পলাতক ছায়া

 পলাতক ছায়া  

এবাদুল হক      

 


আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি জেগে ওঠে আরেক পৃথিবী 

দেয়ালে চেয়ারের ছায়া তারও পিছনে কেউ থাকে য‍েন 

টেবিলের কোণে চোখ মেলে চেয়ে থাকে আলোকবর্ষ সারাদিন 

হাঁসের ডিমের মত কোমল নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে ছড়িয়ে পড়ে 

আততায়ী আলো ।

অকস্মাৎ অন্ধকার ঝড়ে খুলে যায় মধ‍্যরাতে সমস্ত জানালা 

অলিন্দের একোণে ওকোণে কর্মব‍্যস্ত নারীদের আনাগোনা 

চোখে তাদের শতবর্ষজীবী এক অনাক্রম‍্য নম্রতার জল 

মৃত্তিকার জন্মলগ্ন, রবার বনের ছায়ায় সূর্যাস্তের মৌন ভঙ্গুরতা

সূর্যের হেমন্ত পেরিয়ে তারা চলে যায় তারা ফিরে আসে ।

 

আঙুরের শব্দ মুখে পুরে, রাত্রির শিশুরা যায় বিদ‍্যালয়ে 

স্বপ্নময় ঘুমে আমি সেইসব মুখ দেখি 

জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে যে মুখ দেখতে চাই 

যে ছন্দে চলার ভঙ্গি 

শুয়ে শুয়ে রপ্ত করি যদি কোনদিন আমার দরজা দিয়ে 

শূন্যপানে তারা চলে যায় আমাকে দেবে কি তারা ভ্রমরের দিন 

এক মুহূর্ত মধুর মধ্যে সংহিত নক্ষত্রের বানে

অনেকে নিহত হবে অনেকে গাইছিল পথে আত্মহননের গান 

কোথায় তাদের পিতা, কোন মাঠে তারা বোনে ধান 

কোন ঘরে ব‍্যস্ত প্রজননে অথবা দেরাজ খুলে বের করে 

গোপনীয় বৃষ্টিরেখা একবিংশ শতকের শহরের স্থাপত‍্য 

ভূপাতিত বাড়ির নকশায় মগ্নতায় রঙ লাগিয়ে করে সে প্রতীক্ষা 

কারণ প্রতীক্ষা ছাড়া অন‍্য কোন গতি নেই পৃথিবীতে 

একজন মানুষ দাঁড়িয়ে পড়লে তার ছায়া যাত্রা শুরু করে 

আমাদের জাগরণে আমাদের ঘুমে সব নদী চলেছে উৎসের দিকে ।

 

জন্ম ছাড়া মৃত্যুর গৌরব নেই কোন, যদি মরে যাই 

অবশ‍্য জন্ম নেব মধ‍্যরাতে জেগে ওঠা নারীদের মনে 

শিশিরে জলে ভেসে ভেসে আমার কাগজের নৌকাগুলি 

ভেড়ে আমার রক্তের দরজায় । 

আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তুমি অপার্থিব আলোর দিকে ঝুঁকে 

শব্দ খুঁজছিলে আঙুরলতার বনে প্রজাপতির উড্ডয়নে 

নিজের বুকে পাথর ছুঁড়ে মেঘলোভী পর্বত চূর্ণ করে 

তুমি ছড়িয়ে দিয়েছিলে মেরু সমুদ্রের অকর্ষিত ঢেউয়ের গভীরে।

 

তোমার ঘুমের মধ্যে আমি জেগে উঠি আমাদের ঘর

আমাদের শহর আমাদের কবরখানা জেগে ওঠে অন‍্যরকম মানুষের ভিড়ে 

তুমি রেখে যাও অদৃশ্য লিপির উষ্ণমালা, পলাতক শব্দের পলাতক ছায়া 

আমি অন্ধের মতন ছুঁয়ে দেখি কিংবা স্পর্শ লাগে শরীরে আমার ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post