ঝুঁজকি আলোর রেখা-৩/আজিজুল হাকিম

 


গুহার অন্তরালে

 আমরা গুহার ভিতরে প্রবেশ করলাম। গুহামুখ থেকে আমরা যতই এগিয়ে যেতে লাগলাম চারিদিক থেকে অন্ধকার ঘিরে ধরতে শুরু করল। তবু আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। অন্ধকারে চারিপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কেবল নন্দিতার বুক থেকে অসম্ভব সুন্দর রূপোলী আলো উদ্ভাসিত হতে শুরু করেছে। একটি নদীর বুক থেকে আলো ফুটে উঠে! এই প্রথম দেখলাম। আমি অবাক হয়ে বললাম, আলবেলা, নদীর বুকে আলো কেন?

আলবেলা আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, এই নদীর বুকে আলো জ্বলে।

কিন্তু কেন?

ও হাঁটতে হাঁটতেই বলল, কেন জানি না। তবে জ্বলে।  

আমরা আরো অনেকটা এগিয়ে গেলাম। নন্দিতার বুকে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউয়ের মাথায় নানা রঙের আলো জ্বলতে দেখলাম। লাল, নীল, হলুদ, রূপোলী আলো জ্বলছে আর নিভাচ্ছে। এসব যতই দেখছি আমি ততই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।

আমরা কোথায় হেঁটে চলেছি? আলবেলাকে বললাম, নদীর বুকে আলো জ্বলতে এর আগে তো কোন দিন দেখিনি! আমার আতঙ্কিত কণ্ঠস্বর হালকা শব্দের হলেও গুহার ভিতরে সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

আলবেলা দাঁড়াল। আমার দিকে তাকাল। ওর মুখ থেকে মিষ্টি প্রভা জ্বলজ্বল করছে। হাতের দিকে তাকালাম। সেখানেও এক মিষ্টি আলোর রেখা খেলে বেড়াচ্ছে। আমি আরও আরও অবাক হয়ে গেলাম। এ আমি কাকে দেখছি! এ এক মানবী না অন্য কেউ! ওর মায়াবী যাদুর টানে ও আমাকে কোথায় নিয়ে চলেছে? সত্যি কি আলবেলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে? না অন্য কেউ! এ কি মানবী না মানবীর আকারে ভিন জগতের কোন এক নারী! যে আমার সঙ্গে থেকেও নেই। যাকে চিনেও ঠিক চিনতে পারছি না। এমন নারী তো আমি জীবনেও দেখিনি। কোন রহস্যে মোড়া এই আলবেলা!  

ও হেসে উঠল। দাঁতগুলো থেকেও এক মৃদু আলোর ঝলক বেরিয়ে এল। আমি তো চমকে উঠলাম। ও বলল, এই গুহার মধ্যে নন্দিতার বুকেই কেবল এমন সুন্দর মনোরম আলো দেখা যায়। তোমাকে খুব ভাল লাগছে, তাই না?

আমি বললাম, সত্যি এটা এক অবাক জগত। তুমিও বিস্ময়কর নারী। তা না হলে তোমার শরীর থেকেও তো আলোর রোসনাই খেলে বেড়াচ্ছে। এত অন্ধকারেও তোমার সমস্ত দেহ দেখতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না। তবুও ভয় লাগছে। ভীষণ ভীষণ ভয় লাগছে। কোন এক গভীর আতঙ্কে আমার বুক দুরুদুরু করছে। তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে? কোন মৃত্যুপুরীতে। তুমিও কি মৃত্যুর কোন দূত?

ও আবার একঝল হেসে উঠল। বলল, এত ভীতু মানুষকে নিয়ে চলা যায় না। কথাটি বলেই ও আমার গালে চিমটি কাটল। তারপর বলল, চলো এগিয়ে যাই। আমাদেরকে আরো অনেকটা পথ যেতে হবে।

যদিও মন টানছে না; তবুও আমি ওর পিছুনে হাঁটতে লাগলাম। গুহাটি ভয়ঙ্কর থেকে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। কোন শব্দ নেই, কোন সাড়া নেই; যেন আমরা দুজন কোন মৃত্যুপুরীর ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছি আলোআঁধারি পথ ধরে। কে জানে এর শেষ কোথায়? এক অন্তহীন অন্ধকারের মধ্যে যেন অনন্ত পথ। কত পাহাড়, কত পর্বত ঘুরেছি। সেলিম আর মীরের সঙ্গে পাহাড় আর জঙ্গলের অন্দরে কন্দরে ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু এর তুলনায় ওগুলো কিছুই না। জীবনে এমন জায়গা কখনোই দেখিনি। এক আকর্ষণীয় সুন্দর মৃদুমন্দ আলোর মাঝেও এক অতি ভয়ঙ্কর গুহা-জগতের দানবিক রূপ।

এমন চিন্তা যখন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দানবিক শব্দে একটি শিশুর মতোই চমকে উঠে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আমি আলবেলাকে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে বুকে টেনে নিলো। বলল, ভয়ের কিছু নেই, ডার্লিং! বিভিন্ন প্রাণী যারা এই গুহায় বাস করছে তাদের শব্দ।

আতঙ্কে কান্নাজড়া কণ্ঠে বললাম, তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে, আলবেলা?

ও হাসির সুরে বলল, ঠিক জায়গায় তোমাকে নিয়ে এসেছি। ভয় কর না, প্লীজ! বলেই ও আমাকে জড়িয়ে আমার মাথায়, পিঠে হাত বুলাতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে বলল, এই ছাড়, কেউ যদি দেখে নেয়? আমাদেরকে আরো তো পথ যেতে হবে।

কেউ দেখে নেয় মানে!

ও বলল, জীন কিংবা ভুত তো থাকতে পারে। ওরাও তো মানুষের মতো।

আঁ! জীন-ভুত!, আমি কাঁপতে শুরু করলাম। আলবেলাকে ছেড়ে আমি দূরে সরে গেলাম। এই মেয়েও এর মধ্যে পড়ছে না তো!

অনেক দিন আগে, সেই ছোট্ট বেলায় আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমার বয়সি এক তালবিলিম আমাদের বাড়িতে জায়গীর ছিল। ও যখন আমাদের বাড়িতে খাবার নিতে আসতো আমি ওর সঙ্গে মাঝে মাঝে মাদ্রাসা যেতাম। মাদ্রাসার মৌলবিরা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। অনেক তালবিলিমের সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়েছিল। একদিন বর্ষার সময়। আমি মাদ্রাসা গেলাম। তখন জহুর বেলা। সেখানে গিয়ে পায়খানা পাওয়ায় মগে পানি নিয়ে মাঠে গেলাম। সেই সময় সকলেই মাঠে মলত্যাগ করত। কারো বাড়িতেই সৌচালয়ের ব্যবস্থা ছিল না। বৃষ্টির কারণে সারা মাঠ ভিজে আছে। মাদ্রাসার পিছুনেই একটি পাটের জমি। ওর দুই দিকে ঘন জঙ্গল আর দুই দিকে পাটকাঠি দিয়ে বেড়া দেওয়া। সেই বেড়ার ফাঁক দিয়ে পাটের জমিতে ঢুকলাম। ঘন পাঠের ফাঁক দিয়ে অনেক ভিতরে চলে গেলাম। মগটি মাটিতে রেখে প্যান্ট খুলব এমন সময় হঠাৎ করেই আমার সামনে এক মোটা শুকনো ঢেলের চাপ পড়ার শব্দ এবং সেটি ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার আওয়াজ কানে ভেসে এল। যেখান থেকে শব্দটি এসেছিল ঠিক সেখানেই চোখ পড়ল। দেখলাম এক মস্ত লম্বা হলুদ বর্ণের সাপ ধীর গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। অত বড় এবং অত মোটা সাপ জীবনেও দেখিনি। আর যেদিক থেকে ও আসছে সেদিকেই আমার পালানোর পথ। মগ ফেলে রেখে ঘন পাটের জঙ্গল ভেদ করে ওর পাশ দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই আমি দিলাম ছুট। আমি জানিনা কিভাবে এবং কোন গতিতে আমি দৌড়েছিলাম। আতঙ্কে উঁচু বেড়া লাফিয়ে পড়লাম পাটের জমির বাইরে। একদম ফাঁকা জায়গায়।

সেই দিনটির কথা এখনো আমি ভুলতে পারিনি। তখন সারা মাঠ ছিল ভেজা; তাহলে শুকনো ঢেলের শব্দ কেন? --- এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে পায়নি। আর সাপটি যদি আমাকে কামড়ানোর জন্য তাড়া করত তাহলে ওই ঘন জঙ্গলের মাঝে কখনোই আমাকে বাঁচাতে পারতাম না।

যাহোক, আলবেলা আর আমি আরো অনেকটা পথ হেঁটে গেলাম। আমাদের মাঝে কোন কথা নেই; কেবল একটি মৃদু আলোকেই আমি অনুসরণ করে যাচ্ছি, সেটি হল আলবেলা। এমন সময় ও থমকে দাঁড়াল। এখানে রাস্তা শেষ। সেখানে পাশেই, নন্দিতার পাড়ে দেখলাম একটি  নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। নৌকার উপরে কোন মাঝি বসে নেই। নৌকার চারিদিকে যেন হীরের পাত লাগানো আছে। নৌকাটি হীরক-উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে। খুব সুন্দর নৌকা। ময়ূরের দেহের মতো গড়ন। আলবেলা বলল, চলো আমরা নৌকায় চড়ি।

আমি বললাম, এ কার নৌকা? মাঝি কোথায়?

ও বলল, আমার নৌকা। এখানে রেখেই তোমার কাছে গেছিলাম।

আমি আলবেলার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। ও নৌকার উপরে উঠল। তারপর আমি উঠে বসলাম। নৌকায় বসার জন্য মুখোমুখি দুটো সিট। ও একটিতে বসল আর আমি অন্যটিতে। তারপর আমার দিকে এক ঝলক হেসেই ও বড় হাতার মতো দাঁড় হাতে তুলে নিল। বলল, তুমি দাঁড় টানতে পারো?

আমি বললাম, না। তবে একদিন শীতকালে; যখন পদ্মায় কম স্রোত ছিল, দাঁড় টেনে ছিলাম। কিন্তু পারিনি। ওই হালকা স্রোতই নৌকাটিকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় অন্য নৌকা এসে আমার পাশে ভিড়ল। সেখান থেকে একটি দশ বারো বছরের ছেলে এসে আমার হাত থেকে দাঁড়টি নিয়ে নৌকাটিকে ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেল।

আলবেলা হেসে বলল, জানি তুমি পারবে না। তুমি চুপটি করে বসে থাকো। আমি দাঁড় টানি,” বলেই ও দাঁড় টানতে শুরু করল। আমি কেবল দেখে যাচ্ছি ওর সাহস, ওর কাজ। এক নির্ভীক নারী। কি অবলীলায় দাঁড় টেনে যাচ্ছে। আমি ওকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। কে এই রূপসী নারী? কি তার পরিচয়?

আলবেলা নৌকা চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও ওর মুখের ওপরে কোন ক্লান্তির ছাপ নেই। মুখে সেই ঈপ্সিত হাসির রেখা ঝিলিক মারছে। একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার নদীর দিকে। নৌকাও ছুটে চলেছে অবিরত।

হঠাৎ কিসের যেন এক ভয়ঙ্কর গর্জন শোনা যাচ্ছে। কিসের গর্জন বুঝতে পারছিনা। আমি কান খাড়া করে থাকলাম। আমরা সামনে যতই এগিয়ে যেতে লাগলাম গর্জনটা আরো তীব্র আরও ভয়ঙ্কর হতে লাগল। আমি আলবেলাকে বললাম, এটা কিসের শব্দ?

ও বলল, মনকে শক্ত কর। ভয়ের কিছুই নেই। গেলেই দেখতে পাবে।

আমি আর কিছুই বললাম। কি সব ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে পথ! এখানেই মনে হয় আজরাইলের বাস।

আজরাইলের কথা মনে পড়তেই ভয়ে গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠল।

আরো অনেক আজগুবি কি সব ভাবতে ভাবতে আমাদের নৌকাটি সেই ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গেল।

এখানে তেমন অন্ধকার মনে হচ্ছে না। মোটা চালুনের মতোই এখানে গোটা পাহাড় যেন ফুটো করা আছে আর সেই ফুটো দিয়ে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির মতোই পানির ধারা ঝরে পড়ছে। পানির মতো গর্জন হলেও তরল প্ল্যাটিনাম আলো যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। আমি চারিদিকে তাকিয়ে গুহাটিকে দেখতে লাগলাম। এই গুহার ভিতরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে যেন কাঠের অঙ্গারের মতোই পাথরগুলি লাল আর হলুদ আগুনে জ্বলছে। সেই অঙ্গারের চারিপাশ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরে পড়ছে। পানির সেই পতনে বিভিন্ন রকমের আলো ফুল ফুটছে আর ঝরে ঝরে পড়ছে। সে এক অতি চমৎকার দৃশ্য! পানি ঝরে পড়ছে নদীর দুপাশে। পানির উত্তাল তরঙ্গে আমাদের নৌকাটি দুলে দুলে উঠছে। আমি আবার ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে আলবেলার দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হেসেই যাচ্ছে। বলল, ভয় করছে? কিসের ভয়? মরলে তো দুজনেই এক সাথে মরবো। এ মরার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে, জানো? অনাবিল আনন্দের উষ্ণ স্রোত আছে।

আমি কিছুই বললাম না। ওর এমন কথায় মাঝে মাঝে বিরক্তিই আসছে। কিন্তু কিছুই বলছি না। কেবল সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর ঝর্ণাধারার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

নদীর মাঝ বরাবর পানির তেমন কোন পতন নেই। মূল জলপ্রপাতের ধারে কাছে যেতেই হালকা বৃষ্টির ছাঁট নৌকায় আর আমার মাথায় পড়তে শুরু করেছে। এমন সময় নৌকার দুই দিক থেকে বেশ মোটা আর শক্ত কাঁচ বেরিয়ে এসে আমাদের মাথার উপরে একটি চালা ঘর হয়ে গেল। কেবল দাঁড় টানার জন্য প্রয়োজন মতো আলবেলার দুই দিক ফাঁকা আছে। সেই চালা থেকে সবুজ আলো জ্বলে উঠল। ফলে চারিদিক থেকে নানান আলোর ঝলক পুরো গুহাটিকে অবাস্তব জগতে নিয়ে যাচ্ছে।

অবাস্তব কথাটি মনে পড়তেই মনে হল আমি আর বাস্তবে নেই। এই আলবেলা বাস্তবের কোন মেয়ে নয়। অলৌকিক কোন এক জগতে আমরা ভেসে চলেছি। লৌকিকতা বলেই বা কিছু আছে? কিচ্ছু নেই। বাস্তবকেও আমাকে স্বপ্ন বলে মনে হয়। এই পৃথিবী, এই জগত, এই জীবন সবই তো স্বপ্নের মতোই চলছে। এই আছি, এই নেই। কেনই বা এসেছি, কেনই বা যাব – এই প্রশ্নের উত্তর অনেক খুঁজেছি। পায়নি। ধর্মগ্রন্থগুলিতে অবশ্য বলেছে ঈশ্বরের গুণকীর্তনের জন্যেই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আসলেই কি তাই! যদি তাই হতো তাহলে, মানুষের মধ্যে খিদে, পার্থিব আকাঙ্খা দিয়ে পাঠানোর কি প্রয়োজন ছিল? আসলে মনে হয় সমস্ত প্রাণীকে নিয়ে ঈশ্বর খেলছেন। আর এই খেলার জন্যেই হয়ত সমস্ত জীবকুলের অস্তিত্ব।

 ও সব কিছু চিন্তা করতে করতে এক সময় একটি কবিতা মনে পড়ে গেল। আজকের সঙ্গে কবিতাটির কি মিল! আমি গুনগুন করে আবৃত্তি করতে শুরু করলামঃ 

কে গো প্রিয়া! তুমি? ওষ্ঠে পুষ্প চুমি বাড়িয়ে দিলে হাত?
এ নদীর নীড়ে হৃদয়-দ্বীপ-ধারে জাগালে সুপ্রভাত।
কোন বিদেশিনী সীমা পারের রানী ভেঙে ঊর্মি-পাহাড়
আসিলে এপারে পানসীতে চড়ে টানিয়া একা দাঁড়।
ঘন মেঘে ঢাকা নীলাকাশ একা বিদ্যুৎ চমকিয়া
দেখছিল তোমা ওগো প্রিয়তমা! আলোক ঝলসিয়া।
এই নিশি প্রাতে কেউ নেই সাথে উথাল পাথাল ঢেউ
তবু নেশাতুর প্রেমেতে মেদুর হৃদয়ে ডাকিছে কেউ।
সেই আহ্বানে হৃদয়ের টানে বিজন পথেতে একা
এ নদীর ধারে নিঃসঙ্গ প্রহরে তোমার আমার দেখা।
 
তাই তুমি এলে সামনে দাঁড়ালে ছড়িয়ে ভোরের ফুল
চোখে জ্বলছিল তৃষাতুর আলো সাগর চাইছিল কূল। 


কবিতাটি শুনে আলবেলা হেসে বলল, বাহ! দারুণ পদ্য তো!

তারপর কিছুক্ষণ আলবেলা আর আমি পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কোন কথা নেই। কিন্তু ওর জ্যোতির্ময়ী চোখদুটি যেন অনেক অনেক কথা বলে যাচ্ছে আমার চোখের মাঝে। কি কথা! এমন কি কথা!

এমন সময় নৌকাটি বাঁক নিল। আলবেলা বলল, পিছুনে তাকাও।

আমি পিছুনে তাকালাম। এক আলোকছটা নজরে পড়ল। মনে হচ্ছে বহুদূর থেকে সেই আলোর দ্যুতি তীরের মতো চোখে এসে লাগছে। সেই আলো দেখে আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। বললাম, দেখ… দেখ আলবেলা আমরা গুহার শেষে এসে পৌঁছেছি। আলবেলা সেদিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে গেল।  

আরও অনেকটা পথ আমাদেরকে পার হতে হল। তারপর গুহার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলাম সম্পূর্ণ এক নতুন জগতে। জানিনা এ জগত কেমন। এটিও কি স্বপ্নের মতো রঙিন? কি জানি! হতেও পারে। 

 (পরের পর্ব আগামী বুধবার) 

Post a Comment

Previous Post Next Post