প্যারিস হল ট্রয়ের রাজা প্রিয়াম এবং রানী হেকুবার
দ্বিতীয় সন্তান। দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের পূর্বে হেকুবা স্বপ্নে দেখলেন যে সে পৃথিবীতে
একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা বয়ে আনছেন। সেই অগ্নি শিখা সমগ্র ট্রয় নগরীকে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত
করে দেবে। গোটা সাম্রাজ্যের বুকে এক অসহনীয় দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে আসবে। রাজ জ্যোতিষী প্যারিসকে
হত্যা করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু পিতা প্রিয়াম শিশুটিকে হত্যা করতে কুণ্ঠিত বোধ করেন।
বিকল্প হিসেবে প্যারিসকে রেখে আসেন আইডা পর্বতে। সেখানে এক রাখাল তাকে কুড়িয়ে পায়।
তারপর নিজ সন্তানের মতোই লালন-পালন করে তাকে বড় করে তুলে। রাখাল এই আকর্ষণীয় ও সুদর্শন
বালকের নাম রাখে প্যারিস। পুরাণ মতে, প্যারিস যখন টগবগে যুবক তখন মার্মিডনসের রাজা
পেলেউস ও সমুদ্রদেবী থেটিসের বিয়েতে যুদ্ধদেবী এরিস ছাড়া সবাই আমন্ত্রিত হয়। দেবতাদের
পিতা জিউস, তার স্ত্রী হেরা, জ্ঞানেরর দেবী অ্যাথেনা, প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি
বিয়েতে উপস্থিত হন। মূলত একটি সংকট সৃষ্টি করার জন্যই যুদ্ধদেবী এরিস একটি সোনালি আপেল
নিক্ষেপ করেন ভোজ টেবিলে। আপেলের গায়ে লেখা ছিল ‘সুন্দরীতম রমণীর জন্য’। আপেলের দাবি
করে বসেন তিনজনই; কারণ তিনজনই দেখতে সুন্দর ছিলেন। দেবী হেরা, অ্যাথেনা ও আফ্রোদিতি;
তাদের মধ্যে সৌন্দর্য আর শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব কেউ ছাড়তে সম্মত নয়। তিনজন নারীই দেবরাজ
জিউসের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের কলহ মেটাতে বিচারের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে প্যারিসের কাঁধে। জিউস
তার বার্তাদূত আইরিসকে বললেন, আপেলটি আইডা পর্বতের রাখাল প্যারিসকে দিতে। তার বিবেচনায়
যে সুন্দরী ও শ্রেষ্ঠা, তাকেই যেন আপেলটি হস্তান্তর করা হয়।
সেসময় প্যারিস মেষ চড়াচ্ছিলো পর্বতে। আইরিস
সহ তিন দেবী আবির্ভূত হলেন প্যারিসের সামনে। হেরা বললেন, “আমি তোমাকে সবচেয়ে ধনী এবং
সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজা বানিয়ে দেব।” অ্যাথেনা দিতে চাইলেন ‘জ্ঞান, খ্যাতি আর যুদ্ধ
জয়ের স্বর্গীয় ক্ষমতা’। মিষ্টি হেসে আফ্রোদিতি বললেন, “আমি তোমাকে দেব পৃথিবীর সবচেয়ে
সুন্দরী নারী, যে তোমার স্ত্রী হবে।” যৌবনের
উচ্ছাসময় মুহূর্তে প্যারিস ভাবল, তার চাই সুন্দরী রমণী। ফলশ্রুতিতে, আপেল পেল আফ্রোদিতি।
সন্তুষ্ট দেবী আফ্রোদিতি তার জন্য বরাদ্দ করল হেলেনকে আর ক্ষুব্ধ দেবী হেরা দিল সংকট।
দেবী অ্যাথেনা ও হেরার কাছ থেকে নিজ পরিচয় পেয়ে প্যারিস ফিরে গেল পিতা প্রিয়াম ও মাতা
হেকুবার কাছে এবং রাজপুত্র হিসেবেই আবির্ভূত হল সেখানে।
গ্রীকদের জন্য ট্রোজান যুদ্ধের উত্স একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টে ফিরে গিয়েছিল। কিছুদিন পর ট্রোজানদের জন্য একটি কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হল রাজপুত্র প্যারিসকে। সেখানে মেনেলাউসের বাড়িতে অতিথি হিসাবে আপ্যায়িত হয়েছিল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আফ্রিদিতির দেওয়া পুরস্কারটি তার সামনে আবির্ভূত হয়। সেই পুরস্কারটি ছিল হেলেন। হেলেনের রূপ ও সৌন্দর্যের আগুনে সে পুড়তে লাগল। সে হেলেনের প্রেমে পড়ে গেল।
এই জুটির প্রেম চরম পর্যায়ে পৌঁছালে তারা গোপনে স্পার্টা থেকে
ট্রয়ে পালিয়ে যায়। ফলে স্পার্টার হেলেন এখন ট্রয়ের হেলেনে পরিণত হয়। হেলেন তার
সন্তানদের ত্যাগ করলেও তার বিশ্বস্ত দাসী আইথ্রা তার সাথে ছিল।
***