ভালোবাসার শেষ চিঠি
মনিরা ইসলাম
প্রথম পর্ব
অনিকেত এবং নীলাশা দুজন ভীষণ ভালো বন্ধু ।
দিনগুলো তাদের ভালোই হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল । দু'জন দু'জনকে ভীষণ ভালোবাসতো । মজার
ব্যাপার হলো ওরা কেউ কাউকে দেখেনি কখনো । শুধু প্রতি সপ্তাহে দুটো করে চিঠি আসতো দু'
জনের নামে । দু'জন দু'জন কে ভালোবেসে ছোট নামে ডাকতো ।
নীলাশা কে অনিকেত নীল বলতো আর নীলাশা অনিকেত
কে অনি বলে ডাকতো । অনি ছিল ভীষণ মেধাবী এবং সুদর্শন যুবক । বাংলায় অনার্স নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি হয় । বাংলায় তার বেশ দখল ছিল, সেটা তার চিঠি দেখলেই বোঝা যায় । নীল ও পড়াশোনায়
মন্দ ছিল না । রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ।
নীল হোস্টেলে থাকতো, তখন মোবাইলের প্রচলন
খুব বেশি ছিল না; তাই চিঠি টাই ছিল ভাব বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম । প্রতি সপ্তাহের রবিবার
আর বুধবার ছিল নীলের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন । এই দুই দিন অনির চিঠি আসতো । এক সময় হোস্টেলের
প্রতিটি মেয়ের কাছে অনির চিঠি পরম সুখ স্মৃতি হয়ে গেল । পিয়ন এলেই সবাই আকুল আগ্রহ
নিয়ে দেখ তো অনির চিঠি এসেছে কিনা । একেক সময় তো এমন ও হয়েছে নীল সবার পড়ার পরে চিঠি
টা হাতে পেয়েছে । সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চিঠি পড়তো আর "নীল "কে বলত কবে দেখতে
পাব তোমার "অনি "কে । অনির একটা চিঠির অংশ -
প্রিয় নীল ............ অশ্বত্থের ছায়ায় বসে
আছি আর ভাবছি আর কত রাত আকাশের তারাগুলো একা একা গুনবো । ফাগুনের আগুন ঝড়া দিন গুলো
এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে । বছরে কতগুলো পুর্ণিমা একা একা কেটে গেল হিসাব কে রেখেছে
? নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে সময় কত সেকেন্ড কত মিনিট, কত ঘন্টা বিনিদ্র কেটেছে শুধু তোমার
কথা ভেবে । আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চাইনি কখনো কিন্তু হঠাৎই তুমি আমার
স্বপ্ন হয়ে এলে । তোমাকে দেখতে পাব কিনা জানিনা । তুমি দেখতে কেমন তাও জানতে চাইনা
কারণ তুমি আমার স্বপ্ন আর আমি পৃথিবীর সমস্ত রুপ দিয়ে তোমাকে সাজিয়ে তুলেছি আমার মনের
আল্পনাতে । এখানে কোন পাপ নেই, কোন মিথ্যা নেই, তোমাকে আমি আমার মতো করে আদর করি, কল্পনায়
জড়িয়ে ধরি একটু একটু করে তোমার শরীরের গন্ধ অনুভব করি । আজ আকাশ টা ভীষণ বৈরি, কালো
মেঘে ঢেকে গেছে । বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, আমি বিদ্যুতের ঝলকানির মাঝে তোমার হাসি মুখ দেখতে
পাচ্ছি । তোমার ছোয়া অনুভব করছি । তোমার ও কি এমন হয় ? হয়তো বলবে এ আমার পাগলামি ।
নীল আকাশে কত তারা, তুমি কি তারাদের কেউ ? আমি গভীর রাতে কান পেতে তোমার কথা শুনি ।
এক, এক করে মনের সমস্ত দরজা খুলে যায়, সব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাক তুমি, আমি পলক হীন
চোখে তাকিয়ে থাকি, আমি নিমজ্জিত হতে থাকি তোমার ঘন কালো চুলের গন্ধে বিশ্বাস কর নীল
আমি তোমাকে আমার শিরায় উপশিরায় খুঁজে পাই, সে যে কি অনুভূতি ! বোঝাতে পারবো না তোমাকে
। নীল ভীষণ ক্লান্ত লাগছে । একটু ভালোবেসে ছুয়ে দাও আমাকে । আমি সুখের নিদ্রায় ঘুমিয়ে
যাব তোমার চিঠি গুলো বুকে জড়িয়ে । ভালো থেক নীল ।
.....................................................তোমার অনি
এরকম হাজার টা চিঠি আছে অনির । নীল এখনো মনের অজান্তেই স্মৃতির পাতা গুলো উল্টোতে থাকে আর চিঠি গুলো পড়ে । অনি ছিল কলেজের সেরা একজন, রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিল । প্রতিদিন মিছিল, মিটিং করে ক্লান্ত কিন্তু চিঠি লিখতে কখনো ভুল হয়নি । নীল ও সপ্তাহে দুটো চিঠি লিখতো অনিকে । না দেখেও কেউ কাউকে এতো ভালো বাসতে পারে “নীল” আর “অনি”কে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না ।
চলমান
চমৎকার উপস্থাপনা ।পাঠনে মুগ্ধ হলাম ।সুস্বাগতম ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ।
ReplyDelete