টুসি আর নিহা
নিলুফার
জাহান
টুসি
ছাদের এক কোণে প্রতিদিন বসে থাকে আর তাকিয়ে দেখে ছোট্ট মেয়ে 'নিহা'
কিভাবে গাছে পানি দেয় । ছাদের উপর অনেকগুলো টব রাখা । প্রত্যেক টবেই হরেক রঙের ফুল
বা সবজি গাছ লাগানো। খুব সুন্দর লাগে ছাদের উপরটা। টুসি কিছুই করে না। চুপচাপ দেখে।
টুসিকে দেখলেই নিহা কিছু না কিছু খাবার দেয় । মাছের কাঁটা
,দুধভাত সব দেয় ।
নিহাকে
দেখলেই টুসি গলাটা বাড়িয়ে বলে 'মিউ'। তখন নিহা বুঝে ওর খিদে পেয়েছে।
যতটা পারে খাবার খেতে দেয়। খেয়ে টুসি আবার বলে
'মিউ' - নিহা বুঝতে পারে খেয়ে তার পেট ভরেছে। খুশিতে 'মিউ' বলছে
লেজ নেড়ে। নিহা ছাদে এলে গাছেরা যেমন খুশি হয় খাবার পেয়ে টুসিও ভীষণ খুশি
হয়। ছাদের কোণে ঘুমিয়ে থাকে। ওর গায়ের রং সাদা কালো।
নিহা কখন ছাদে আসবে সে বুঝতে পারে।
এসময় সে কোথাও যায় না। মনে হয় নিহার জন্যই অপেক্ষা করে। নিহার পায়ের শব্দ শুনেই
সে উঠে যায়। আর বলে 'মিউ।'
ভীষণ ভালো লাগে নিহার
। বিড়ালটাকে সে কত কিছু খেতে দেয় !
বন্ধুত্বের
গভীর সম্পর্ক দুজনের মাঝে এভাবে দিন যেতে থাকলো। নিহা স্কুল শেষে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে
ছাদে আসে। মায়ের সাথে তার লাগানো গাছগুলো দেখে ।
অনেক ফুল ফোটে। পাখিরা এসে ভীড় করে ছাদের উপর। এতো ফুল পাখি দেখে খুশিতে মন ভরে যায়
নিহার। মাঝে মাঝে মরিচ গাছ থেকে মরিচ নিয়ে মা'কে দেয়। সবাই খুশি হয়। ‘নিহার
লাগানো গাছে মরিচ ধরেছে!’ মা খুশিতে বলতে থাকে। বাবাও খুশি। বলেন, ‘খুব ভালো। মরিচ
কিনতে হবে না তাহলে’।ছোট্ট ভাইটা দৌড়ে এসে মরিচ ধরে দেখে।
নিহার
বয়স আট বছর। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। মায়ের গাছ লাগানো দেখে নিহার গাছের
প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। সে খুব যত্ন করে গাছের । গাছের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক । আবার
টুসির সাথেও একটা বন্ধুত্ব হয়েছে
তার! সুযোগ পেলেই সে ছাদে উঠে আসে। টুসিকে খাবার দেয় । টুসি চুক চুক করে খায় । দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।
ঐদিন
স্কুলে অনষ্ঠান ছিলো। বাসায় আসতে দেরি হলো। ছাদে যেতে
পারেনি। মা বারবার
নিষেধ করেছেন। “রাতের বেলা ছাদে যেও না” । তাই সে রাতে গেল না। কিন্তু টুসির জন্য মন খারাপ লাগছিল। টুসির কষ্ট হবে
ভেবে সে মন খারাপ করেই ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন সকালে ছাদে উঠে দেখে টুসি নেই। ছাদে বড় একটা লাল বিড়াল হাঁটছে। খাবার
খেয়ে চলে যাচ্ছে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে! টুসি কোথায় !
স্কুলের
সময়ে সে স্কুলে গেল। স্কুল থেকে ফিরেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি পড়ছে । মা
বলেছে পানি দেয়ার দরকার
নেই। তবু সে চুপিচুপি ছাদে এলো। সবদিকে তাকিয়ে দেখে টুসি কোথাও নেই। নিহার খুব মন খারাপ
হল। সে সবদিকে টুসিকে খুঁজতে থাকে । কিন্তু কোথাও পায় না। নিহার ভীষণ খারাপ লাগে ।পড়াতেও
মন বসে না। কেবল টুসির কথা মনে হয়। কোথায় যাবে টুসি? এভাবে একটা দিন চলে গেল। নিহার কিচ্ছু
ভালো লাগে না।
তারপর
একদিন শুনতে পেল টুসির গলার শব্দ। খুব আস্তে করে ডাকলো, 'মিউ'। শুকিয়ে গেছে টুসি।
নিহা তাড়াতাড়ি কিছু খাবার এনে টুসিকে দিল। 'এই টুসি তুই কোথায় ছিলি। আমি যে তোকে
খুঁজে হয়রান'। উত্তরে টুসি আস্তে করে 'মিউ' বলে সে সিড়ির নীচে গেল। নিহাও গেল। ছোট্ট ছোট্ট চারটা বিড়ালছানা দেখে
খুশিতে নিহার মন ভরে গেল। নিহা খাবার দিলে খাবার খেয়ে টুসি ছানাগুলোকে আদর করতে থাকল।