নিহার বিন্দু বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা / A Bunch of poetry of Nihar Bindu Biswas

 


(এক)

বিদ্রোহী কবি

 

বিদ্রোহী কবি,

তুমি সর্বমানবিক মুক্তির প্রবক্তা

তুমি পরাধীনতার শৃঙ্খল মুচে এনেছো স্বাধীনতা;

মানব প্রেমই তোমার বিদ্রোহের সঞ্চালিকা শক্তি।

 

বিদ্রোহী কবি

তুমি জ্বলে উঠেছিলে প্রথম বিশ্বযোদ্ধত্তর বিশ্বের

অবক্ষয় নৈরাজ্য আর; রাষ্ট্রিয় বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে।

তুমি বিদ্রোহ করছো ঔপোনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধ।

তোমার কবিতার সূত্র ধরেই শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন।

 

বিদ্রোহী কবি

তুমি সময়ের সঠিক সময়ে বিদ্রোহী কবিতা লিখে

আত্মশক্তিকে করেছো ইতিবাচক বলিয়ান;

তুমি বাঙালির স্বাধীকারে আত্মউদ্বোধন ঘটালে বিদ্রোহী কবিতায়।

তুমি সত্য প্রকাশে থেকেছো নির্ভিক; জাগ্রত ভগবান।

 

বিদ্রোহী কবি

তোমার বিদ্রোহে ভীত কেঁপেছে ঔপোনিবেশিক

শাসকদের শাসন ক্ষমতার;

তুমি অকপটে স্বীকার করেছো বিদ্রোহীর বিদ্রোহ।

তোমার বিদ্রোহ সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের বাণী।

তোমার সত্যের তরবারি আক্রমণ করেছো

জাতি দেশ তথা সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে।

 

বিদ্রোহী কবি

তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে করেছো বিদ্রোহ

এনেছো শব্দ বিভিন্ন ধর্ম ঐতিহ্য ইতিহাস-

 আর; পুরাণের শক্তি উৎস থেকে;

করেছো বলিয়ান বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব।

 

বিদ্রোহী কবি

তুমি সমস্ত শক্তির আধার করেছো নির্মাণ; আমি

আমি কে করেছো ব্যপ্তি সামষ্টিক আমি।

তুমি প্রশমিত করেছে উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দলরেল।

তুমি সকল মানুষের অন্তরের আমি।

 

বিদ্রোহী কবি

তুমি বিক্রি কর নি নিজের সত্যকে

তুমি নষ্ট কর নি আপন ভগবানকে

তুমি কলঙ্কিত কর নি লোভের বশবর্তী আত্মপোলব্ধিকে

তুমি খাটো কর নি সত্যের প্রাসাদকে

কারণ,তুমি ভগবানের সত্যের হাতের বীণা।

আর; সত্যোচ্চারণ বিদ্রোহের আত্মশক্তির উপলব্ধি।

 -------------------------

 (দুই)

অলসপ্রেম

আনমনা প্রেমিকা -

স্বপ্ন দেখে না প্রাণে প্রাণ বিলায়ে; হাতের তালুতে।

অলসতার স্বর্গরাজ্যে তার রাতের বসবাস

অথচ, একতরফা কামনায় মেতে ওঠে যৌবনের নোনা জলে।

স্নায়ু যুদ্ধে মর্মাহত অনুভূতিগুলো রক্তারক্তি করে

অসংলগ্ন প্রেমের চোরাবালুতে।

 

ছন্দবিহীন সুর---

মনবীণায় বাজে অকাট্য বেদনায়;

পরিবেশের গন্ধ চৌকাঠে আটকে যায়

কম্পিউটারের কুয়াশায় চোখ বন্ধ হয় প্রেমের ব্যালকনিতে!

অসাধুপ্রেম অসতের আগাছায় মেধাবী মুখর সমালোচনা।

 

বিশ্বাসের শেকড়ে --

ঘর বাঁধা হয় নি কখনো প্রেমের আলিঙ্গন

তামাসার বালিহাঁস বারংবার ডুব সাঁতার কাটে

সরলতার জলে।

 

তোমার নীরবতা --

অন্তহীন যৌবন গ্রাস করে নিয়েছে; অলসপ্রেম

নষ্ট হতে বসেছে রাতের উচ্ছলতা

তোমার অলসতায় খোঁপায় গোঁজা হয় না জোছনার ফুল।

বিরহানন্দে দগ্ধ হই অনুতাপে।

 

আজ রাতে --

ও জলে পদ্ম ফোটে হয়তো একটু সচেতনতায়

হাত বাড়াও আমার হাতে সহযোগিতা;

দেখে নিও পাথরেও ফুল ফোটাবো অন্তহীন যৌবনিক জলে।

আজ রাতে বসবাস হবে বনলতার সাথে।

 

অলসপ্রেম --

তোমার চোখে ভাষা হারায়

আলোতে হারায় তোমার ছায়া অঙ্গে অঙ্গে

দুজন দুজনার মতো কতো রুক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অমিল;

অলসপ্রেম কখনো হয় না হৃদয়ে হৃদয় এক।

 

কলমটা যে মন মানে না লাফিয়ে লাফিয়ে চলে

তাইতো আমার এতো লেখা অলসপ্রেমের ছলে।

 ---------------------

 (তিন)

রোমান্সবৃষ্টি

 

 বৃষ্টিতে দেখি তব মুখ

সামনাসামনি হৃদয়ের মুখোমুখি বসে

বিষ্টির রিমিঝিমি সুর কানে এসে বাজে

হৃদয়ে লেগেছে রং রঙিন তুলিতে;

কল্পনা ছেঁয়ে আছে মানসিক আবরণে।

 

জলেভাসা পদ্ম থালে বৃষ্টিফোঁটা পড়ে

এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে মনটা গেলো ভরে

মন হরণে মনোভ্রষ্ট উদাস হাওয়া বহে

শান্তিবাতাস গায় লেগেছে প্রেমবায়ু সহে।

 

এক অদ্ভুত সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

কাকভেজা বৃষ্টির দুপুর সবুজ ঘাসের লাভা

কচুপাতার টলমলে জল নান্দনিক ফ্রেমে বন্দি;

আকাশের কোনে কালো মেঘের কানাকানি

বিষ্টিরমিছিল উচ্চস্বরে কোলাহল করে মানবজমিনে।

 

তোমাকে দেখি বিষ্টিস্নাত জলে; কাল্পনিক ভুবনে।

তোমাকে দেখি নীল বসনে রাধিকার অভিমানে!

গায়েবি প্রেমে হঠাৎ করে ফুটে ওঠা যৌবনিক ফুল।

নৃত্যকলার শৈল্পিক দর্শন মুগ্ধ করে সুহৃদ।

আমি সুখের গান ভাবনায় বলি কবিতার ঠোঁটে।

 

রোমান্সবৃষ্টি অনুভূতি দিয়েছে তোমাকে পাওয়ার।

 ------------------------

 (চার)

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

(দৃশ্যাক্ষর -৮+৬)

 মুজিবের কর্ম দেখে বিশ্বে লাগে তাক

ঝুঁকিগুলো সঙ্গে নিয়ে দিছে তব ডাক,

যুদ্ধকথা বলে তথা লোক করে জড়ো

দেশ তব মুক্ত করে হয় নি সে বড়ো।

 

মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে যুদ্ধ করে পাক

রক্ষা হয় মাতৃভাষা বঙ্গবন্ধু ডাক,

বাংলাভাষা রক্ষা হেতু কতো প্রাণ গেলো

ভাষাশহিদ খেতাব তাঁরা সবে পেলো।

 

ছয়দফা দিয়ে যথা মুক্তির সনদ

আগরতলা মামলা হলো যে রসদ,

এক নম্বর আসামি শেখ মুজিবুরে

ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল দেশ ফেটে পড়ে।

 

দেশের তরে নেতৃত্বে জেলে ছিলে যতো

সঠিক তার হিসেব নাই দিন কতো

সাতই মার্চ ভাষণে স্বাধীনতা ডাক

বাঙালিরা যুদ্ধে নেমে অস্ত্র করে তাক।

 

স্বাধীনতা রক্ষা হেতু গেলো লক্ষ প্রাণ

রক্তমাখা দেশ পেলো বিজয়ের ঘ্রাণ,

 শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির রাখে তব মান

 বিশ্বসভায় লেখালো বাংলাদেশ নাম।

Post a Comment

Previous Post Next Post