তামান্না সুলতানা তুলির কবিতা

 


   

জীবনের সংকেত

 

কবর থেকে শতাব্দী প্রাচীন ধূলা আসে,

প্রতিধ্বনিত স্বরে ভাসে তোমার ফিসফিস।

পুরোনো গন্ধে তুমি আদিম সিগারেটের মোহ,

কাফনে বিবর্ণ সুসময়।

 

প্রতিটি অক্ষরে গজিয়েছে ঘাস,

হাড়ের ভেতর কীটের সংসার

আর তুমি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে

এখনও খুঁজছো কফিনের চাবী

 

বরফ যুগের পর বরফ যুগ মানুষের প্রস্রাবে নদী বয়ে গেছে,

ভাসানের জাহাজ থেকে পড়ে গেছে কত জাল!
মানুষের খুনে জন্মেছে কবরের হাড়গোড়।

 

মল-মূত্রে ডুবে গেছে কত কত মতবাদ!

রাজাদের দেউরী শূন্য করে উন্মুল হয়েছে প্রাসাদ।

মুছে গেছে সাইন্টিস্ট জার্নাল।

 

যোনী বাহিত প্রজন্মে শিশ্নের দেয়াল তুলে

রজ:স্বলা পৃথিবীর ফসিল খুঁজছো!

কচ্ছপের প্রাণেও জলজ শ্যাওলায় ক্ষয়িষ্ণু আয়ু রেখা খুঁজে

পৌঁছতে চাইছো অমরত্বে!

 

মৃত্যুর পরেও ছুঁতে চাইছো শরীর,

অমরলোকের স্তনে হাত রেখে ভেজাতে চাইছো ঠোঁট!
পৃথিবীর শেষ মাইল স্টপেজ থেকে

তুমি কেন এখনও পাঠাচ্ছো জীবনের সংকেত !

***

 

   

অ্যালকোহলিক জ্বর

 

স্বর্গের উদ্যান হয়ে উঠতে দেখলাম নাজ গার্ডেনের বার
গ্লাস গ্লাস সোনালী তরলে অ্যালকোহলিক নদী উঠে এলো লবিতে,

আকণ্ঠ মাতালকে এবার থামুন বলা বৃথা জেনে হাতে নিলাম ছিপিখোলা ব্রান্ডি

 

ডুবে যাচ্ছি... ডুবে যাচ্ছি......গরম আর বিবমিষা!

ডুবছি-ভাসছি দিকহারা সাম্পান!

না না, অথৈ জলের ভিতরে মাছ মাছ সাঁতার,

ভরহীন চেতনালুপ্তির আগে ঝলমলে সব গ্লাস ভাঙ্গছে বেয়ারা

 

আমার কান্না আসছে... ভীষণ রকম কান্না
হাসছি, হাসছি কি?
  না না আকাশ কাঁপছে,
পা কাঁপছে, আমি কাঁপছিলাম নির্ভরতার কাঁধে

 

রঙিন লাইটগুলো নেমে এলো চোখের ভিতর,

চৌকোণ বারে জমকালো রাত, ওড়নায় সুগন্ধি জুঁই আহ্বান

প্রতি বাঁক নিয়ে জমাট অন্ধকারে গাড়িটি বেড়িয়ে গেলো প্রাঙ্গণ থেকে

 

ঘুমোচ্ছিলাম বুকের উষ্ণতায়,

নির্ভার শূন্যতাকে আনন্দ বলা যায়।

***

 

   

উত্তল লেন্স

 

আমার ভিতর আমি উপরে আমার ছাদ,

আশপাশে বুভুক্ষ দেয়াল প্রতিশ্রুতিহীন বিলাপ।

 

শিথানের নিচে আকাশ, বুকের বা'পাশে গাছ
চোখের উপর কালো বলয়ের অন্ধ তীরন্দাজ
আমার পাশে আমি, রংহীন কারুকাজে
কাজবাজ ফেলে পায়ের নিচে পাথুরে মেঠেল ঘাস
বুকের ডানে আমি, নিস্তব্ধ প্রতিধ্বনি
আরো কিছুকাল বিষাদ মাখা নদীর কাছে ঋণ
আরো কিছুকাল অম্লজানে অম্লমধুর দিন
 
অল্প ছায়ার বিস্তারে ঢাকা ফণীমনসার ঝোপ
অল্প কিছু পাতার কাছে জন্মান্তরের শোক।

 

মানুষ এমন কাঁদে!
স্মৃতি ও বিস্মৃতির কাঁপনে কেঁপে ওঠে সবুজ পাতা
রৌদ্রের নিপাট ভদ্রতা!
কপাট খুলে হুড়কো-খিলে মুহূর্তের ভাবালুতা
মানুষ এভাবে ডাকে!
বিধ্বংসী মমতার বিকাল নুয়ে পড়ে উল্লাসে
সন্ধ্যা যাপন এমন!
কামিনী সাদায় বিষাদ মেখে অন্ধকারে যাপন
মানুষ এমন বলে!
আর কিছুদিন থেকে গেলে সম্প্রীতি বাঁচে ভালো!

 

আমার উপরে আমি, বিস্তৃত ছাদের খিলান।

তারকা জ্বলে জ্বলে ভরে গেছে সমস্ত আকাশ!

কোথাকার কোন সান্ধ্য কালের মায়াকানন

সুন্দর সহাস্য মুখে প্রতিশ্রুত শোকে বলে যায়;

ভাল থাকাই এমন।

 

আমাকে নেয়নি আকাশ, ছায়ার বিস্তারে কাঁটার বিন্যাস
গাছেদের শিকড়ের অস্তিত্ব, রংয়ের ইন্দ্রজাল।
আমাকে নেয়নি নদী, বুকের স্রোতে স্বল্পবসনা খরস্রোতার ভাঁজ,

সবুজ মাখা দুইফালি অলিন্দে শ্যাঁওলার কারুকাজ।
আমাকে নেয়নি গ্রহান্তরের রাত, ছোঁয়নি প্রতিধ্বনি
আমাকে নেয়নি সঙ্গ সাধনা, নিঃসঙ্গ জানালাখানি
পায়ের তলে ঘাস নেয়নি, বুকের ভিতর শ্বাস
খুন হয়ে যাই জন্মান্তরেও, অন্ধ তীরন্দাজ।

***

 

 

   

আঁশের কয়েন

 

উত্তাপে মাখাও প্রমিথিউসের আগুন
জুলেখার রূপ, এপোলোর প্রেম
রুবির লাল, কোহিনুর দ্যুতি
দারুশিল্পীর তন্ময়তায় মোহ

 

বুক খুলে পাঠ করো বাইবেল
ঠোঁটে রাখো প্রবেশের মন্ত্র
উরুসন্ধি খুলে আবৃত করো উল্কি
ট্যাবুর আড়ালে টোটেমের চিহ্ন
দলছুট পাখির নিরিবিলি ওম-

 

ওহ্ আহ্লাদি চাঁদ, আনকোরা গিরিখাত
উপত্যকার গহীন; তুমি গেঁথে দাও বিষ জর্জর ধনুক।

***

 

 

   

জলপদ্য

 

ঋভু বললে আকাশ হও
তক্ষুনি নেমে এলো আকাশ
ঋভু বললে নেমে এসো
দুলে উঠলো সুতীব্র সুনীল
ঋভু বললে চুল বাঁধো মেয়ে
কলাবেণীতে বন্ধন হলো চুল
ঋভু বললে গান করো তুমি
বেজে উঠলো ছন্দ মধুর মেঘদূত
ঋভু বললে নাচো দেখি
চন্দ্রকলায় নেচে উঠলো শরীর
ঋভু বললে ঘুমোও এখন
ডালিম ফোটা রোদ্দুরে নেমে এলো আঁধার

 

ঋভু বললে কোথায় ছিলে!
পলকা খড়কুটো শুকনো পাতায়
বৃষ্টির সিম্ফনি ঠোঁটে থৈ
 বর্ষায়
কুরচির বুক জুরে দ্রোণের মধু
অতসী হলুদ ফুলে কলমি ডগায়
বুনো ফুলে বেনো জলে
পায়রা পাখায়

 

সাদা বক কালো চিল ঝুঁটি কাকাতুয়া
দোয়েল কোয়েল মন বাউল সহজিয়া
হাঁটুরের কাদামাখা পায়ের তলার
মাটিমাখা মুখ ছুঁয়ে কৃষাণির গা'য়

 

আলোতে ছিলে বুঝি মুক্তোর সুখে
নিদাঘ দুপুর হয়ে ঘুঘুর বুকে
হিজল জারুলে ছিলে দারুণ রংয়ে
পলাশ কেতকী কি কামিনীর বাসে
ঝাউয়ের মর্মরে হাওয়ার উল্লাসে ?

 

বলো মেয়ে মুঠো ভরে রেখেছ কি ধন
কোথায় কী ঋণ রেখে কোথায় পতন
কার বুক ছিড়েখুড়ে কতটা জলে
কাকে কাকে ভালোবেসে ডোবালে কাকে

 

কতটা উড়াল বলো কতটা আকাশ
কতটা দখল হলো ভাবনা বিলাশ
কে ছিলে
কেমন তুমি
পাথরের মেয়ে?-

 

এলোমেলো গল্পটা শেষ হলো তক্ষুনি!

***

Post a Comment

Previous Post Next Post