শেরে বাংলা ফজলুল হক কি কবি নজরুলের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবেনঃ

 

শেরে বাংলা ফজলুল হক কি কবি নজরুলের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবেনঃ

শাহেদুজ্জামান শাহেদ  

 

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন টা কত টুকু দুঃখ-কষ্টে অতিবাহিত হয়েছে, কম বেশি সকলেই জানি । জীবনের এত রং কোন দিন দেখি নি । এই মানুষ সারা টা জীবন পেয়ে গেছেন অবজ্ঞা ,হেলা -অবহেলা । নজরুল শব্দের অর্থ হওয়া উচিত দুঃখ-কষ্ট,ব্যথা-বেদনা । যাই হোক সে প্রসঙ্গ নিয়ে কথা না বলি ।

নজরুল ইসলাম তার এক চিঠিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখেন

‘‘আমার স্ত্রী আজ প্রায় সাত বছর পঙ্গু হয়ে শয্যাগত হয়ে পড়ে আছে ।ওকে অনেক কষ্টে এখানে এনেছি । ওর অসুখের জন্য সাত হাজার টাকা ঋণ আছে । ”

(তথ্যসূত্র-নজরুলের পত্রাবলি ,পৃষ্ঠা নং ১৫)

এ থেকে বোধগম্য হয় যে ,কবি তখন কতটা অর্থনৈতিক সংকটে ছিলেন । এছাড়া কবির শরীর ও ভাল যাচ্ছিল না । পরিকল্পনা মোতাবেক কাজী নজরুল ইসলাম এই টাকা শোধ করার জন্য একটি ফিল্মের মিউজিক হিসাবে সাত হাজার টাকার কনট্রাক্ট পান । যার বর্তমান মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১৭-১৮ লক্ষ্য টাকার ও অধিক । নজরুলের বক্তব্য অনুযারি ফজলুল সাহেব ‘নবযুগ’ এর সম্পাদক হলে কবি কে এই টাকা দিবেন । ফজলুল হক সাহেব প্রতিশ্রুতি ও দেন টাকা দিবেন বলে কিন্তু তিনি এই টাকা টা দেন নি । জাতীয় কবি তাঁর বর্তমান অবস্হান জানিয়ে অনুরোধ করেন প্রতিউত্তরে বাংলার বাঘ খ্যাত ফজলুলর হক সাহেব বলেন

‘‘কিসের টাকা” বাকরুদ্ধ,স্তব্দ,অভিমানী ও অতি আত্মর্মযাদা সম্পন্ন নজরুল , আর কোন বাক্য বিনিময় না করে , সোজা চলে আসেন ।(তথ্যসূত্র-নজরুলের পত্রাবলি ,পৃষ্ঠা নং ১৫)

অথচ এই নজরুল ই শেরে বাংলা সাহেব কে নানান ভাবে সাহায্য করেছেন । যখন তাকে শহরের ছেলেরা তাঁকে জনসভা করতে দেয় নি । তখন নজরুল কান্ডারি হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন,থামিয়ে ছিলেন সেই সব উগ্র নেতাকর্মীদের কাছ থেকে । আর তার প্রতিদান !!

এই দুই জন ব্যক্তি মধ্যে এমন ঘটনা সত্যিই মর্মাহত করেছে । ভাবা যায় !! আজ যদি তা সাধারণ কোন মানুষের সাথে হত একটা কথা ছিল । আর এমন সময়ে এটা হয়েছে যখন তিনি মন্ত্রী । ফজলুল হক সাহেব চাইলেও যে কোন ভাবে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন । এভাবে ন্যাক্কার জনক অপমান করা কতটুকু যুক্তিগত হয়েছে আমি জানি না । আর সেই সময়কার শ্রদ্ধেয় কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠত ,সুনাম ,খ্যাতি সবই অর্জিত হয়েছে । সেই হিসাবে বলতে গেলে শেরে বাংলা উঠতি রাজনীতিবিদ ।

এ ঘটনার আরও জোরালো হয় কাজী নজরুল ইসলামের শ্যামাপ্রসাধের কাছে চিঠির মাধ্যমে । সুফি জুলফিকারকে সেই অভিমান -ক্ষুব্ধ কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন-

“হক সাহেবের কাছে গিয়ে ভিখারির মত ৬ মাস ধরে দৈনিক ৫/৬ ঘণ্টা বসে থেকে ফিরে এসেছি ” (নজরুল পত্রাবলি ,বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত )

আহ!! একজন কবি কতটুকু সমস্যায় থাকলে ,এতটা সময় টাকার জন্য বসে থাকতে পারে বলতে পারেন! সেই টাকা তো তাঁর প্রাপ্য ছিল । এমন তো না ধার !!

তাহলে কেন এমন ব্যবহার পেতে হলো কবিকে ?

এ সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো ইতিহাস দিতে পারবে না । শেষ জীবনে এসে চারদিকে পাওনাধারের টাকার চাপ ,শরীরের অবনতি ,স্ত্রীর চিকিৎসা , ফজিলতের অবজ্ঞা-অবহেলা ,সবশেষ হক সাহেবের এ ব্যবহারে কবি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন খুবই । অর্থনৈতিক সমস্যা টা মিটে যেত যদি হক সাহেব তার কথা টা রাখতেন । এর পর কবির nerves shattered হয়ে যায় । অনেকে ধারনা করেন ফজলুল হক সাহেবের এমন কান্ডে তার শেষ ভাল থাকার আশা ঘুরে বালি হয়ে যায় । ইতিহাস বলে মানসিক চেতনা হারানো ,বাকরুদ্ধ হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারন ছিল হক সাহেবের এই অবহেলা ।

এইসবের সত্যতা পাওয়া যায় সূফি জুলফিকার হায়দার রচিত ‘‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’’ নামক বইয়েও ।

Post a Comment

Previous Post Next Post