জাফলং দর্শন/সৈয়দ হোসেন

 


জাফলং দর্শন

(একাংশ)

সৈয়দ হোসেন

(মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ)

~~~~~~~

 

লালাখাল থেকে সোজা জাফলং এর পথ ধরে এগোতে থাকে আমাদের গাড়ি। পিছে ফেলে আসি প্রশস্ত বিরানভূমি ফসলকাটা ধূসর মাঠ, তেলিবিল। জীবিকার সন্ধানে এখানে ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে মানুষ মনোনিবেশ করেছে কাজে, অসংখ্য পাথরকাঁটা কল চোখে পড়ে, ধুলা এসে লাগে চোখে মুখে। বিরান ভূমির মাঝে জীবনের মিল খুঁজে সম্মুখে আগাই। রাস্তা ছিল ভালো একসময় চলে যাই জৈন্তাপুর জিরো পয়েন্ট। এখানে জুমার নামাজ আদায় করি, নামাজ শেষে 'জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট' গোয়াইনঘাট উপজেলার ইউএনও স্যারের তত্ত্বাবধানে দুপুরের খাবার সম্পন্ন করা হয়। খাবার শেষে হাঁটতে হাঁটতে উঁচু ডিবি থেকে গিরিখাদে নেমে পড়ি সামনে পাথরের চর। 

এখানে মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে ছুটে আসা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই ডাউকি নদী। ডাউকি নদীকে বিশ্বের সবচেয়ে স্বচ্ছ নদী বলা হয়। কারণ রাস্তার ধারে আবর্জনা কিছুই নেই। ডাউকি নদীতে নৌবিহার করি সবাই, আনন্দ আর মজা করি চারিদিকে পাথর আর বিশাল বালি। এখানে মনে হতে পারে জলের ধারায় মেঘ বালিকারা খিলখিল করে ছুটে চলে যায় মাঠ-ঘাট-বিল পেড়িয়ে। মেঘের ভেলায় চড়ে সবাই ভেসে বেড়াই বাতাসে। স্বচ্ছ জলের নিচে বালু-নূরী-কাকর পাথর তথা সবকিছু স্বচ্ছ দেখা যায়। মেঘালয় যেন কথা কয় হৃদয় গহনে, মেঘালয়ের পাহাড় পাথর জল বেষ্টিত ছবি ক্যামেরাবন্দি করলেও চমকে উঠতে পারেন, এতই মনে হয় মনোহর। বাতাসের নির্মলতা ও নদীর সৌন্দর্য্যের কোন তুলনা হয় না। এখানে মেঘমালা পাহাড় নদী জলের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায় বলে জাফলং-কে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট বিবেচনা করা হয়।

জাফলং কে মনে হয়ে ছিল শিল্পীর আঁকা কোন ছবি। মন হারিয়ে যায় এখানে কমবেশি সবাই ছবি তোলে মনের মত করে। পড়ন্ত বিকেলে ছায়াঘেরা এই নীড়ে মন হারিয়ে যায় দিগন্তে পাহাড়ের মায়ায় কি ভালো লাগছিল! নদীর ওপারে চটি দোকান, টং দোকানে ছিল নানা দেশের নানা রকম জিনিসপাতি। অনেকেই কেনাকাটায় মেতে ওঠেন। সামনে পাহাড় দেখে উপরে উঠি, ওখানে পাহাড়ি মানুষের সনে কথা বলি মুক্ত মনে। আলাপচারিতায় বুঝা যায়, পাহাড়ি ভাষায় মোদের ভাষা হয়ে আছে মাখামাখি। তারা তাদের জায়গায় আছে বেশ ছায়াঘেরা পরিবেশ, দুঃখ শুধু এই গিরিপথের নদী ও পানি। পাহাড়ি জীবন দেখে নেমে আসি পাড়ে। পা ফেললেই মেঘালয় আর আমার মাঝে ছিল না কোনই ব্যবধান। এই পোড়া চোখে প্রকৃতির কাজল মেখে ফিরে আসি ঘরে; মায়া হয়, আফসোস হয়- ওই পাহাড়টা যদি আমাদের হতো! আজকের বেলা শেষ, আগামী দিনে 'সাদা পাথর' দেখার নিমন্ত্রণ রইল।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post