(ছোটগল্প)
পুনি
- আজিজুল হাকিম
আমি একটি মৃত লাশের ময়দানে হেঁটে যাচ্ছিলাম। অসংখ্য মানুষের সারি সারি লাশ। এদের সকলেই মারা গেছে অবেলায় - অপরিপক্ক অবস্থায়। অনেকে আবার অন্যায্যভাবেও মারা গেছে। এই সব মৃত্যুকে আমরা ইমম্যাচিউর ডেথ বলতে পারি। এদের সকলের মনেই ছিল রঙিন আশা, আরও অনেকদিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
সেই মৃত্যুর ময়দানে আমি একাই হেঁটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার দেহকে আমিই দেখতে পাচ্ছিলাম না। কেবল আমার ছায়া সামনে হেঁটে চলেছে। সেই ছায়াকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। মেঘের ছায়ার মতো সেই ছায়াটি এক একটি লাশের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
এমন সময় ওই ময়দানের অপরপ্রান্ত থেকে একটি চিৎকার ভেসে এল। খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর। শব্দটি যেদিক থেকে এল আমি চোখ তুলে সেদিকেই তাকালাম। দেখলাম, পুনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে। নিস্পলক চোখ।
আর ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি বিছানা ছেড়ে ধড়পড় করে উঠে পড়লাম। তারপর শোকস্তব্ধ অবস্থায় বিছানায় বসে থাকলাম।
প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেল ওকে আমি দেখিনি। দেখার কথাও নয়। কারণ যেদিন আমি ওকে কাঁধে করে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ওর তিনটি বাচ্চা ভীষণ ভীষণ কান্না করছিল। মা হারানোর শোকে ওরা উন্মাদ হয়ে গেছিল। তখন আমার চোখ থেকেও ঝর ঝর করে অশ্রু ঝরে পড়ছিল। ওর বড় ছেলেটা আমার সঙ্গে গেল। তারপর ওকে নিয়ে গিয়ে কবরের পাশে রাখলাম। ওর ছেলেটা আমার কার্যকলাপ দেখছিল। ও নির্বাক। কেবল দুই চোখের কোন ভিজে গেছে।
কবরটি ঠিকঠাক করে পুনিকে অন্ধকারের গভীরে রেখে দিলাম। যখন বাড়ি ফিরলাম তখনো ওর বাচ্চারা আকাশ ফাটা চিৎকারে কান্নাকাটি করে আমাদের বাড়িটিকে শোকাচ্ছন্ন করে তুলছিল। তবে ওরা বোধ হয় ঠিক বুঝতে পারল না, ওদের মা আবার আসবে কিনা। ওরা তো দুদিনের বাচ্চা মাত্র। ওরা কেন কান্না করছে? সেটা বোঝাও খুব মুশকিল। মায়ের শোকে, না প্রকৃতগতভাবেই?
ওকে যখন বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম তখন ও ছিল একটি কিশোরী প্রাণচঞ্চল বালিকা। তখনো যৌবনের বাতাস ওর শরীরে খেলত শুরু করেনি। ওকে যেদিন নিয়ে এসেছিলাম সেদিন ভেবেছিলাম নতুন বাড়িতে ও খুব কান্না করবে। কিন্তু না, ও একটুও কান্না করেনি। এমনকি মনে হয়েছিল ও আমাদের বাড়িতে এসে খুশিই হয়েছে। তারপর ও আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল। আশেপাশের লোকজনের কাছে পরিচিতি পেল। কেবল তাই নয় ও যেহেতু আমার বাড়িতে এসেছে তাই আশেপাশের লোকের কাছে একটা এক্সট্রা কদরও পেল। কারণ আমার এই এলাকাতে সামান্য হলেও তুলনামূলক একটু বেশিই কদর আছে। কারণ আমি ছোটবড় সকলের সঙ্গেই অতি আধারণভাবে মেলামেশা করি।
ও আস্তে আস্তে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেল। কেবল তাই নয় ওর আচার ব্যবহার ও চলাফেরা আমাদেরকে খুব মুগ্ধ করল। ও এত তাড়াতাড়ি আমাদের সংসারে সেটআপ হয়ে যাবে সেটা আমরা প্রাথমিকভাবে কল্পনাই করতে পারিনি।
যাহোক ও আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকেই আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে আমরা গ্রহণ করে নিয়েছি। আমার সঙ্গে ও বেশি চলাফেরা করতে পছন্দ করত। আমি বাড়ির বাইরে গেলেই ও আমার পিছু নিত। আমি মাঠে গেলেও আমার পিছুন পিছুন মাঠে চলে যেত।
ওর ঘ্রাণশক্তিও প্রখর ছিল বলে মনে হতো। অনেক দিন দেখেছি রাতের অন্ধকারে ও অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে দেখে চুপিচুপি আসতে গেলেই ও “হুঁহুঁ” করে শব্দ করত। তারপর আমার পিছু নিত। আমি বুঝতে পারতাম না যে ও ওই অন্ধকারের মাঝে কিভাবে আমাকে চিনতে পারে। তাহলে কি ওর ঘ্রাণশক্তি খুব প্রখর? হয়তো হতে পারে। অনেক প্রাণীর ঘ্রাণশক্তি খুব প্রখর হয়ে থাকে। যেমন, একদিন আমি এক রাতে আমার এক বন্ধুর ডাকে আমাদের ইস্কুলের দোতালার ছাদের উপরে গেছিলাম। কিন্তু এক ঘন্টা পর দেখলাম ওই স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে আমাদের পোষা কুকুরটি আমার সামনে গিয়ে বসল। আমি সেদিন অবাক হয়েছিলাম; কারণ আমি যখন সেখানে যাই সে আমাকে দেখেনি। আমাকে যদি দেখত তাহলে তখনি সে আমার পিছু পিছু চলে যেত। তখন থেকেই আমি বুঝতে পারলাম যে কুকুরদের ঘ্রান শক্তি খুব প্রখর হয়। কিন্তু পুনি, সে তো কুকুর নয়। তাহলে ওর ঘ্রাণশক্তি এত বেশি হল কি করে? আমি খুঁজে পাইনি।
আমি যখন গরমের সময় মেঝেতে পাটি পেড়ে শুয়ে থাকতাম; তখন ও এসে আমার পাশে শুয়ে পড়ত। আমার গায়ে ও গা ঘেঁষে শুয়ে থাকতো। যেটা একটা ছাগলের কাছ থেকে পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। কেবল তাই নয় যখন যেখানে বসে থাকতাম সেখানে ও গিয়ে শুয়ে পড়তো। কোন কোন দিন যখন আমাদের কাউকে বাড়িতে পেত না তখন ও আমাদেরকে আশেপাশের বাড়িতে খোঁজ করত। কেবল তাই নয় অন্য পাড়ায় কোন বাড়িতে যদি আমাদের যাতায়াত থাকত সেই বাড়িতে গিয়েও ও খোঁজ নিয়ে আসত।
ওর যখন দ্বিতীয় সন্তানটি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল তখন ও চরম বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল সবসময় ঘরে বাইরে কান্না করা ছাড়া তার কোন আর কাজ ছিল না। এমনকি কয়েকদিন তেমন খাওয়া-দাওয়া করল না। যেন পাগলী হয়ে গেছে আর ওর কান্নায় আমরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়তাম। আমি যখন বসে থাকতাম তখন ও সোজা ঘরে চলে এসে আমার বুকে ওর মাথা ভরে দিয়ে চরম কান্না করত। ও যেন বলতো, আমার ছেলেকে এনে দাও। তখন আমি ওর গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলতাম, “তোর ছেলেকে কোথায় পাবো, বল? আমি যে অক্ষম।”
হয়ত ওর ভাগ্যটাই খারাপ। আসলে ওর ভাগ্য খারাপ, না আমার ভাগ্য খারাপ সেটা বলা খুব মুশকিল ছিল। হয়ত আমার ভাগ্য খারাপের জন্য ওর সন্তান মারা যাচ্ছে!
যখন ওর তিন নম্বরের সন্তানটি মারা গেল তখন ও পুরো উন্মাদ হয়ে পড়ল। একদম পাগল হয়ে গেছিল যেন। খুঁই খুঁই করে চারিদিকে ওর সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ঘরের কোণে, খাটের কোণে; এমনকি রাস্তার বিভিন্ন বাঁকে, বাড়ির পিছনে - সমস্ত জায়গায় চিৎকার করে ওর সন্তানকে খুঁজে বেড়াতে লাগল। আর বাড়ির সদর দরজা খোলা থাকলেই সোজা এসে আমার সামনে এসে দাঁড়াত। তারপর চিৎকার করে যেন বলত, “আমার বাচ্চা কোথায়? আমার বাচ্চাকে এনে দাও।” তারপর কান্না করতে করতে একদম আমার কোলে ঢুকে পড়ত। তারপর মাথাটি তুলে আমার ঘাড়ে মুখ রেখে কেবল চিৎকার করে যেত। তখন আমার অশ্রুপাত করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকতো না। আমি ওকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিতাম। গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে যেতাম। অনেকক্ষণ কান্না করার পর একটু শান্ত হয়ে বাইরে গিয়ে আবার চিৎকার করতে করতে কোন দিকে চলে যেত। একদিন সন্ধ্যাবেলায় ওকে চারিদিকে খুঁজলাম। কোন হদিস পেলাম না। সন্ধ্যার পরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে থেকে একজন এসে বলে গেল যে আমাদের ছাগলটি নাকি সুকলালদের বাড়িতে বাঁধা আছে। আমার ছাগল চিনতে পেরে সে বেঁধে রেখেছে। তা না হলে অন্য কোথাও চলে যেত।
শীতের সময় ওর দুটো সন্তান হয়েছিল। তখন আমরা ওর সন্তান দুটোকে আমাদের সঙ্গে লেপের মধ্যেই রেখে দিতাম আর ওকে অন্য জায়গায়। তারপর দুপুর রাতে যখন বাচ্চা দুটোকে দুধ খাওয়ানোর জন্য ওর কাছে নিয়ে যেতাম। তখন ও চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে ওদেরকে দুধ দিত কারণ ও জানতো যে কোন মুহূর্তে শেয়াল এসে তার সন্তান দুটিকে ছো মেরে তুলে নিয়ে যেতে পারে। দুধ খাওয়া শেষ হলে ওকে যদি আগেই ঘরে ঢুকাতাম তাহলে ও ঘরে থাকতো না। ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে চলে আসতো। কিন্তু বাচ্চা দুটোকে যখন ওর সামনে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতাম তখন ও নিজে থেকেই তার ঘরে ঢুকে পড়ত। ও একটি পশু হয়ে কি করে এত কিছু ভাবে সেটা বুঝতে পারতাম না।
কেবল তাই নয়, যদি ওর বাচ্চারা ওর সঙ্গে গিয়ে আর ওর সঙ্গে ফিরে না আসত তখন ও এসে আমার সামনে কান্না জুড়ে দিত।
আমি বললতাম, কি হয়েছে? তোর বাচ্চা কোথায়?
তখন ও হাঁটতে শুরু করত। ওকে অনুসরণ করলে ও ঠিক আমাকে ওর বাচ্চাদের কাছে গিয়ে হাজির করত। তারমানে ও ওদেরকে ডেকেছিল ওরা ওর সঙ্গে আসেনি। তখন আমি ওদেরকে নিয়ে আসতাম আর ও সঙ্গে সঙ্গে আসত।
ও অধিকাংশ সময় মানুষের কাছাকাছি থাকতো। যেখানে মানুষের সমাগম বেশি সেই জায়গাতেই ও চলাফেরা করত; যার কারণে ও স্কুল যেতে খুব ভালোবাসতো এবং যেদিন স্কুল খোলা থাকতো এবং যতক্ষণ স্কুল খোলা থাকতো ততক্ষণ সে সেখানে থাকতো। সে যে কেবল স্কুলেই থাকতো তাই নয়। স্কুলের ছেলে মেয়েদের সঙ্গেই ও বেশি ঘোরাফেরা করত। একদিন স্বাধীনতা দিবসে স্কুলের ছেলে মেয়েরা প্রভাত ফেরিতে বেরিয়েছিল। ওদের সঙ্গে ছিল বাদ্যযন্ত্র এবং মাইকে বাজছিল দেশাত্মবোধক গান। একটা লম্বা মিছিল এগিয়ে চলছিল গ্রামের দিকে। ঠিক তখন দেখলাম পুনি ওদের মাঝে ঢুকে পড়েছে। রাস্তার দুই প্রান্তে ছাত্র-ছাত্রীর লম্বা সারি আর মাঝে পুনি। সেই মিছিলটি এ পাড়া, ও পাড়া, সে পাড়া হয়ে প্রায় দু'ঘণ্টা পরে যখন ইস্কুলে ফিরে এলো; তখন পুনিকেও দেখলাম তাদের সঙ্গে এলো। পরে একদিন আমাদের ইস্কুলের হেডমাস্টার আমাকে ডেকে বললেন, “যাই বলো ভাই, তোমার এই ছাগল ছাগল নয়। ও একটা মানুষ। ছাগলরূপে জন্মগ্রহণ করেছে মাত্র।”
আমি বললাম, “কেবল তাই নয়, আমি যখন বাইরে থেকে রাত্রি বেলায় বাড়ি ফিরি তখন ও কিভাবে বুঝতে পারে জানিনা; আমার গাড়ির শব্দ পেলেই ও হুঁ, হুঁ করে যেন জিজ্ঞেস করে, “কোথায় গিয়েছিলে? এতক্ষণে এলে?”
যাহোক, ওই ঘটনার পর স্কুলের সমস্ত শিক্ষক আমার পুনিকে ভালবাসতে লাগল।
আমি জানিনা, ওর মিউজিকের প্রতি এত টান কেন। ও যদি বাড়িতে থাকে আর স্কুলে কোনরকম কোন অনুষ্ঠানের জন্য মিউজিক বেজে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে ও উঠে দাঁড়ায়। ওকে বাড়িতে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। ও ইস্কুলে যাওয়ার রাস্তা না পেলে এদিক ওদিকে ছুটাছুটি করে আর ছেড়ে দিলেই এক দৌড়ে সোজা স্কুল। তারপর সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আবার মিছিলে হাঁটতে শুরু করে।
ওর এতো গুণের মধ্যে একটা দোষও ছিল। সেটি হল চুরি করা। ও এত চালাক যে ভাবাই মুশকিল। একদিন দেখলাম, একজন লোক হাট করে বাড়ি ফিরছিল। লোকটির ব্যাগে কলা ছিল। ও চুপিচুপি লোকটির পিছুনে গিয়ে আচমকা ব্যাগে মুখ ঢুকিয়ে একটি কলা ছিঁড়ে নিয়ে দে দৌড়।
কয়েকজন দোকানদারও বলেছে, যখন দোকানে থাকব তখন ও যাবে না। আর যখনই দোকান থেকে একটু বেরিয়ে যাব অমনি কোন খাবারের প্যাকেট নিয়ে দে দৌড়। কোথায় যে লুকিয়ে থাকে বুঝতেই পারি না।
একদিন একটি নুঞ্ঝুরি ওয়ালা এসে আমাকে বলল, আপনার ছাগলে আমার দুটি নুঞ্ঝুরি খেয়েছে। দাম দেন।
আমি বললাম, তোমার নুঞ্ঝুরি কোথায় ছিল?
ও বলল, আমার হাতে।
আমি বললাম, তাহলে কি করে খেল?
ও বলল, পিছুন থেকে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেছে?
আমি হেসে ওর হাতে দশটাকা ধরিয়ে দিলাম।
ও চুরি করলে আর ওর জন্যে জরিমানা লাগলেও ও আমার কাছে খুব প্রিয় ছিল। ও এভাবে চলে যাবে আমি কখনোই কল্পনা করতে পারিনি। ওর বাচ্চা হল এবং সেটা নরমালি হল। কোন সমস্যা হয়নি। রাত্রি বারোটার সময় আমি বাচ্চা গুলোকে দুধ খাওয়ানোর জন্য পুনির কাছে নিয়ে গেলাম। আমি ওর কাছে গেলে ও উঠে দাঁড়ালো এবং ওর বাচ্চাগুলোকে দুধ খাওয়াল। তারপর রাতে ঘুমাতে চলে গেলাম।
পরের দিন ভোর বেলায় আমার স্ত্রীর ডাকে লাফিয়ে উঠলাম। তারপর ওর পিছুন পিছুন পুনির ঘরে গেলাম। ঘরে গিয়েই চমকে গেলাম। সারা ঘরটি রক্তে ভাসছে। আর সেই রক্তের মাঝে পুনি শুয়ে আছে। ওকে কোনক্রমে তুলে বাইরে নিয়ে এলাম। ডাক্তারকে ফোন লাগালাম। প্রায় ঘন্টাখানেক পর ডাক্তার এল। ওকে ইনজেকশন দেয়া হল। এমন কি স্লাইনও টানানো হল। মনে হল ও আস্তে আস্তে সেরে উঠবে।
আমি ওর জন্য খাবার আনতে মাঠে গেলাম। মাঠ থেকে দুপুর বেলায় বাড়ি ফিরলাম। তারপর আমি ওর কাছে সোজা চলে গেলাম। গিয়ে দেখছি যে ও মুখটিকে মাটিতে ঠেকিয়ে অস্বাভাবিকভাবে নিঃসাড় পড়ে আছে। আমি ওর কাছে ছুটে গেলাম। ওকে আমি বারবার ডাকতে লাগলাম, “পুনি, পুনি।” কোন উত্তর পেলাম না। আমি ওর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বললাম, “পুনি…!” ও শেষ পর্যন্ত আমার ডাকে একবার উঁ করে মাথাটা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার নামিয়ে নিল। আমি বারবার চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম, "পুনি...... পুনি......!" কিন্তু হায়! আর কোন উত্তর পেলাম না।
আমি চেয়ে থাকলাম ওর তিনটে সন্তানের দিকে; যারা গতকাল জন্মগ্রহণ করেছে।
***