ভারতবর্ষের বুকে
মুসলিমরা নাগরিকত্বহীন হতে চলেছে
- আজিজুল
হাকিম
***********************
বহু প্রতিবাদ ও সারা দেশ নাগরিক সংশোধনী বিল বা
ক্যাব-এর বিরুদ্ধে উত্তাল
হলেও শেষ পর্যন্ত লোক সভায় এই বিলটি গৃহীত হল । বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এই বিল
এনে মুসলিমদেরকে ভারতের বুকে নাগরিকত্বহীন করতে চায়ছে । যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী
অমিত শাহ বারবার বলছেন এই বিল সংখ্যালঘুদের বিরোধী নয় । কিন্তু এটি
ভাওতাবাজি মৌখিক কথা ছাড়া কিছুই নয় । এটি একদম সংবিধান বহির্ভূত কাজ এবং সংবিধানের
১৪ নং ধারার বিরোধী । ১৪ নং ধারায় সকল ভারতীয় নাগরিকদের সমান অধিকারের কথা বলা
হয়েছে । আর এই
নাগরিক সংশোধনী বিল যদি রাজ্য সভাতেও পাশ হয়ে যায়, তাহলে ? তাহলে ভারতীয় নাগরিকরা দুটি মেরুতে আশ্রয় নিবে ।এক
দিকে সব ধর্মের নাগরিক আর একদিকে মুসলিম । বড্ড ভয়ঙ্কর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে । যদিও
সকল ধর্মের, সকল বর্ণের শুভবোধ
সম্পন্ন মানুষেরা এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এর বিরোধিতা করে আসছেন; এটাই
আসল ভারতবর্ষ চিত্র । একমাত্র
ভারতবর্ষের বুকেই দেখা যায় একটি সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের দুর্দিনে তাদের
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে । তাদের দেহ-মন অন্য সম্প্রদায়কে বাঁচানোর জন্য উৎসর্গ
করবে ।
কারণ
“বৈচিত্রের মাঝে একতা” Unity in diversity- এই কথার মাধ্যমেই এতদিন সারা বিশ্বের
দরবারে ভারতবর্ষের চরম গৌরব প্রচারিত হতো । আর এই সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে এই গৌরবের
পালক একটি একটি করে খসে পড়ছে । আমরা সকলেই জানি; কিন্তু ধর্মীয় আবেগে ভারতবর্ষের
অনেক নাগরিককে অন্ধ করে রাখার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই বক ধার্মিক সরকার ।
সরকার এদেরকে ধর্মের মদে মাতাল করে রাখছে আর ভারতবর্ষের আর্থিক কাঠামোকে ধ্বংস করে
দিচ্ছে ।
মুফতি
মেহবুবার মেয়ে সানা ইলতিজা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘‘ভারত— মুসলিমদের দেশ
নয়।'' মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন বাংলায় এসব চলবে না । অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন,বিলটি ‘সংখ্যালঘুদের
স্বার্থ বিরোধী’ ।
কিন্তু তাতেও কি থেমে থাকবে সরকারের মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষ ?
সরকার
সমগ্র ভারতবর্ষকে এক অন্ধত্ব ও বর্বর যুগে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে । ওয়াইসি
বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব
সংশোধনী বিলের পরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এনআরসি আসবে, এরমধ্যে ‘যারা মুসলিম নয়’
তাঁরা সকলেই নাগরিকত্ব পাবে। এবং মুসলিমদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। বিজেপি
সরকার মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয় বরং রাষ্ট্রহীন করতে চাচ্ছে ।
আর
রাষ্ট্রহীন হলে মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতো অবস্থা হবে । যেভাবে
মায়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিমদের করেছিল ।প্রথমে তাদেরকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করেছিল
। তারপর তারা হারিয়েছিল তাদের ধনসম্পদ । তাদের শিক্ষা । তাদের অধিকার । তাদের কাজ
। তারপর তাদেরকে রাখাইন প্রদেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল । তাদের জীবনকে এক কঠিন
অন্ধকারে কবরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছি । তারপরের বর্ণনা আপনারা সকলেই জানেন । কিভাবে
গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন করা হল ।তারপর তারা উদ্বাস্তু হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
হারিয়ে গেল । তাহলে কি ভারতবর্ষেও মুসলিমদের অবস্থা একি রকম হতে চলেছে ? তারাও কি
তাহলে হারিয়ে ফেলবে তাদের আত্মীয় স্বজন ? তাদের ঘর-বাড়ি ? তাদের সাজানো ধন সম্পদ ?
তাদের স্বপ্ন, তাদের জীবন ? এমন অনেক হাজারো প্রশ্ন অনাগত ভবিষ্যতের বুকে
চিহ্ন রেখেই যায় ।