ভালোবাসা কারে কয়

 

 গল্প

ভালোবাসা কারে কয়

মনিরা মাসিদ ।

 

সকাল সকাল মায়াদেবীর ঘরে তার ছাব্বিশ বছর বয়সী নাতনি এসে জানতে চাইলো -- আচ্ছা দিদা তোমার এই দীর্ঘ জীবনে ভালোবাসার উপলব্ধি ঠিক কেমন ?

মায়াদেবী বললেন -- কি জানতে চাইছ দিদিভাই ?

--- ভালোবাসা কারে কয় ?

--- দিদিভাই ভালোবাসা হলো অনুভব, হলো উপলব্ধি, ভালোবাসা হলো অভ্যাস ।

ভালোবাসা মানে হিরের দুল বা দামি ঘড়ি কিনে দেওয়া নয় । ভালোবাসা মানে শুধু দিনে চার বার I love you বলা নয় । ভালোবাসা মানে শুধু দামি গিফট বা জন্মদিনে বিরাট পার্টি দেওয়া নয় ।

----- যেমন

* ভালোবাসা হলো দুজন দুজনের শখ, ইচ্ছে, ভালোলাগাকে গুরুত্ব দেয়া ও সেই গুলো করতে পারার মতো সুযোগ তৈরি করে দেয়া ।

* গরম লাগে বলে কিচেনে ছোট্ট ফ্যান লাগিয়ে দেওয়ার মধ্যেও থাকে প্রেম ।

* অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লে, জানালার পর্দাটা ভালো করে টেনে দেওয়ার মধ্যেও থাকে গভীর ভালোবাসার প্রকাশ । এ গুলো হল অনুভবের বিষয়, উপলব্ধির বিষয় ।

---- এ না হয় বুঝলাম তোমার অনুভব আর উপলব্ধির কথা । কিন্তু তুমি দীর্ঘ দাম্পত্যের একঘেয়ে গতানুগতিক জীবনের মধ্যে, অভ্যাসের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা কোথায় দেখলে ?

---- দিদিভাই, অভ্যাসের মধ্যেই তো লুকিয়ে থাকে প্রেম । আর অভ্যাসের প্রেমই তো বার্ধক্যের জীবন - যাপন লাবণ্যময় করে তোলে ।

·        ওষুধটা সে নিয়মিত খায় জেনেও, প্রতিদিন জিজ্ঞেস করা, ওষুধটা খেয়েছো তো ?

এই অভ্যাসেও থাকে প্রেম ।

·        সকালের চায়ের সঙ্গে, নিউজ পেপারটা গুছিয়ে দেওয়ার মধ্যেও থাকে ভালোবাসার ছোঁয়া ।

·        রাস্তাটা সে একাই পার হতে পারে জেনেও, রাস্তা পার হওয়ার সময় আলতো হাতে ছুঁয়ে থাকার মধ্যেও থাকে মায়া জড়ানো ভালোবাসা ।

---- ও দিদা তাই তো এ ভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি আমি ।

---- তা দিদিভাই, তুমি আজ সকাল সকাল এই বুড়ির সাথে প্রেম -ভালোবাসা নিয়ে

পড়লে কেন ? দুদিন এসেই বরের বিরহে কাতর হয়ে পড়লে নাকি ?

   ---- কাতর না ছাই, দেখনা কালরাতে ঘুমানোর আগে কথা বলতে গেলাম তো সে বলল, সে নাকি অফিসের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত, তার নাকি কথা বলার সময় নেই, লাইনটা কেটে দিল, আবার করতেই ধরলো তো নাই, ফোনটাই বন্ধ করে দিল । তো সকালে উঠে ভাবলাম, রাতে নিশ্চয়ই অনেক গুলো মিস্টি মিস্টি message পাঠিয়ে রেখেছে তাড়াতাড়ি ফোনটা খুললাম কিন্তু কোথায় call কোথায় message ! তো আমিও তো ছাড়বো এর জবাব চাই, আবার ফোন এবার জবাব চাই ।ফোনটা ধরে তোমার নাতজামাই কি বলল শুনবে ?

সে বললো, তার নাকি এখন অফিসে বসের সাথে হেব্বি ঝামেলা চলছে, তার এখন

মাথার ঠিক নেই, এখন কথা বলতে গেলে রাগের মাথায় আমাকে কি বলতে কি বলে দেবে, তখন

আমার সেটা ভালো লাগবে না । অকারন আমাদের মধ্যে ঝামেলা হবে, তাই এখন বেশি কথা না বলাই ভালো, সব ঠিক হয়ে গেলে সে নিজেই কথা বলবে ।

এবার বুঝতে পারলে, তোমার নাতজামাইয়ের ভালোবাসার নোমুনা ।

---- দিদিভাই ভালোবাসা কি অতই সোজা । ভালোবাসায় চাই স্বাধীনতা,

এই স্বাধীনতা মানে পরকিয়ার স্বাধীনতা নয়। এই স্বাধীনতা মানে কথা বলার স্বাধীনতা, দেখার

স্বাধীনতা । যেমন- একটা সুন্দর মেয়ে দেখলে তুমি যদি সুন্দর বলতে পারো তাহলে সেও বলতে পারে, সুন্দর দেখার চোখ সবারই সমান । আবার একটা সুন্দর ছেলে দেখলে ও তাই । দিদিভাই ভালোবাসায় থাকবে স্বচ্ছতা, ভালোবাসায় থাকবে দায়বদ্ধতা, ভালোবাসায় থাকবে কর্তব্য- নিষ্ঠা । আর যদি বলো বিশ্বাস ? আমি বলব স্বচ্ছতা থাকলে বিশ্বাস এমনি এমনি এসে যাবে । স্মার্টফোন হাতে নিয়ে যে ভালোবাসা যাচাই করে দেখতে ইচ্ছে করে,সে ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু দিদিভাই ????

আর সব শেষে বলি দিদিভাই --- ভালোবাসা মানে যে অভিমান , যে অপমান,রাগ, দুঃখ, টেনশন ( তোমাদেরই ভাষায় বলি ) কারো উপর ঝেড়ে হালকা হওয়া যায় না, সেগুলো ভালোবাসার মানুষের উপর ঝেড়ে হালকা হওয়া যায় । হোক না সে তুচ্ছ কারণে, হোক না সে একটু অন্য রকম ভাষায় । কারণ ভালোবাসার মানুষই বোঝে কোন কথাটা

সে কেন বলছে,কি কারনে বলছে । কোন কথাটা সে অন্তর বলছে আর কোন কথাটা সে রাগের বশে কাথার কথা বলছে । আর বোঝে বলেই তো ভালোবাসার মানুষ কে সব কিছু বলাও যায়,ও ভালোবাসার মানুষ কে ক্ষমাও করা যায় ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post