারই না হয় আমার বার্ডেন হল ৷ আমি সামলে নেব৷ তার উপরে তুমি তো আছো৷ ওর কোনও চিন্তা নেই৷

 শামিমদা গুড নাইট বলে চলে যাচ্ছিলেন আমি তাঁকে নিচে গিয়ে সি- অফ করে এলাম৷

 কামরায় ফিরতেই বিশ্বজিৎদা বললেন, দিলু এখন থেকে যা কিছু করবে আমাদের জানিয়ে করবে৷ তুমি তো প্রচণ্ড আবেগী ছেলে৷ এই ধরণের ছেলেরা অদূরদর্শী হয়৷ তবে এদের মন খুব উদার৷ এরা সাধারণত পরোপকারী৷

- একবার ভুল করেছি আর করছি না৷ এরপরে সব বিষয়ে আপনাদের জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেব৷

 

চলবে………

 

Post a Comment

Previous Post Next Post