আরজুমান দিলসাদ-এর পাঁচটি
কবিতা
(এক)
ভালোবাসা কারে কয়
বুকজুড়ে
শুধু হাহাকার আর বেদনা,
শুধু তোমার
শূন্যতা, এটাই কি ভালোবাসা?
তাহলে তোমায়
অনেক ভালোবাসি।
চোখের অলীক
নদী বেয়ে নেমে আসে ঝরনা,
বাঁধ ভাঙে
বন্যা, এটা ওকি ভালোবাসা?
তাহলে তোমায়
অনেক অনেক ভালোবাসি।
আসবে বলে
পথ চাওয়া,
নিজেকে একটু
গুছিয়ে নেওয়া, এটাই কি ভালোবাসা?
তাহলে অনেক
ভালোবাসি প্রিয় তোমায়।
একাকিত্ব
ভুলাই নাতো দুঃখ ব্যথা,
শুধু মনে
পড়ে তোমাকে শয়নে স্বপনে, এটাও বুঝি ভালোবাসা?
তাহলে আমি
এক সমুদ্র ভালোবাসি।
প্রতিটি
নিঃশ্বাসে তুমি, হৃদয়ের স্পন্দনে তুমি,
শত ব্যস্ততার
মাঝে তুমি, এটাওকি ভালোবাসা?
তাহলে আমি
নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
কারণ মনটা
আমার হলেও ভাবে তোমাকে শুধু তোমাকে ।।
(দুই)
পুরুষের উদারতা
পুরুষ তুমি
আকাশের মতো উদার, তোমার হৃদয় সমুদ্রসম
রিক্ত, শূন্য
নারীকে অকপটে ভালোবাসতে পারো তুমি
কর্মক্ষম
পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার সাজায়,
পরিশ্রম
করে বৌ-বাচ্চাকে ভালো রাখার চেষ্টা করে সারা জীবন।
বেশির ভাগ
নারী চায় নামী দামী পুরুষ
তার দীর্ঘদিনের
ভালোবাসার মানুষটি কর্মক্ষম না হলে সে পিছিয়ে আসে,
প্রেমিকের
দিকে বাড়িয়ে দেয়না ভরসার হাত,
বলতে পারেনা
এসো একসাথে থাকি ভালোবাসার নীড়ে।
মনের মানুষ
পেয়েও নারী হারিয়ে ফেলে,
সম্পদের
কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয়।
পুরুষের
মন পড়তে পারে কজন?
অনেক পুরুষ
তাই ডুবে যায় হতাশার সাগরে।
টাকার কাছে
ভালোবাসা হয় পরাজিত।
চাকরি পেয়ে
কেন পাল্টে গেলে মেয়ে?
কেন দূরে
সরিয়ে দিলে সব চেয়ে কাছের মানুষটিকে?
তুমি কি
ভালো থাকবে?
টাকা দিয়ে
সব পাবে কিন্তু ভালোবাসা? কিনতে পারবে?
বড্ড দেরি
হয়ে গেছে, বেচারা পুরুষটি দূরে
বহু দূরে
আকাশ পারে পাথরচোখে তাকিয়ে থাকে তার ভালোবাসার দিকে।।
(তিন)
মেঘ ও বৃষ্টি
মেঘ বলে
বৃষ্টি তুই
ধরায় ঝরে
পড়
অনেক হলো
আমার বুকে
এবার একটু
নড়।
বৃষ্টি কয়
মেঘ তুমি
কেন বলো
এমন
বেশ তবে
ফিরবোনা যাও
যেমন বলার
ধরণ।
যাবো আমি
মাটির টানে
আসবোনা আর
ফিরে
থাকবো আমি
নদী নালা
খাল বিল
সরোবরে।
আমার সাথে
থাকবে কত
শালুক শাপলা
পদ্ম
দেখো এবার
আমি কেমন
করতে পারি
জব্দ।
থাকবে মেঘ
তোর বিরহে
আকাশ পারে
বসে
মাটির কোলে
থাকবি তুই
সবুজ শীতল
দেশে।
গা দুলিয়ে
নদীর মাঝে
উথাল পাতাল
ঢেউ
ঢেউয়ের নাচে
ভেসে যাবে
নাওয়ের মাঝে
কেউ।
তোর অভাবে
কেমন করে
কাটবে মেঘের
ক্ষণ
ফিরে আয়
বৃষ্টি তুই
আমার আপন
জন।
তোকে ছাড়া
দিন কাটেনা
রাত হয়না
ভোর
থাক্ ওরে
বুকের মাঝে
মেঘের প্রাণের
দোসর।।
(চার)
আমরা দুজন
আমরা দুজন
হংসমিথুন
কইবো কথা
নিরিবিলে
আমরা দুজন
ফুলের মতন
দুলবো হাওয়ার
তালে
আমরা দুজন
শালুকশাপলা
হাসবো ভাসবো
সায়রে
আমরা দুজন
হবো সাম্পান
অকুল দরিয়া
মাঝারে।
আমরা দুজন
ঊষর জমিতে
সাজাবো ফসল
সোনা
আমরা দুজন
মরুর দাবদাহে
ঝরাবো শীতল
ঝরনা
আমরা দুজন
ডাহুক ডাহুকী
শ্যামল
পাতার ভিড়ে
আমরা দুজন
যখন তখন
তুলবো ঢেউ
সাগরে।
আমরা দুজন
উল্কার মতন
ছুটবো আকাশের
গায়
আমরা দুজন
জিমুতের ডাকে
পুলকে দুহাত
বাড়াই।।
(পাঁচ)
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল
ইসলাম
আকাশ ভরা
হাজার তারা
কোন্ টা
তুমি নজরুল?
তোমার পাশে
আছে বুঝি
প্রাণপ্রিয়
ঐ বুলবুল?
সকল তারা
বাক্যহারা
তাকায় তোমার
মতো
কোন্ টা
তুমি চিনি না যে
কোন্ টা
ভাগ্যহত।
কোন্ তারাটার
চোখে ঝরে
তোমার মতো
জল।
কোন্ তারাটা
দুঃসাহসী
রাখে বুকের
বল্।
কোন্ তারাটার
কলম সাথী
লিখে চলে
সারারাতি।
কোন্ টা
তবে প্রিয়ার চোখে
অন্ধকারে
জ্বালায় বাতি।
চিনেও তোমায়
চিনি না গো
আছো আকাশ
দীপ হয়ে
ধরার বুকে
ঝরে পড়ো
আলোর দীপ্তি
নিয়ে।।
***