ভালোবাসার শেষ চিঠি


ভালোবাসার শেষ চিঠি

   মণিরা ইসলাম

            পর্ব ২

আগেই বলেছি " অনি" ছিল অত্যন্ত মেধাবী। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার কাছেই প্রিয় মুখ। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ও বেশ পরিচিত ছিল। একদিন হঠাৎই চিঠি আসতে এক সপ্তাহ দেরি হলো। নীলাশার চোখে মুখে দুঃচিন্তার ছাপ। এক পর্যায়ে " নীল " কেঁদেই ফেলল। হোস্টেল এর মেয়েরা ও বেশ চিন্তায় পরে গেল। এক সপ্তাহের দুঃচিন্তার অবসান ঘটিয়ে সেই কাংখিত চিঠি এলো। চিঠি টা হাতে পেয়ে " নীল " যেন প্রাণ ফিরে পেল। ভালোবাসা এমন ও হয়, আবেগ যেন বাধ মানছিল না। চিঠি টা হাতে নিয়ে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল। চিঠি টা খুলতেই " নীলের" দু'চোখ আবারও ছলছল করে উঠলো।

"অনি" লিখেছে নীল চার দেয়ালের মাঝে যেন অমাবস্যা নেমে এসেছে। ছোট্ট একটা গ্যাস লাইটের আলোতে তোমার মুখটি আঁকার চেষ্টা করছি, তুমি হয়তো ভীষণ কষ্ট পেয়েছ গত সপ্তাহে তোমাকে লিখতে পারিনি। রাতের আধারে রাজনীতির সাক্ষী হতে এলাম আমি এখন কারাগারের ছোট্ট একটা কামরায় অনন্ত নিরবতার কোলে বন্দী। জানিনা মুক্তি মিলবে কিনা! নাকি ছুটি দেওয়া হবে চিরতরে, চলে যাব শান্তির ঘুমের দেশে। যদি এরকম কিছু হয় একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে মনে, তোমাকে না দেখার আক্ষেপ। নীল যদি এরকম কিছু ঘটে যায় তবে তোমার কাছে আমার অনুরোধ আমার লাশটা তুমি নিয়ে যেও হাসপাতালের মর্গে থেকে। আমার আরও একটা ইচ্ছে আছে শেষ বারের মতো আমাকে একটু ছুয়ে দিও আর তোমার লেখা চিঠি গুলো আমার আলমারিতে সাজানো আছে, সেই চিঠি গুলো আমার কফিনে পুরে দিও। কলম টা কনস্টেবল এর কাছ থেকে দশ মিনিটের জন্য নিয়েছিলাম, তাই অনেক কিছু লেখার থাকলেও নিয়তি আমাকে বাধ্য করল রেখে দিতে। ভীষণ ভালো থেক নীল। আমাকে আকাশের মাঝে খুঁজে নিও।

                                                …………………. তোমার অনি

চিঠিটা পড়ে নীল অনেক ক্ষন দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কেঁদেছিল। আর বিধাতার কাছে প্রার্থনা করছিল " অনির " যেন কোন ক্ষতি না হয়। হয়তো বিধাতা " নীলের" আত্ম চিৎকার শুনেছিলেন। এক সপ্তাহ পরই " অনি" জামিন পেল। " অনি" বাসায় না গিয়েই পি,সি,ও থেকে ফোন করেছিল হোস্টেলের ফোনে। "নীল " এর আগে কখনো অনির সাথে ফোনে কথা বলেনি তাই উচ্ছ্বাসে হাত পা কাঁপছিল। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল মিষ্টি একটা কণ্ঠ। হ্যাঁলো " নীল " কেমন আছ। নীল কথা বলতে পারছিল না ওপাশ থেকে আবার বলে উঠলো একি নীল তুমি কাঁদছো? আমি ভালো আছি নীল, আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নীল আস্তে আস্তে শুধু বলল এবার রাজনীতি টা ছেড়ে দাওনা অনি! ওপাশ থেকে উত্তর এলো জীবন টা যুদ্ধক্ষেত্র, আমি চাইলেই সব ঠিক হবে না নীল।

চলমান


Post a Comment

Previous Post Next Post