আমাদের বিল
- আজিজুল হাকিম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমাদের মাঠে আছে এক বড় বিল ।
কেউ বলে বিল নয়, ওটা এক ঝিল ।
কেউ বলে, ঝিল নয় ওটা ছিল নদী -
মাঠ ঘাট পেরিয়ে ছিল দূরাবধি ।
সারা বছর হাসে সে দারুন খিলখিল ;
কেবল গ্রীষ্মে খালি বুকে রয়ে যায় বিল ।
বর্ষা এলে ভরে উঠে খালি বুক তার -
দূকুল ভেসে যায় এপার ওপার ।
মাঠ ঘাট ভাসিয়ে নদী ছুঁতে চায়
এক কালে সখা ছিল যার সাথে তাই ।
হৃদয়ের গভীরে টান লাগে বুঝি ,
অতীতের সেই টানে পথ নেয় খুঁজি ।
সময়ের স্রোতধারায় নদী ছোট হয়,
ছোট হতে হতে আজ বিল রয়ে যায় ।
ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ যেন কাস্তের মত -
বাঁকা বিল বুকে নিয়ে হারানো স্মৃতি যত ।
সেই বিলে ছিল এক মস্ত কালি দহ
কাল জলে প্রাণ ভয়ে যেত না তো কেহ ।
সেই দহের এক পাড়ে ছিল দুটি গাছ
চাঁদের নৌকা ডুবেছিল তাদেরই কাছ ।
সেইখানে বৈশাখে বসতো এক মেলা,
সারা মাস চলত মেলামেলা খেলা ।
বহুদূর হতে লোক আসিত কত -
হাতি চড়ে আসত রায় বাহাদুর যত ।
সেই গাছের গোড়াতে ছিল দুটি গর্ত
সেই গাছতলা ছিল নাকি মনসার মর্ত ।
গর্ত থেকে বের হত বিষধর সর্প
মাথাতে সিঁদুর তাদের এই ছিল দর্প ।
পূজারী বসত সেথায় দুধবাটি নিয়ে
সেই সাপ খেয়ে যেত যত মন দিয়ে ।
হাজারে হাজারে লোক দেখত সেই সাপ
মুখ ফুটে বের হত, “ওরে বাপবাপ” ।
আরো শুনি নানীর মুখে বিলের যত কথা,
বিল নাকি নিয়ে আছে বুকে হাজার কথা ।
কারো বাড়িতে খানা হলে চলে যেত বিল,
থালা বাসন যা চায়তো দিয়ে দিত বিল ।
এক ঢেউয়ে ওসব কিছু চলে আসত কাছে
গুনে গুনে নিয়ে আসত ভুল না হয় পিছে ।
একদিন এক লম্পট গেল বিলের পাড়ে
শয়েকখানা চায়ল থালা মেয়ের বিয়ের তরে ।
রাখল না সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল যা
সেই হতে বিলটি আমার সরিয়ে নিল পা ।
তখন থেকে লোক যায় খালি হাতে আসে
যত দুঃখ বেদনাগুলো ফিরে বায়ুর শ্বাসে ।
তারপর বিলের বুকে এল পদ্মপাতা
লোকের যত দুঃখ কথা বুঝিল বুঝি মাতা ।
দূরদূর যত গাঁয়ে হতো যতো খানা
শুরু হল বিলে গিয়ে পদ্মপাতা আনা ।
পদ্মপাতাও নেই আজ - খালিবুক তার !
ডোঙায় চড়ে মাছ ধরে জেলে গোটা চার ।
তবু বিল হেসে উঠে বাতাসের সাথে
ছোট ছোট ঢেঊ তুলে আনন্দে নাচে ।
চাঁদের মত বাঁকা বিল চাঁদবদন তার --
কখনও বা হেসে উঠে কখনও মুখভার ।
রচনাঃ ২৭ ও ২৮শে জুন ২০১৮