উপন্যাসঃ বহুগামী আমি-১০৩

বহুগামী আমি

সৈয়দ আসরার আহমদ

পর্ব- ১০৩

 

আমি পরেরদিন বায়োডাটা রেডি করে একটা ইনভেলাপে ভরে শামিমভাইকে দিয়ে এসেছিলাম৷ তারপর কাজের খোঁজে  এখানে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করলাম৷ বড় ভাইরাভাই মন্জুর মুর্শেদ লন্ডণ থেকে M B A করে এসে ওরিয়েন্টাল চেম্বার অফ কমার্সের সেক্রেটারি৷ তাঁর অফিসে গিয়ে দেখা করলাম, তিনি বললেন চাকরি না করে রিয়েল এস্টেট বিজনেস মানে জমির দালালি করেন৷

 তাঁর কথা শুনে তখন আমার রাগ হয়েছিল৷ চাকরি করে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল কিন্তু করে দেন নি বলে আমার মনে হয়েছিল ৷ কেন না তিনি আমার শ্বশুরের প্রথম পক্ষের বড় জামাই আর আমি দ্বিতীয় পক্ষের বড় জামাই৷ আমার প্রতি তাঁর অতটা আন্তরিক টান ছিল না আমার একটা ভুল ধারণা জন্মেছিল৷ তিনি আমাকে জমি কেনাবেচার দালালি করতে বলে ভুল করেন নি৷ ওই কাজটা করলে যে খুব উপার্জন হত তা পরে উপলদ্ধি করলাম৷ তাঁর কথামতো ওই কাজ করলে কলকাতা শহরে গাড়ি বাড়ি সব হতো৷ এক্ষেত্রেও আমি ওই কাজটা না করার একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ ভুলে ভরা আমার জীবন৷

 চাকরির বাজার মন্দা৷ শামিমভাই বিশ্বজিৎদাকে ফোন করে আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন৷ সেই মতো পরেরদিন সকালে আমি শামিমভাইয়ের ঘরে গেলাম৷ স্বপ্নাভাবি দরজা খুলে দিয়ে বললেন, তোমার জন্য সুখবর আছে৷ ঘরে গিয়ে বসো আমি তোমাদের জন্যে চা করে আনছি৷   

  আমি সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলাম৷ শামিমভাই ওয়া আলায়কুম ওয়া আস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহে বরকাতুহু বলে জবাব দিয়ে বললেন, আমার সামনের সোফায় বসো৷ তোমার আপাতত একটা চাকরি স্বপ্না ঠিক করেছে৷ আমাদের ল্যাণ্ডলর্ড গঙ্গা সিনেমা হলের পার্টনার স্বপ্না তাঁর ওয়াইফকে বলে তোমার জন্য বুকিং ক্লার্কের চাকরি ঠিক করেছে ৷ তুমি যতদিন পর্যন্ত না সরকারি চাকরি পাচ্ছ ততদিন ওটা কর৷ যা বেতন পাবে তাতে একটু কষ্ট করে চালাবে৷ বাড়িতেও কিছু দিতে পারবে৷

- কবে কাজটা পাবো?

- খুব শিগগিরই সিনেমা হলটা চালু হবে৷ তোমার চাকরি পাওয়া নিশ্চিত বলে স্বপ্না বলছিল৷

- ঠিক আছে ৷

- যথা সময়ে তোমাকে জানিয়ে দেব৷

স্বপ্নাভাবি চা নিয়ে এসে বললেন, হক সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ তোমাকে পনের দিনের মধ্যে উনি অফার লেটার দেবেন৷ অফার লেটার পেয়ে তোমার শামিমভাইকে দেখাবে সে acceptance letter লিখে দেবে৷

- ঠিক আছে তাই হবে বলে আমি উঠতে যাচ্ছিলাম স্বপ্না ভাবি বললেন তুমি দুপুরে খেয়ে যাবে৷

- না না আমার মেসে রান্না হচ্ছে৷ 

- তাহলে রাত্রে এখানে খাবে আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী কি না৷ তুমি তো আমাকে নিয়ে এসেছ এ ফ্ল্যাটে তাই তোমাকে দােয়াত দিচ্ছি৷

 শামিমভাই স্বপ্না ভাবির ভাষার সংশোধন করে বললেন, বলো দাওয়াত৷

- স্যরি, স্যরি, ভেরি স্যরি! দাওয়াত দিলাম৷

- ঠিক আছে রাত্রে আসছি তা'হলে এখন উঠি?

- হ্যাঁ এসো ভাই৷ স্বপ্নাভাবি শামিমভাইকে দরজা বন্ধ করতে বললেন৷

 চাকরির একটা সম্ভাবনার কথা শুনে খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম৷ কাকে শোনাব? নাসরিনকে তো জানানো প্রয়োজন৷ কিন্তু তাকে তো ডাকযোগে জানানো ছাড়া কোন উপায় নেই৷ আমার মনের ভিতরটা খুশির খবর শোনানোর জন্য আনচান করছে কিন্তু আপনজন কেউ নেই৷ একবার ভাবলাম, পোষ্ট অফিসে গিয়ে নাসরিনকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিই৷ পরক্ষণেই মনে হল, কাজে জয়েন করে জানাব৷ 

 সব চিন্তাকে সরিয়ে রেখে মেসে ফিরে গেলাম৷ গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে ভাতঘুম দিয়ে কলেজ জীবনের বন্ধু সিরাজের পার্কসার্কাসের বাসায় গেলাম৷ সিরাজ M.A. পাশ করে ব্যবসা করে৷ দিলখুশা স্ট্রিটে তার মটর পার্টসের দোকান ৷ আমি কলিং বেল টিপতেই একজন সুশ্রী তরুণী দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল, কাকে চায়?

- সিরাজ আছে? 

- এই শুনছ, দেখ কে একজন তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন৷ এই সংলাপে আমার বুঝতে অসুবিধা হল না যে ইনি তিনি অর্থাৎ সিরাজের বউ৷

- কি নাম জিজ্ঞেস কর? ভিতর থেকে সিরাজের গলা ভেসে এলো৷

 আমি বললাম, নাম নেই বেনামি লোক৷

আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলার চোখে মুখে বিরক্তির আভা ভেসে উঠল৷

 সিরাজ ঘরের ভিতর থেকে আমার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে দরজার সামনে এসে আমাকে দেখে গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আবে শ্লা তুই এসেছিস৷ বল কেমন আছিস? কি করছিস? চল ভিতরে চল৷

 দুই বন্ধুতে জমিয়ে গল্প শুরু হল৷ সিরাজ ওর বউ পাপিয়া সুলতানাকে ডেকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল৷ ওর বউ কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে৷ ওদের এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান৷ মেয়েটা বড়৷ প্রাট মেমোরিয়াল স্কুলে ক্লাশ টুয়ে পড়ে৷ ছেলেটাকে বাড়ির পাশে একটা কিণ্ডার গার্ডেনে নার্শারিতে ভর্তি করেছে৷

 আমরা গল্পে মশগুল হয়েছিলাম৷ পাপিয়া ভাবি চা, বিফ রোল আর মিষ্টি নিয়ে এসে সামনের টেবিলে রেখে বললেন, গরম গরম রোলটা খাও পরে ভাল লাগবে না৷

- ভাবি আপনি বসুন৷ 

- ভাই, আপনারা খান৷ শ্বশুর আর শাশুড়ি আম্মির সঙ্গে আমি খাব৷

 পুরনো দিনের কথা বলতে বলতে চা জুড়িয়ে গিয়েছিল আমরা খেয়াল করি নি৷  চা মুখে দিয়ে সিরাজ বলল, পাপিয়া চা জুড়িয়ে গেছে৷

- তুমি বুড়িয়ে গেছ! বলে গেলাম যে খেয়ে নিয়ে গল্প করবে দেখছ তো না শোনার ফল৷ দাঁড়াও আবার চা বানিয়ে আনছি৷ খাবারগুলো খেয়ে নাও৷ পাপিয়া ভাবির কণ্ঠস্বর ঝাঁঝালো শোনাল৷

 আমি সেটা বুঝতে পেরে সিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, তুই কি লাভ ম্যারেজ করেছিস৷

- হ্যাঁ রে পাপিয়া তো আমার বাল্যপ্রেমিকা৷ আমাদের বিয়েতে ওর বাপ মার মত ছিল না৷ আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেছি৷ পাশেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মাওলানা মোবারক করিম জওহর সাহেব থাকেন তাঁর কাছেই রেজিস্ট্রি করি৷

 আমি মনে মনে ভাবলাম, তাই এত জজবা! বাল্যপ্রেমে প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে একটা নিগূঢ় মানবিক অধিকারের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সেখানে দুজনের ভালবাসার গভীরতা অপরিমেয়৷ 

 সিরাজ আমাকে দোতলা থেকে নীচে নেমে বিদায় জানাল৷ আমি পার্ক সার্কাস ট্রাম ডিপোর সামনে আসতে মুকুলের সঙ্গে দেখা৷ মুকুল হচ্ছে নাজমুলের বড় আপার দেবর৷ নাজমুলই ওর সঙ্গে আমার পরিচয় করে দেয়৷ খুব প্রাণখোলা টাইপের ছেলে৷ হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় হিরো দেবানন্দ আর দিলীপকুমারের ডায়লগ হুবহু বলতে পারে৷ আর খুব জোরে হাসে৷ আমাকে বললো, চলো চা খায়৷

- না না চা খাবো না৷ এই মাত্র বন্ধুর বাড়ি থেকে চা খেয়ে এলাম৷ সিগারেট চলবে বলে No 10 সিগারেটের প্যাকেট খুলে বাড়িয়ে দিল৷ আমি তো smoking করি না৷ 

- কবে থেকে?

-কবে থেকে মানে? আমি কখনও ধূমপান করি নি৷

- তাই! অমৃতে অরুচি!

- সিগারেট বিড়ি অমৃত বুঝি?

- অমৃত না হলে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ ধূমপায়ী হল কিভাবে?

- সেইজন্যে তো এখন ক্যান্সারের বাড়বাড়ন্ত, দেখছ না ভারতেই কত লোক ক্যান্সারে মরছে৷

- তাও ঠিক৷ কিন্তু যে কোনও নেশা চটফট ছাড়া যায় না৷ 

- দিনে তিন চারটে খেতে খেতে একদিন একটাও খাবে না৷ তারপর দেখবে কিভাবে তুমি নিজেকে সিগারেটের নেশা মুক্ত করেছ৷

- আসলে তোমার সিগারেটের নেশা নেই তাই সহজেই বলতে পারলে৷ নেশা থাকলে বলতে পারতে না৷

- যাক ওসব কথা রাখো৷ দিলীপ কুমারের দিল দিয়া দর্দ লিয়া'র ডায়লগটা শোনাও৷

 সিগারেটের সুখটান দিয়ে ফুটপাথের উপর দাঁড়িয়ে মুকুল ডায়লগটা শোনাল৷ তারপর নিজে থেকে দেবানন্দের গাইড সিনেমার ডায়লগ আওড়ালো৷ কাশ্মীর কি কলি সিনেমায় ভিলেন প্রাণ নায়িকা শর্মিলা ঠাকুরকে ' ইতনা শুবে শুবে কাঁহা চলে ফুলঝরিকা রাণী' যেভাবে বিড়ি খেতে খেতে বলেছিল সেই অভিনয়ের কায়দায় ডায়লগ থ্রু করে দেখাল৷ অত্যন্ত প্রতিভাশালী এই যুবককে বরকত গণি খান চৌধুরি বিদ্যূৎ দফতরে চাকরি করে দিয়েছিলেন৷ তার স্ত্রী জাপানিকেও গণিকে ধরে মুকুলের আব্বা একই দফতরে চাকরি করে নেন৷ মুকুলের আব্বাকে গণিসাহেব মামুজান বলতেন৷ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার একজন বরিষ্ঠ কংগ্রেসী নেতা৷ তিনি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ১৯৫২ সালে ভোটে লড়েন৷ শুনেছি ত্রিদিব চৌধুরির বিরুদ্ধে দশ হাজার ভোটে হেরে যান৷ তিনি অভিযোগ করে বলতেন, বিধান রায় ষড়যন্ত্র করে তাকে জিততে দেয় নি৷ কেননা তিনি বিধান রায়ে বিরুদ্ধ লবি বিমল সিংহের গ্রুপের লোক ছিলেন৷

  বন্ধুরা, আমার কাছে এই কথাকাহিনীর লেখক কিছুটা সময় চেয়ে নিচ্ছেন  আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য৷  তার কথা বলা শেষ হলে আমি ফিরে আসছি৷

 পাঠক বন্ধুরা, আমি নাজমুল আহসান আপনারা আমার অত্যন্ত প্রিয়জন৷ আমি দেলোয়ারের সঙ্গে আপনাদের আলাপে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য যারপরনাই দুঃখিত৷ কিন্তু কিছুই করার ছিল না৷ আমার দেলোয়ারের বিষয়ে কিছু জানাতে চাই যাতে তাকে আপনারা সহজে বুঝতে পারেন সেজন্য আমি স্ক্রিনে ভেসে এলাম৷ আপনারা যে দেলোয়ারকে দেখছেন তার মতো সাদাসিধে সৎ আবেগপ্রবণ তরুণ এখনকার দিনে বিরল৷ সে সহজেই অজানা অচেনা মানুষকে বিশ্বাস করে বসে৷ অপরিচিত মানুষজনের দুঃখে সহমর্মী হয়৷ অপরের সুখে সে খুশি হয়৷ দেলোয়ার এক অজাতশত্রু যুবক৷ ধরুন, কোন দরকারি কাজে সে পথে বেরিয়েছে৷ সেই কাজটা খুবই জরুরী অথচ পথে দেখল একজন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে সে তখন তার নিজের প্রয়োজনীয় কাজের কথা ভুলে গিয়ে সেই মানুষটিকে হয় হাসপাতালে নয়তো তার বাড়িতে পৌঁছিয়ে আসবে৷ এ ধরণের কাজের জন্য সে তার নিজের পরিবারে তীব্র সমালোচিত হয়৷ কিন্তু বাইরে তার বহু গুণগ্রাহী রয়েছে৷ তবুও অসংকোচে বলতে হচ্ছে, এ ধরণের মানুষের বাস্তবজ্ঞানহীনতার জন্য সংসারের গৃহিনী ও বাচ্চাদের প্রচুর কষ্ট হয়৷ এদের কখনও সংসার করা উচিত নয়৷ কেননা আবেগতাড়িত মানুষের জন্য তার নির্ভরশীল প্রাণগুলো কষ্ট পায়৷ মানবিক গুণ সমৃদ্ধ এই মানুষগুলোকে লোকে সর্বদা ভুল বোঝে যেহেতু এরা অপ্রিয় কথা মুখের উপর বলে দেয়৷ আর একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেই যায়৷ আসলে অল্প সময়ের মধ্যে এরা অতীতকে ভুলে যায়! এরা আত্মভোলার দল৷ কেবল তাইই নয় এরা দুঃখরসিকও দুঃখকে সহজেই ভুলে যায়৷ তাই বারবার দুঃখের আবর্তে ঘুরপাক খায়৷

 বন্ধুগণ, দেলোয়ারের সম্পর্কে দু চারটে কথা বলে আপনাদের সাহিত্যপাঠের রসাস্বাদনে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি৷ দেলোয়ার এবার তোমার দায়িত্ব তুমি পালন কর৷ পাঠকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এগিয়ে যাও৷

  শুকরিয়া নাজমুল, তুমি আমার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ কর তা তো আমি জানি৷ ঠিকই বলেছ, আমাদের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন উজবুকদের সংসারী হওয়া উচিত নয়৷ সেটা করে ভুল করেছি৷ আমি করতে চাই নি, যখন B.A.Hons সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ছি তখন মা ধরে তাঁর বোনের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন৷ মা'কে আহত করব না বলে আমাকে যে শ্যামাঙ্গিনী মেয়েটি মনে প্রাণে ভালবাসত তাকে বিয়ে করি নি৷ তবে M.A. পাশ করে তাকেই যে বিয়ে করতাম এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই৷ নয়না ব্যানার্জি আমাকে খুব ভালবাসত৷ আমিও বাসতাম ৷ তবে সেই ভালবাসা ছিল বন্ধুত্বের মোড়কে মোড়া৷ তাই ওকে বিয়ে করার স্বপ্নও আমি দেখেছিলাম৷ তবে আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে তারই প্রবল ছিল৷ আমি তো আর ছেলে মানুষ ছিলাম না যে একজন তরুণীর প্রেম নিবেদনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে পারব না৷ সত্যি বলছি বুঝতাম৷ আমিও মনে প্রাণে চাইতাম তবে উপার্জনের সংস্থান না করে বিয়ে করাটা পাগলামি ছাড়া কিছু না৷ তবে নয়না কখনও মুখ ফুটে বলে নি যে সে এখনও আমাদের বিয়েটা রেজিস্ট্রি করতে চায়৷ এখন কি জন্য জানি না বারবার মনে হচ্ছে আমার ভুল হয়েছিল, নয়নার সঙ্গে সিভিল ম্যারেজটা রেজিস্ট্রি করে নেওয়া উচিত ছিল৷ তাহলে আমি মা'কে না হয় একবার বলতে পারতাম, মা আমি নয়নাকে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নিয়েছি৷ নয়নাকে মা খুব ভালবাসতেন৷ নয়না একবার শীতে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল৷ বামুনদের সংস্কারমুক্ত সুশ্রী মেয়েকে দেখে মা ও আব্বার খুব ভাল লেগেছিল৷ নয়নার সবচেয়ে ভাল গুণ ছিল সে মিশুকে এবং সহজেই অচেনা অজানা মানুষকে অল্প সময়ে আপন করে নিতে পারে৷  ধনী লোকের মেয়ে হলেও তার কোনও অহংকার ছিল না৷ ওকে দেখে আব্বা আমার মাকে বলেছিলেন, এমন মেয়েকে আমি ঘরের বউ করতে চায়৷ কিন্তু মা তখন কোনও উত্তর দেন নি কেননা তার মনে বোনের মেয়ে স্থান দখল করে রেখেছিল৷

 

চলবে………….

 


Post a Comment

Previous Post Next Post